×

জাতীয়

কর্ণফুলী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নামছে প্রশাসন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:২০ পিএম

কর্ণফুলী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নামছে প্রশাসন

ফাইল ছবি

উচ্চতর আদালতের নির্দেশনার পরও দীর্ঘ প্রায় ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরে যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করতে পারেনি কোনো প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের হিসাব এবং উচ্চতর আদালতের নির্দেশনায় নদী তীরে প্রায় ২ হাজার ১১২টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। তবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসংক্রান্ত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এ উচ্ছেদ অভিযান কতটুকু সফল হবে সে বিষয় নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কেননা প্রশাসন, রাজনৈতিক প্রভাব ও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে এমন বেশ কিছু সাইনবোর্ডও বিভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে দিতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, কর্ণফুলী নদীর দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের একটি আদেশ রয়েছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের অভাবে এতদিন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। আমরা প্রাথমিকভাবে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে সরকারের কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি বরাদ্দ অনুমতি চেয়েছি। ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ অর্থ বরাদ্দের আশ্বাসে আমরা উচ্ছেদ অভিযানে যাচ্ছি। আগামী সোমবার থেকে কর্ণফুলীর দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করা হবে। প্রসঙ্গত ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ-এর পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। নগরের নেভাল একাডেমি সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে কালুরঘাট এলাকার মোহরা পর্যন্ত অংশে ২০১৫ সালে জরিপের কাজ শেষ করা হয়। জরিপে নদীর দুই তীরে প্রায় ২ হাজার ১১২টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। উচ্চ আদালতে তা দাখিলও করা হয়। কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ও স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা এবং দূষণ রোধকল্পে নদীর এলাকা সীমানা চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া কমিটি বিএস ও আরএস জরিপের ম্যাপ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর অবস্থান, নদীর অংশে ভরাটকৃত জমি ও দখলদারদের অবস্থান পৃথক রং দ্বারা চিহ্নিত করে। এরপর ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টেও একটি বেঞ্চ এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে সে উচ্ছেদ কার্যক্রম আর চালানো সম্ভব হয়নি এতদিন। প্রসঙ্গত দীর্ঘ কয়েক বছরে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে নানা প্রভাবশালী মহল অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ দখল করে আছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনের নানা যোগসাজশে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বছরের পর বছর ধরে থেমে ছিল। তবে এবারো সেই উচ্ছেদ প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু জেলা প্রশাসন বাস্তবায়ন করতে পারবে সেটি অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল এ ব্যাপারে নানা দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন, আবার কেউ উচ্চতর আদালতের স্মরণাপন্নও হতে যাচ্ছে এই উচ্ছেদ অভিযানকে ব্যাহত করার জন্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App