×

জাতীয়

প্রাণের মেলা শুরু আজ, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:২৬ পিএম

প্রাণের মেলা শুরু আজ, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
মাতৃভাষার চেতনাকে সমুন্নত রেখে ভাষার মাসের প্রথমদিন আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালির মন-মননের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯। লেখক, কবি, পাঠক আর প্রকাশকদের মাসব্যাপী এ মিলন মেলা বসছে রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বরে। আজ বিকেল তিনটায় গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী আয়োজনে সাংস্কৃতিক মন্ত্রী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ ও মিসরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল আরিশি। অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেলার আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে মাসব্যাপী থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে মেলা প্রাঙ্গণ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকবে। তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় পুরো এলাকা মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে সদা তৎপর থাকবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নিরাপত্তাকর্মীরা। ড. জালাল আরো জানান, মেলা প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত ধূলিরোধক পানি ছিটানো, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন ও মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া বইমেলা থাকবে সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, গ্রন্থমেলার ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন্স লিমিটেড চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, একাডেমির সচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস, বিকাশের সিএমও মীর নওবত আলী। এদিকে, গ্রন্থমেলায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাব। মেলাকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশ পাহারায় থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় বইমেলা আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মেলা ঘিরে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক ওয়াচ টাওয়ার। অগ্নিনির্বাপণের জন্য ফায়ার টেন্ডার ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকছে। দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হবে না। শুধু বাংলা একাডেমির স্টিকারযুক্ত গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে। তাছাড়া এ এলাকায় কোনো প্রকার হকার বা ভ্রাম্যমাণ দোকান প্রবেশ করতে পারবে না। মেলা উপলক্ষে ডিএমপি পুলিশ মাঠে থাকবে, স্ট্যান্ডবাই থাকবে সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড। শাহবাগ, বকশিবাজার, নীলক্ষেত ও দোয়েল চত্বর ঘিরে থাকবে পুলিশের বহিঃবেষ্টনী নিরাপত্তা বলয়। যৌন হয়রানি, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা, ছিনতাই ও পকেটমার প্রতিরোধে থাকবে পুলিশের বিশেষ টিম। প্রত্যেক দর্শনার্থীকে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির মাধ্যমে মেলায় প্রবেশ করানো হবে। মেলা প্রাঙ্গণে থাকবে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক ও শিশুদের জন্য ফিডিং কক্ষ, লস্ট এন্ড ফাউন্ড সেন্টার। প্রতিবারের মতো এবারো দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি পান করাবে ডিএমপি। ডিএমপি কমিশনার আরো জানান, নিবিড় তদারকির মধ্য দিয়ে লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও বইপ্রেমী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। তবে যদি কোনো লেখক ও প্রকাশকের বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় তাহলে মেলায় স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করলে তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। তিনি জানান, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাত করে এমন কোনো বই প্রকাশকরা মেলায় আনতে পারবেন না। যেকোনো নতুন বই মেলায় আনার পর বাংলা একাডেমি তা যাচাইবাছাই করে দেখবে। এদিকে, এবারের গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৩ লাখ বর্গফুট জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যা গতবারের চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট বেশি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের নামকরণ করা হয়েছে ভাষা শহিদ বরকতের নামে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণকে চারটি চত্বরে ভাগ করে উৎসর্গ করা হয়েছে ভাষা শহিদ সালাম, রফিক, জব্বার ও শফিউরের নামে। পাঁচ ভাষা শহিদের নামে উৎসর্গ করা মেলার দুই প্রাঙ্গণের পাঁচটি চত্বরের প্রতিটি চত্বরের সাজসজ্জায় থাকবে পৃথক রঙের ব্যবহার। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ও ম্যাজেন্ডা রঙের আলোয় সাজবে চত্বরগুলো। এবার একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ১৫০টি ইউনিট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩৯৫টি প্রকাশনা সংস্থাকে ৬২০টি ইউনিট দেয়া হয়েছে। দুই চত্বর মিলে ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটলম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেয়া হয়েছে। মেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। এবারো শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকছে। এবারো ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App