×

বিনোদন

দিনরাত ব্যস্ত প্রেসপাড়া কর্মীদের ছুটি বাতিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:২৭ এএম

দিনরাত ব্যস্ত প্রেসপাড়া কর্মীদের ছুটি বাতিল
মাঝখানে আর মাত্র চারদিন। মেলা শুরুর আগেই শেষ করতে হবে বই ছাপার কাজ। লেখক-প্রকাশকরা তাই প্রেসপাড়ায় এসে প্রতি মুহূর্তে তাগাদা দিচ্ছেন। অন্যদিকে বছরজুড়ে অপেক্ষা শেষে বই মেলার এ মৌসুমে আয় রোজগারের পাল্লাটা আরো ভারী করতে চান প্রেস মালিকরা। তাই চাহিদামতো বই ছাপানোর কাজ দ্রুত শেষ করতে রাতদিন খোলা থাকছে প্রেস। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। শুধু প্রেসেই নয়, বাঁধাইখানাগুলোতেও যেন নিঃশ্বাস ফেলার ফুসরৎ নেই। দিনরাত একাকার করে ফেলছেন কারিগররা। নির্ধারিত সময়ের আগে ফরমায়েশের কাজ শেষ করে বেশি বেশি কাজ ধরতে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করেছেন বাঁধাইখানার মালিকরা। সবমিলিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে সামনে রেখে বই প্রকাশক, মুদ্রণ, বাঁধাই ও পরিবহনসহ এ খাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষ প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখন। গতকাল সরেজমিন রাজধানীর বাংলাবাজার, ফকিরাপুল, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকার প্রেসপাড়া ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ফকিরাপুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি প্রেসের ভেতরে গাদাগাদি ও স্তূপ করে রাখা হয়েছে রাশি রাশি কাগজ। প্রেসের ভেতর রঙের ঝাঁজালো গন্ধ। দোকান থেকে আনা হচ্ছে সাদা কাগজ। ছাপার যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা কাগজের বড় বড় শিটগুলো নেয়া হচ্ছে বাঁধাইখানায়। বাঁধাইয়ের পর কাটিং করে নতুন বইগুলো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কিংবা গুদামে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলার স্টলে উঠানো হবে এসব বই। বইয়ের লেখকরাও নেড়ে দেখছেন নতুন বইগুলো। এসব কাজে রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রেস ও বাঁধাইখানার হাজারো কর্মী। ছাপাখানার মালিকরা বলছেন, বই মেলাকে সামনে রেখে নভেম্বর থেকেই প্রেসপাড়ায় ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। ডিসেম্বরে অবসর মেলে না। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ছাপার কাজ নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ততা গেছে প্রেসগুলোতে। এ কারণে বই মেলার কাজ একমাস পিছিয়ে জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। অন্যবারের চেয়ে এবার প্রেসগুলোতে বই ছাপানো ও বাঁধাইয়ের কাজের চাপ সবচেয়ে বেশি। লোকবল বাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টা প্রেস চালুরেখেও সামাল দিতে পারছেন না তারা। কাঁটাবনের প্রেসপাড়ার ঘুরে দেখা যায়, প্রেস ও বাঁধাইখানার মালিক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা ও কর্মীদের নিঃশ্বাস ফেলার যেন সময় নেই। সারা রাত জেগে কাজ করছেন। রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকছে প্রেস ও বাঁধাইখানা। প্রেসের ভেতরেরই কাজের ফাঁকে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিচ্ছেন কর্মীরা। ক্লান্তি দূর করতে ঘুমিয়েও নিচ্ছেন কেউ কেউ। বাঁধাইখানাগুলোতে জমে উঠেছে রাশি রাশি বইয়ের স্তূপ। কর্মীদের ছুটি বাতিল করে নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়েও যেন সামাল দিতে পারছেন না বাঁধাইখানার মালিকরা। নীলক্ষেতের আনিকা প্রেসের মালিক আলমগীর হোসেন ভোরের কাগজকে জানালেন, নির্বাচনের কারণে এবার বই মেলার কাজ বিলম্বে শুরু করতে হয়েছে। সে জন্য অল্প সময়ে বেশি কাজ সামলাতে হচ্ছে। প্রেস রাতদিন চালু রেখেও সময়মতো কাজ ডেলিভারি দিতে পারছি না। একই রকম চিত্র নীলক্ষেতের প্রেসপাড়ায়ও। এখানকার প্রেসের মালিক নাসির হোসেন জানালেন, হাতে আর মাত্র চারদিন। অনেক অর্ডারের কাজ এখনো শেষ করা যায়নি। প্রকাশকরা রাতদিন তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরাও চেষ্টা করছি সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে। বিল্লাল বুক বাইডিংয়ের বাঁধাইখানার কর্মী আলম জানালেন, বিভিন্ন প্রকাশনীর প্রায় ১০ হাজার বই তার বাঁধাইখানায় স্ত‚প হয়ে আছে। এসব কাজের চাপে আমাদের ছুটি বাতিল হয়ে গেছে। বাসাতেও যেতে পারছি না। রাতদিন এখানেই কাটাতে হচ্ছে। এবার শতাধিক নতুন বই নিয়ে মেলায় অংশ নেবে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বেহুলাবাংলা। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী কবি চন্দন চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিতব্য বইগুলোর ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মূলত ফেব্রুয়ারি জুড়ে এক মাস মেলা হলেও আমাদের প্রস্তুতি চলে সারা বছরই। এবারের মেলার শুরুতেই বেহুলাবাংলা থেকে ৭০ ভাগ বই স্টলে নিয়ে যেতে পারব বলে আশা করছি। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সূত্রমতে, বাংলাবাজারসহ আশপাশ এলাকায় দেড় হাজারের বেশি প্রেস আছে। এসব প্রেসে অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে কাজ শুরু হয়। তবে এবার কিছুটা ব্যতিক্রম হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে বইমেলা কেন্দ্রিক কাজের চাপ আগের বারের চেয়ে বেশি। বাংলা একাডেমিতে প্রস্তুতি গত শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে চলছে মেলা উপলক্ষে স্টল তৈরির কাজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। গতবার বৃষ্টিতে প্রকাশকদের বই নষ্ট হয়েছে, তাই গতবারের মতো এবারো স্টলের ছাদে টিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ১ তারিখের আগেই স্টলের সব কাজ শেষ করা হবে বলে জানান মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App