×

জাতীয়

সীমান্ত উন্মুক্ত নজরদারি শহরে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৫২ এএম

সীমান্ত উন্মুক্ত নজরদারি শহরে
বেশিরভাগ ইয়াবার চালান দেশের ভেতরে আসে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত পেরিয়ে। ফলে গত বছরের ৪ মে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর টেকনাফে আলাদা নজরদারি দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একের পর এক বন্দুক যুদ্ধে শুধু টেকনাফেই নিহত হয় ৩৯ জন। আত্মসমর্পণ করেন ৬৩ জন মাদক ব্যবসায়ী। এরপর ইয়াবার রুট বদলসহ চালান বন্ধ হওয়ার দাবি জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু বাস্তবে এই চিত্র ভিন্ন। এখনো পুরনো রুট দিয়েই আসছে ইয়াবা। আর এই কাজে সক্রিয় রয়েছে পুরনো সেন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন সদস্য। তারাই রাতারাতি নিজেদের মুখোশ বদলে অব্যাহত রেখেছে ইয়াবার চালান আনা। সেগুলো আবার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বাড়িতে আগের মূল্যেই বিক্রি করা হচ্ছে। তবে, পরিচিত ছাড়া কাউকে ইয়াবা বিক্রি করছে না তারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের বেশিরভাগ সদস্য ইয়াবা বাড়ির খবর জানলেও অজানা কারণে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করেন। অনেক সময় ডেকেও তাদের পাওয়া যায় না। তারা যদি এই রুটগুলো বন্ধ করে দিত তাহলে দেশে আর ইয়াবাই প্রবেশ করতে পারত না। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন সীমান্ত ঠিক না করে শহর এলাকায় নজরদারি করছে। ফলে বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা। সরজমিনে গত মঙ্গলবার টেকনাফের সাবরং ইউনিয়নের সাপর দ্বীপ, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, উত্তরপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, মাঝেরপাড়া, কোনাপাড়া, ডাঙ্গরপাড়া ও বাজারপাড়া এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসার প্রধান রুট এই সাবরং ইউনিয়ন। কিন্তু এখনো এই রুটে ইয়াবার চালান বন্ধ হয়নি। বেশ কয়েকজন ইয়াবা কারবারি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও তালিকায় যাদের নাম নেই তারাই এখন সক্রিয়। কখনো জেলে সেজে, কখনো মাঝি সেজে, আবার কখনো গরুর ব্যবসায়ী সেজে তারা ইয়াবা নিয়ে আসছে। এসব ইয়াবা সন্ধ্যার পর থেকে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বাড়িতে বিক্রি হয়। একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, শাহপরীর দ্বীপের কালা মিয়ার ছেলে বাক্কু, বাঞ্জু মিয়ার ছেলে আবু টাকের, একই এলাকার আবু কালাম, কোনাপাড়ার ইলিয়াস ও দক্ষিণপাড়ার বস্নু মিয়া ইয়াবার চালান দেশে আনছে। আগে প্রকাশ্যে ব্যবসা করলেও জেলে সেজে ইয়াবা আনছে ফিরোজ, নূর আলম, ভোলা মিস্ত্রি ও মামুন। এই ইয়াবাগুলো সন্ধ্যার পর বিক্রি করা হয় সীমান্তবর্তী বিভিন্ন খুপড়ি বাড়িতে। এই ইয়াবা বিক্রেতার মধ্যে রয়েছে ডাঙ্গরপাড়ার সমুদা খাতুন, হাসিনা বেগম, খবির আহমেদ ও কুরবান আলী, উত্তরপাড়ার নাগু মিয়া ও সুফিয়া খাতুন, মাঝেরপাড়ার ফাতেমা খাতুন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন এসব তথ্য জেনেও অজানা কারণে ওই বাড়িগুলোতে অভিযান চালায় না। উল্টো ইয়াবার চালান আটকে ঘুষ নেয়। যদিও বর্তমানে ইয়াবার চালান আগের তুলনায় একটু কম। প্রশাসনও খানিকটা কড়াকড়ি হয়েছে। স্থানীয়রা আরো বলেন, এই এলাকায় অনেক লোক আছে যাদের নাম মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় নেই। উল্টো শত্রু তার জের ধরে নিরীহ মানুষের নাম তালিকায় দেয়া হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে, পুলিশের অভিযানে এক সময়ের মূল হোতা ফিরোজ ও আজগর গ্রেপ্তার হওয়ার পর কমেছে ইয়াবার চালান। থানা পুলিশের এক সাবেক সোর্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের কাগজকে বলেন, বেশ কয়েকবার তিনি পুলিশকে ইয়াবা বিক্রি ও চালান আসার সংবাদ দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ বিভিন্ন অজুহাতে আসতে চায় না। যদিও বা কখনো আসে তখন টহল দিয়ে চলে যায়। আবার অনেককে গ্রেপ্তার করলেও তাকে কোনো সোর্স মানি দেয় না। উল্টো আসামির কাছ থেকে ঘুষ নেয় পুলিশ। ফলে ভয়ে পুলিশের সোর্স থেকে নাম কাটিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে মাঝিরপাড়া এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায় একটি মোটরসাইকেলে (কক্সবাজার-হ-১১২৪৯৪) যাচ্ছেন ২ যুবক। এলাকাবাসী সূত্র জানায়, মোটরসাইকেলে থাকা এক যুবকের নাম ইউসুফ। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তারপরও প্রকাশ্যে ঘুরছেন তিনি। তার সঙ্গে থাকা যুবকও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ইয়াবার চালান বন্ধ হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ভোরের কাগজকে জানান, ইয়াবা আসার খবর সত্য নয়। আপনারাই দেখছেন কিভাবে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। মূলত পুলিশের ভয়েই সবাই আত্মসমর্পণ করছে। এখনো কিছু সিন্ডিকেট এই কাজ করতে পারে। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। বিজিবি ২ ব্যাটেলিয়নের সিও আছাদুদ-জামান চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আপনারা জানেন সীমান্তবর্তী এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা নির্বাহ করতেন ইয়াবার ওপর নির্ভর করে। এখনো তাদের বেশ কিছু লোক মাছ ধরা ও লবণ চাষের ফাঁকে ইয়াবা আনছে। তবে, বিজিবির পক্ষ থেকে ইয়াবা বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষা না হওয়ার কারণে নজরদারিতে কিছু ঘাটতি থেকেই যায়। তারপরও বিজিবির সদস্যরা সশরীরে দাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করায় ইয়াবার চালান বন্ধ হয়ে এসেছে। আশা করি খুব শিগগিরই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App