×

মুক্তচিন্তা

সীমান্ত উন্মুক্ত রেখে ইয়াবা প্রতিরোধ কীভাবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:১৪ পিএম

কক্সবাজার-টেকনাফসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট। সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার কারণে অবাধে ঢুকছে ইয়াবার চালান। থানা পুলিশসহ স্থানীয় রাজনীতি-ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ইতোমধ্যেই স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অনেক ব্যক্তির নাম ইয়াবা গডফাদার হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে, বেশ কয়েকজন আটকও হয়েছেন।

মাদক ব্যবসা বিস্তার রোধে সরকারের ঘোষিত নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ইয়াবা বাণিজ্যের ভিত নাড়ানো যাচ্ছে না। সমাজপতি, রাজনীতিক, পুলিশ সবাই যখন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন, তখন ইয়াবা ঠেকানো যাবে কীভাবে? গতকাল ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৪ মে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর টেকনাফে আলাদা নজরদারি দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

একের পর এক বন্দুকযুদ্ধে শুধু টেকনাফেই নিহত হয় ৩৯ জন। আত্মসমর্পণ করেন ৬৩ জন মাদক ব্যবসায়ী। এরপর ইয়াবার রুট বদলসহ চালান বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এখনো পুরনো রুট দিয়েই আসছে ইয়াবা। আর এই কাজে সক্রিয় রয়েছে পুরনো সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন সদস্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের বেশিরভাগ সদস্য ইয়াবা বাড়ির খবর জানলেও অজানা কারণে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করেন। তারা যদি এই রুটগুলো বন্ধ করে দিত তাহলে দেশে আর ইয়াবাই প্রবেশ করতে পারত না। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, দেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা কমবেশি ৭০ লাখ। তাদের অধিকাংশই ইয়াবায় আসক্ত।

জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির মত অনুযায়ী, মাদক উদ্ধার হয় সাধারণত মোট ব্যবহারের ১০ শতাংশের মতো। সেই হিসাবে বছরে শুধু ইয়াবা বড়ি বিক্রি হয় ৪০ কোটির বেশি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতিটি বড়ি গড়ে দেড়শ টাকা দরে)। এই বিপুল টাকার শক্তিতেই ইয়াবা ব্যবসা হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য।

প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করলেও এখনো মাদকের রাশ টেনে ধরা যায়নি। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল সর্বত্র যেভাবে ইয়াবার জাল ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

দেশের বিরাট সংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি, অথচ প্রতিনিয়ত ইয়াবার নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ। তাই তারুণ্যগ্রাসী ইয়াবার বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ইয়াবার থাবা রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে।

সীমান্তবর্তী এলাকার মিয়ানমার অংশে ইয়াবা তৈরির কারখানাগুলো নিষ্ক্রিয় করা এবং এ দেশে ইয়াবা অনুপ্রবেশ রোধে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর সমঝোতায় উপনীত হওয়া জরুরি।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেসব চিহ্নিত প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সব সদস্য তাদের সহায়ক, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App