ভয়াবহ শীতে জমে যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও তুষারপাতে কমপক্ষে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে পূর্ব এবং কেন্দ্রীয় ইউরোপে প্রচণ্ড শীতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা মাইনাস ৫৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নেমে এসেছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। স্থানীয় সময় বুধবার শিকাগোতে তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। শীতলতম অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের কিছু অংশের চেয়েও এটি বেশি শীতল। নর্থ ডাকোটায় তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ৩৭ ডিগ্রি। কিছু কিছু শহরে তাপমাত্রার উন্নতি দেখা গেলেও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষজন বিশেষ করে আশ্রয়হীন ও বৃদ্ধরা দ্রুতই ফ্রস্টবাইটসহ নানান ধরনের অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন বলে সতর্ক করা হয়েছে। একদিনেই শিকাগোতে নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শহরটির জন এইচ স্ট্রোগার জুনিয়র হাসপাতালের চিকিৎসক স্ট্যাথিস পোলাকিডাস জানান, চলতি সপ্তাহেই ফ্রস্টবাইটে আক্রান্ত ২৫ জনেরও বেশি রোগীর দেখা পেয়েছেন তারা। ফ্রস্টবাইটে কয়েকজনের আঙ্গুল ও পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মৃতদের মধ্যে আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীও আছে। বুধবার সকালে পুলিশ যখন গেরার্ড বেলজের মৃতদেহ উদ্ধার করে কনকনে বাতাসে তখনকার তাপমাত্রা মাইনাস ৫১ ডিগ্রি ফারেনহাইট মনে হচ্ছিল, জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিভাগ। তুলনামূলকভাবে উদ্বাস্তু ও গৃহহীনরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকায় শিকাগো ও অন্যান্য শহরে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ওহাইওর লোরেইনে ৬০ বছর বয়সী এক নারীর হাইপোথারমিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টি করোনার স্টিফেন ইভানস। ক্রনিকেল টেলিগ্রামকে ইভানস বলেন, ‘উত্তাপ পাওয়া যায় এমন কিছুর কাছাকাছি না থাকলে এই আবহাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ বাঁচার কোনো উপায়ই নেই।’ যুক্তরাষ্ট্রের মিডওয়েস্ট ও নর্থইস্টে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ধরনের তাপমাত্রা দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। উত্তর মেরুর ওপর দিয়ে দক্ষিণের দিকে যাওয়া ঠাণ্ডা বাতাস এবারের পরিস্থিতিকে আরও শোচনীয় করে তুলেছে বলেও জানিয়েছে তারা। ঠাণ্ডার মোকাবেলায় বিভিন্ন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে বলে অর্থনৈতিক তথ্যদাতা প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ। ভয়াবহ শীত ও কনকনে বাতাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দুইদিনে ২ হাজারের বেশি বিমানের ফ্লাইট বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে তীব্র শীতে কমপক্ষে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়াতেও বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সুইডেনের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সু্ইডেনের উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা নেমে হয়েছে মাইনাস ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মাসে সর্বোচ্চ শীতের রেকর্ড। স্কটল্যান্ডে তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে মাইনাস ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ব্রিটেনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই শীতের সবচেয়ে শীতল রাত গেছে চলতি মাসে। অপরদিকে, কানাডার টরন্টোতে বর্তমানে তাপমাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার এ অবনতি বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩০টি রেকর্ড ভেঙেছে। কটন, মিনেসোটায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ডও ভেঙে গেছে। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে সেখানে মাইনাস ৫৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের দেখা মিললেও পরের দিকে তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে।