×

মুক্তচিন্তা

হাইকোর্টের নির্দেশ মানুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৩ পিএম

রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী মানুষের বিড়ম্বনার শেষ নেই। বর্ষায় রাজধানীবাসী ভুগেছেন কাদাপানিতে। শুষ্ক মৌসুমে পড়েছেন ধুলার দুর্ভোগে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কারণে ধুলার মাত্রা দ্বিগুণ বেড়েছে। রাজধানীর বাতাসে ধুলাবালি সহনীয় মাত্রার তিনগুণ বেশি। ফলে একদিকে নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়ছে অন্যদিকে রোগবালাই।

চিকিৎসকরা বলছেন, ধুলাযুক্ত বাতাসে সীসা, ইউরিয়া, প্যারাবিন বা থ্যালেট জাতীয় কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে। এগুলো দীর্ঘদিন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে গিয়ে ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সক্ষম। নগর কর্তৃপক্ষ ও অন্য কারো এদিকে নজর নেই। মানুষ নিরুপায় হয়ে রাস্তায় চলাচল করছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

জানা গেছে, গত সোমবার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কারণে ঢাকা মহানগরীর বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সকাল-বিকেল রাস্তায় পানি ছিটানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বায়ুদূষণ নিয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। ঢাকা সিটির বায়ুদূষণ রোধে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সচিবসহ সবাইকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বায়ুদূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। সংস্থাটি ৯১টি দেশের শহরের মধ্যে যে ২৫টি শহরকে সবচেয়ে বেশি দূষিত শহর বলে চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশেরই রয়েছে তিনটি শহর। এগুলো হলো- ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর। বায়ুদূষণজনিত কারণে মৃত্যুর দিক দিয়েও বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ চারে।

২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত রোগব্যাধিতে বছরে ৯২ হাজার লোক মারা যায়। ঢাকা শহরে মারা যায় ১৩ হাজার ১০০ জন। এই পরিসংখ্যান খুবই ভয়াবহ। সাম্প্রতিক সময়ে জরিপ করলে এই পরিসংখ্যান আরো ভয়াবহ হবে। ধুলা থেকে রক্ষা পেতে নগরবাসীর চেষ্টা কম নয়। কেউ ব্যবহার করছেন মাস্ক, কেউ ব্যবহার করছেন রুমাল, ওড়না।

তাতে রক্ষা হচ্ছে না, শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগজীবাণু মিশ্রিত ধুলা ফুসফুসে প্রবেশ করে। ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসজনিত কষ্ট, হাঁপানি ও যক্ষ্মাসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি বাতাসে ক্ষতিকর উপাদান থাকলে ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে। এ ছাড়া রাস্তার পাশে দোকানের খাবার প্রতিনিয়ত ধুলায় বিষাক্ত হচ্ছে।

শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকায় তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে। নগর কর্তৃপক্ষের দিক থেকে গ্রিন সিটি করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কোথায় সেই উদ্যোগ? যেসব উদ্যোগ-পরিকল্পনার কথা শোনা গেছে তা এখনো কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরা মনে করি, রাজধানীকে অবশ্যই পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত ও বাসযোগ্য করা জরুরি।

তার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ মুহূর্তে ধুলার দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে হবে। হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা মানতে হবে। নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ধুলা নিবারণের পাশাপাশি প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা প্রতিদিনই পরিষ্কার করতে হবে। সর্বোপরি, ধুলাদূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App