×

মুক্তচিন্তা

দুর্নীতি দমনের রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৮ পিএম

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকে (সিপিআই) বাংলাদেশের অবস্থানের ছয় ধাপ অবনমন ঘটেছে। বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০১৮ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সূচক প্রকাশ করেছে বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি।

টিআইয়ের সিপিআই সূচকে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৯তম, যা গতবার ছিল ১৪৩তম। আবার অধঃক্রম অনুযায়ী বিবেচনা করলে বাংলাদেশ আগের ১৭তম অবস্থান থেকে ১৩তম অবস্থানে নেমে এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দুর্নীতি একটি জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। আর বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির ভয়াবহতা নিয়ে নতুন কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।

দুর্নীতির সূচকে বিশ্ব রেটিংয়ে এক সময় আমাদের অবস্থান ছিল চ্যাম্পিয়নের। এই সূচকের কাঁটার ক্ষীণ হেরফের আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় তেমনভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে না। দুর্নীতি প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিরাজমান। দেশে এমন কোনো খাত নেই যেখানে কমবেশি দুর্নীতির অভিযোগ নেই।

টিআইবি সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ২০১৮ সালের সিপিআই অনুযায়ী ৮৮ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক। ৮৭ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড এবং ৮৫ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড। আর সর্বনিম্ন ১০ স্কোর পেয়ে ২০১৮ সালে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে সোমালিয়া। ১৩ স্কোর নিয়ে তালিকার সর্বনিম্নের দ্বিতীয় স্থানে যৌথভাবে রয়েছে সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান। ১৪ স্কোর পেয়ে তালিকার সর্বনিম্নের তৃতীয় দেশ হিসেবে রয়েছে যথাক্রমে ইয়েমেন ও উত্তর কোরিয়া।

দুর্নীতিতে বাংলাদেশের এই অবস্থানের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়ন করারও দাবি জানানো হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে দুদককে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা দেখেছি, দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে কমিশনে রূপান্তরের পর ওয়ান-ইলেভেনের দুই বছর বাঘের মতো জোরালো ভূমিকা পালন করেছিল দুদক, যদিও সে সময়ের দুদকের সব তৎপরতা বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। এরপর আবার প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় সংস্থাটি।

২০১৬ সালে কমিশন পুনর্গঠনের পর আবার জেগে ওঠার চেষ্টা করে প্রতিষ্ঠানটি। কমিশন পুনর্গঠনের পর সারাদেশে জোরদার করা হয় গ্রেপ্তার অভিযান। তখন দুদকের অ্যাকশন দেখে জনপ্রশাসন, ব্যাংক ও সরকারি বিভিন্ন অফিসে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ে। দেখা গেল অভিযান নিয়মিত হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রের আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলেও আড়ালে রয়ে যায় সমাজে ভিআইপি হিসেবে পরিচিত দুর্নীতিবাজরা। আরো শঙ্কার ব্যাপার হলো, আসামিরা দুদকের অগোচরে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে গেছে।

দুদকের আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা হোক। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সব পক্ষ আন্তরিক হলে দেশকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত করা কঠিন হতে পারে না। রাজনৈতিক অন্যায় ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে রক্তস্নাত এক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যে দেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, সবাই চাইলে দুর্নীতির কলঙ্কও বিসর্জন দিতে সক্ষম। দুদকের দক্ষ নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাও জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App