×

মুক্তচিন্তা

ওলামা লীগ ও হেফাজতের সঙ্গে সেপারেশন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:০০ পিএম

ডেইলি স্টার ১১ আগস্ট ২০১৫ সালে একটি খবর ছেপে প্রশ্ন করেছিল, ‘ওলামা লীগ কি আওয়ামী লীগের ওপিঠ’? ওই খবরে বলা হয়, আওয়ামী ওলামা লীগ দাবি করে এরা আওয়ামী লীগ অনুমোদিত, কিন্তু এর কর্মকা- সবই সরকারি দলের আদর্শ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা বা সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।

একই খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের হাত ধরে সংগঠনটির জন্ম। ২০১৫ থেকে ২০১৮ নির্বাচন পর্যন্ত ওলামা লীগ সরকার ও সরকারি দলের আশকারা পেয়েছে। সরকার মুখ খুলেনি। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে, আওয়ামী লীগ মুখ খুলেছে। একই অবস্থা হেফাজত নিয়ে? সরকার এদের সব অযৌক্তিক দাবি মেনে নিয়েছে। এদের প্রতি সরকারি সমর্থনে প্রগতিশীল শক্তি আঘাত পেয়েছে। সরকার ভ্রুক্ষেপ করেনি। বড় মৌলবাদ ঠেকাতে ছোট মৌলবাদকে কাছে টানা হয়তো তখন প্রয়োজন ছিল। সেই প্রয়োজন ফুরিয়েছে।

আওয়ামী লীগ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ওলামা লীগের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, এটি কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনও নয়? এতে ওলামা লীগের গোস্বা হয়েছে? এক নেতা আবুল হাসান আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছেন, বলেছেন, ‘যা করার আল্লাহ করবে’। ওলামা লীগের শেষ রক্ষা হলো না। তবে করার কিছু নেই? আওয়ামী লীগ সম্পর্ক ছেদ করেছে। আওয়ামী লীগ বাল্যবিয়ে রোধে আইন করেছে, ওলামা লীগ সেই আইনকে ‘কুফরি আইন’ বলে মন্তব্য করেছে। বাল্যবিয়ের পক্ষে মানববন্ধন করেছে।

এরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিরুদ্ধে এবং নারী ফুটবল বন্ধের দাবি জানিয়েছে। আগে আশকারা পেয়েছিল, ভেবেছে এখনো আগের মতোই চলবে। ভুলে গেছে সেই গ্রাম্য প্রবাদ, ‘সেই দিন নেই গো নাতি, খাবলাই খাবলাই চিঁড়া খাতি’। দিন পাল্টেছে। আরো পাল্টাবে।

ক’দিন আগে হেফাজতের আমির শফী হুজুর মহিলাদের পড়াশোনা বন্ধ বা বড়জোর ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বক্তব্যকে ‘জঘন্য’ বলে মন্তব্য করেন। ড. কামাল হোসেন হুজুরের বিচার চান। প্রতিবাদ ওঠে সর্বত্র। হেফাজত এরপর বলেছে, শফী হুজুরের কথা ঠিকভাবে মিডিয়ায় আসেনি, তিনি নারীদের পক্ষে।

একেই বলে ‘ঠেলার নাম বাবাজি’। আশা করা যায়, ওলামা এবং হেফাজতের সঙ্গে সরকারের ‘সখ্যতা শেষ’। মহাজোটের সন্ত্রাস দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ বহাল আছে। নতুন বছরে যুক্ত হয়েছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’।

ইতোমধ্যে আলামত স্পষ্ট। ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হচ্ছেন। খোদ দুদক পরিচালক বরখাস্ত হয়েছেন। এখনো চুনোপুঁটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও রাঘব-বোয়াল ধরা পড়বেন, পড়া উচিত। সর্ষের মধ্যে ভূত তাড়াতে একটু সময় নেবে বটে।

সন্ত্রাস দমনে জিরো টলারেন্স সফল। এখন দেখার বিষয় দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স কতটা সফল হয়। এই সফলতার ওপর অনেক কিছু নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। যথারীতি সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। দেশে ইতিবাচক রাজনীতি শুরু হওয়াটা দরকার। রাজনৈতিক অঙ্গনেও নতুন হাওয়া লেগেছে। ক্ষমতায় মহাজোট। সরকারে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ ‘একলা চলো’ নীতিতে ভালো করে। নতুন মন্ত্রিপরিষদ জোরেশোরে চলতে শুরু করেছে। মন্ত্রীরা চমক দেখানো বাদ দেন। ভালো কাজ মানুষ এমনিতেই টের পাবে। মন্ত্রীদের কম কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সবচেয়ে ভালো খবর ডাকসু নির্বাচন ১১ মার্চ। উপজেলা নির্বাচনও হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে আর ‘মুখ কালো’ চাই না।

নিউইয়র্ক থেকে কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App