×

জাতীয়

মাটি খুঁড়েই ৮ কোটি টাকা নিলেন ঠিকাদার!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৩৪ এএম

মাটি খুঁড়েই ৮ কোটি টাকা নিলেন ঠিকাদার!
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চানখাঁরপুল মার্কেট নির্মাণ নিয়ে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এলেও শুধু মাটি খুঁড়ে রেখেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে নামমাত্র কাজটি করে ৮ কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছে তারা। আবার মার্কেটে বরাদ্দ পাওয়া লোকজনের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা সালামির টাকাও আদায় করে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তাদের দোকান বুঝিয়ে দেয়ার কোনো উদ্যোগ নেই। এ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ডিএসসিসির একজন প্রভাবশালী কাউন্সিলর জড়িত থাকায় ভয়ে কর্মকর্তারাও মুখ খুলতে চান না। বিষয়টি নিয়ে দোকান বরাদ্দ পাওয়া লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মোস্তাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। শুনেছি চানখাঁরপুলে একটি মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে। তবে কাজের চেয়ে বিল বেশি নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর চানখাঁরপুল মোড়ে ডিএসসিসির মার্কেটের জন্য নির্ধারিত জায়গা টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রবেশ করতে চাইলে সাইফুল ইসলাম নামে একজন নিরাপত্তাকর্মী এসে হাজির হন। এখানে দৈনিক কতজন শ্রমিক কাজ করে জানাতে চাইলে সাইফুল ভবনের জায়গা দেখিয়ে বলেন, ‘ওই দেখেন একজন শ্রমিক কাজ করছে। মাঝে মধ্যে দুই-তিন জনও কাজ করতে আসে।’ তিনি আরো জানান, ভেতরে মাটি খুঁড়ে পাইলিংয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। এরপরই কাজটি থেমে গেছে। জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, কাজ একটু ধীরগতিতে আছে। তবে, মাটির নিচের কাজেই সময় লেগে যায় বেশি। এখন কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, চানখাঁরপুল মার্কেটের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ২ বছর মেয়াদ দিয়ে তা শেষ করার কথা বলা হয়েছে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবরে। ১২তলা ভিত্তির উপর ৫তলা ভবনে হবে ২৮৮টি দোকান। ৫তলা ভবন নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রতিটি দোকানের আকার ভেদে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ থেকে ১২ লাখ টাকা। এরই মধ্যে দুই দফা কিস্তির মাধ্যমে ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ ৫ লাখ টাকা করে আদায় করেছেন। সেই হিসেবে করপোরেশনের টাকা আদায়ের পরিমাণ ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বরাদ্দগ্রহীতাদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করলেও নামমাত্র চলছে নির্মাণকাজ। ভোরের কাগজের অনুসন্ধান ও ডিএসসিসির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ডিএসসিসির এ মার্কেট নির্মাণে দরপত্রে অংশ নেয় সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন পেশাদার ঠিদাকার ও ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন। তবে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী কাউন্সিলর সরাসরি টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন না। তাই ‘দি বিল্ডার্স’ নামে একটি নির্মাণ কোম্পানির ব্যানারে কাউন্সিলর এ কাজটি প্রভাব খাটিয়ে নিজের কব্জায় নেন। দি বিল্ডার্স কোম্পানির মালিক স্বপন চৌধুরীর আর কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতনের বাড়ি ফেনী জেলায়। তারা দুজন দি বিল্ডার্সের ব্যানারে বিভিন্ন সময় একসঙ্গে ঠিকাদারি কাজ করার বিষয়টিও সবার মুখে মুখে চাউর রয়েছে। ফলে মার্কেট নির্মাণ কাজটির সঙ্গে প্রভাবশালী এই কাউন্সিলর নিজে জড়িত থাকায় তদারকির কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী ও ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও দেখে না দেখার ভান করে থাকেন। এরই মধ্যে নামমাত্র কাজ করে কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বিল নেয়া হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। তবে এ কাজের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমি এ কাজের সঙ্গে নেই। আমার কাছে মাঝে মধ্যে দোকান বরাদ্দ পাওয়া লোকজন আসে। তাদের পক্ষ হয়ে আমি নগর ভবনে গিয়ে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেই। এর বেশি কিছু না। আমি এসব ছোট-খাট কাজ করি না। আমার হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ চলে। আমি সরকারকে প্রতি বছর সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা ট্যাক্স দেই। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দি বিল্ডার্স লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী স্বপন চৌধুরীর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App