×

বিনোদন

বুুলবুল ভাইয়ের অনেক অভিমান ছিল-ফাহমিদা নবী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৪:৪৬ পিএম

বুুলবুল ভাইয়ের অনেক অভিমান ছিল-ফাহমিদা নবী
আমরা ২২ জানুয়ারি দেশের সম্পদ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে হারিয়েছি। চেয়েছিলেন এমন জায়গায় কবর হোক, যেখান দিয়ে সব মানুষ আসতে যেতে তার কবরে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে পারে। মঙ্গলবার আমি সুমা আর স্বপন বুদ্ধিজীবী কবরাস্থানে গিয়ে ঠিক তেমনি পথের পাশে জায়গা পেয়ে ঠিক করে এসেছি। বুধবার তাকে চিরনিদ্রায় সেখানে শায়িত করা হলো! যে মানুষটি ৬০ দশকের ইমেজকে না ভেঙেও ভেঙেছেন অনেক কিছু যা মানুষকে তার অভ্যস্ততার বা মগ্নতাকে এতটুকু আঘাত না করে বরং গ্রহণ করবার, হৃদয়ে দোলা দেয়ার মতো, মন ভোলানো দেশের গান, আধুনিক গান, সিনেমার গানে নতুন করে জাগ্রত করেছে। আত্মবিশ্বাসী বুলবুল ভাই সুরে নিজে ডুবে যাওয়া মানুষ ছিলেন তাই দেশের গানে গল্প এনেছিলেন, সিনেমায় সুরে আরো গল্পের সাধারণ জীবনবোধ এনে দিয়েছিলেন। রুচিশীল, সৃজনশীলতার প্রলেপে মানুষের খুব কাছের যে চেনা সুর বা সহজ কথার আন্তরিকতা তাকে নতুন করে নতুন রূপ দেয়া কিন্তু খুব সহজ নয়, কারণ মানুষ চিরকালই অভ্যস্ততার পক্ষপাতিত্বে অভ্যস্ত। আমরা যদি ৬০ দশকের সরল সিনেমার গান, দেশের গান অথবা আধুনিক গানকে এখনো ভালোবাসি, যদি বলি সেই রকম গান আজো হচ্ছে না তাহলে বুঝতে হবে, সেই সময়ের গানের বাণী এবং সুরের মধ্যে মধ্যবিত্ত বা রুচিশীল সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় মানুষ নিজেকে শিক্ষিত সমাজের একজন ভাবতে বা নিজেকে গড়ে তুলতে সুশীল সমাজের পরিপূর্ণ নাগরিক হয়ে চলার আকর্ষণ বোধ করত। সেখানে অর্থের বাহ্যিকতায় নয়, সৃজনশীলতাই মানসম্পূর্ণ ওজনদার নিক্তির ভিত্তিতে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইতো.. এবং তাই হতো, যার যার যত সৃজনশীল জ্ঞান তার তত বেশি সম্মান। তাই হয়তো দেখা যায় বড় মাপের শিল্পীদের গাড়ি বাড়ির চিন্তার চেয়ে শিল্পসৃষ্টির চিন্তায় বেশি মগ্ন ছিলেন। তাই সেই গানগুলো কাজগুলো আজো মানুষকে আকৃষ্ট করে। বর্তমান কাজগুলোতে সেই ভালোবাসা বা টানটা কমে গেছে। আধুনিক গানে প্রেমের চিঠি যেমন পড়তে যেমন ভালো লাগে তেমনি করে গান বেঁধেছিলেন। মানুষ ৮০ দশককে নতুনভাবে গ্রহণ করে নিতে কষ্ট করে নয় বরং সানন্দে অভিবাদন জানিয়েছেন। তাই তো বুলবুল ভাইয়ের অনেক অভিমান বা আক্ষেপ ছিল! কেন সেই ষাটের ধারাবাহিকতাকে নিয়ে এগিয়ে আশির দশকের যে ছন্দ তার ছন্দপতন কেন? ভালো কিছু না হলে তো শ্রোতা ধরে রাখা কঠিন হবে। এই ভাবনা উতলা করত বুলবুল ভাইকে। যেমন করে চলে গেছে অকালে আরো অনেকে। কষ্টটা এখানেই একজন প্রকৃত শিল্পীর। অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হয়। তবে আবার ভাবি, এত অনবদ্য সৃষ্টির যখন মূল্যায়ন যথাযথ হয় না, তখনই মৃত্যু হয়ে যায় শিল্পীর। যেমন আমার বাবার অকালে চলে যাওয়া! ভালোই হয়েছে, অনেক কষ্ট পাচ্ছিল গানের জগতের হঠাৎ বদলে যাওয়া হাওয়ায়! বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে অনেক স্মৃতি। সে না হয় আরেকদিন বলব। এই মুহূর্তে বলি, বুলবুল ভাই তার একমাত্র ‘সন্তান মন’কে একমুহূর্তও কাছ ছাড়া করতেন না, বলতেন মনকে আমি ছাড়া কে দেখবে? মন নিজেকে নিজেই দেখবে! মনের জন্য ভালোবাসা। বুলবুল ভাই দুই ভাই এবং বাবা-মার কাছে চলে গেলেন। দুবোন মুকুল, মিতুল আর মন ভালো থাকুক, তারা ভালো থাকুক এই দোয়া করি। বুলবুল ভাই আপনি যেখানেই ভালো থাকেন। আল্লাহ যেন আপনাকে জান্নাতবাসী করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App