×

জাতীয়

যশোরে বোমা হামলার পর যুবলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৪৮ পিএম

যশোরে বোমা হামলার পর যুবলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ

যশোরে সিরিজ বোমা হামলার পর যুবলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ। ছবি: সংগৃহীত

যশোরে সিরিজ বোমা হামলার পর আজ সোমবার ভোরে সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ১৪ মামলার আসামি মেহেবুব রহমান ম্যানসেল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুলিশ তাকে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩টি বিদেশি পিস্তল, ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে।

ম্যানসেল যশোর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ গ্রুপের সঙ্গে রাজনীতি করেন। তার নামে যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যাসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। গত দুই দিনের ঘটনার পর শহরে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

আহতের বাবা মোহাম্মদ আলমাস বলেন, রাতে ম্যানসেল বাসার নিচ তলায় ঘুমিয়ে ছিল। রাত আড়াইটার দিকে সাদা পোশাকের একদল পুলিশ গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে। এরপর তারা ম্যানসেলকে তুলে বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। পরে গুলির শব্দ শুনি। আমরা কেউ ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। কেননা, বাড়ির দরজা পেছন থেকে আটকে দেয়া হয়েছিল। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছেলের বামপায়ে গুলির জখম।

যশোর শহর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাসান ইমাম লাল বলেন, গভীর রাতে ষষ্ঠীতলাপাড়ার কয়েকটি বাড়ির সামনে অনেক পুলিশ অবস্থান নেয়। তারা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে বাড়ির লোকজনকে। কিছুসময় পর গুলির শব্দ শুনতে পাই।

যশোর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঈনুদ্দিন মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, কিছুদিন আগে ম্যানসেলের স্ট্রোক হয়। তার শরীরের ডান পাশ প্রায় অবশ। তিনি বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় থাকতেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন আব্দুর রউফ জানান, আহতের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।

তবে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি অপূর্ব হাসান দাবি করেছেন, ষষ্ঠীতলাপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং ম্যানসেলকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল ও ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে।

এদিকে, রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ম্যানসেল যশোরে বিবদমান আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে এমপি গ্রুপের সমর্থক। রোববার ভোর রাতে যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের কাজীপাড়া বাসভবন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়াম্যান শাহীন চাকলাদারের পাঁচ তারকা হোটেলে, তার ভাই যুবলীগ নেতা ফন্টু চাকলাদারের বাসভবন, চাকলাদার ফিলিং স্টেশনসহ ৬টি স্থানে বোমা হামলা করা হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষ পৃথক বিক্ষোভ করে।

ওই বোমাবাজির পর রোববার গভীর রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। অভিযানের মধ্যেই ষষ্ঠীতলাপাড়া এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এমপি গ্রুপের সমর্থক ম্যানসেলকে উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপের পৌর কাউন্সিলর হাজী সুমন, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ, যুবলীগ নেতা মামুন ও কুদরতের বাড়িতেও পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় কোনো কোনো বাড়িতে দুর্ব্যবহার ও ভাঙচুরের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এদিকে, রোববার ভোরের বোমাবাজির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদার গ্রুপ সমর্থক নেতৃবৃন্দ সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার মঈনুল হকের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ও মীর জহুরুল ইসলাম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, আইন বিষয়ক সম্পাদক গাজী আব্দুল কাদির প্রমুখ।

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপু জানান, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন, যেসব স্থানে বোমা হামলা হয়েছে, প্রায় সব জায়গাতেই সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তাই ফুটেজ থেকে সহজেই হামলাকারী চিহ্নিত করা সম্ভব। হামলাকারী যেই হোক তাদের চিহ্নিত করে আটকের জন্য দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

এ সময় পুলিশ সুপার মঈনুল হক নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, পুলিশ ইতোমধ্যে তাদের তদন্ত ও অভিযান শুরু করেছে। দ্রুতই হামলাকারীদের আটক করা হবে। এক্ষেত্রে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতা কামনা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App