×

মুক্তচিন্তা

সাইবার অপরাধ নিয়ে সচেতনতা দরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:২১ পিএম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের প্রক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন সরকারপ্রধানসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে ৩৬টি ভুয়া ফেসবুক আইডি শনাক্ত করেছে র‌্যাব।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ‘গুজব ও অপপ্রচার’ চালিয়েছে সাইবার অপরাধারীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এ তৎপরতা শক্ত হাতে দমন করার চেষ্টা করেছে। নির্বাচন শেষ হলেও এখনো সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার অব্যাহত রয়েছে।

নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এসবের অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এর আগে গত ডিসেম্বরে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালে এ অভিযোগে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ছিল ৪৮। দুর্ভাগ্য আমাদের, দেশে প্রচলিত সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রুখতে পারছে না অপরাধীদের। তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধ শনাক্তে দুর্বল জেনে অপরাধী চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের।

প্রযুক্তির এই যুগে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তি জনমুখী হয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে মানুষকে। এটা যেমন সত্য এবং যুগের বাস্তবতা, তেমনি এর অপব্যবহারও হয়ে উঠছে মানুষের যন্ত্রণার অন্যতম কারণ।

আমাদের দেশে ইন্টারনেট কেন্দ্রিক যে অপরাধগুলো ঘটছে, এর মাঝে বেশি হলো- সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরি করে মিথ্যা সম্পর্কের আশ্বাস বা অন্য কোনো প্রলোভন দেখিয়ে অন্যের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা বা প্রতারণার মাধ্যমে ফাঁদে ফেলা;

কারো কোনো অন্তরঙ্গ বা আপত্তিকর অবস্থার ছবি বা অন্য কোনো একান্ত ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া বা ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করে জিম্মি করা। স্কুল-কলেজ পড়–য়া অল্পবয়সী মেয়েরাই এসব প্রতারণার শিকার হচ্ছে বেশি।

মোবাইল ফোনে ভুয়া মেসেজ দিয়ে নম্বর হ্যাক করে ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট করার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ ছাড়া আরেকটি বড় অপরাধ প্রবণতা হলো- ইন্টারনেটে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো।

আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে এর দৃষ্টান্ত- একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি চাঁদে দেখা যাওয়ার প্রচারণায় ব্যাপক মানুষকে উসকানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি, মহানবীকে অসম্মান করা হয়েছে এমন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যমূলক উসকানির মাধ্যমে রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর জঘন্য আক্রমণ, তাদের বাড়িঘর-উপাসনালয় ধ্বংস করা বেশি দিন আগের ঘটনা নয়।

মনে রাখতে হবে, সাইবার অপরাধ যেমন বাড়ছে তেমনি তা দমনেও অপরাধ তদন্ত বাহিনীকে প্রশিক্ষিত হওয়া দরকার। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে এবং অপরাধীরা সে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অপরাধ করে চলেছে।

যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে যারা মাঠ পর্যায়ে অপরাধ তদন্তে কাজ করছেন তাদেরও এ ব্যাপারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের নিরাপত্তা এবং সুনাম রক্ষার স্বার্থে, সাইবার অপরাধী শনাক্ত এবং দমনে প্রযুক্তিপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলার বিকল্প থাকতে পারে না। সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে বলে আশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App