×

মুক্তচিন্তা

ডাকসু নির্বাচন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৫ পিএম

প্রায় তিন দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন সম্পন্ন করতে কমিশনার নিয়োগ দেয়া কিংবা আচরণবিধি প্রকাশের মতো জরুরি কিছু কাজও এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা একটি আশাজাগানিয়া ঘটনা। তবে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ।

ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন- এমন অনেকেই আজ জাতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ডাকসু ও ছাত্রসমাজের অনন্যসাধারণ ভূমিকার কথা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও পরিচালনার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করেন গণতন্ত্রের প্রায়োগিক শিক্ষা। শিক্ষালাভ করেন অধিকার সচেতনতার। বিকশিত হয় নেতৃত্বের গুণাবলি। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি।

সর্বশেষ ডাকসুর ভোট হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৬ জুন। ক্যাম্পাসে প্রায় সব ছাত্র সংগঠনই সেবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল; যদিও তখন পরিস্থিতি মোটেও শান্ত ছিল না। ডাকসু প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে। প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫৩ সালে। ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাতবার ডাকসু নির্বাচন হয়।

১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর গত ২৮ বছরে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। এর মধ্যে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সাত বছরে তিনবার তফসিল ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি।

এবার ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলছেন, ভোট হবে আগামী ১১ মার্চ। নির্বাচনে এবার চারটি প্যানেল হতে পারে।

এগুলো হলো ছাত্রলীগের প্যানেল, ছাত্রদলের প্যানেল, বাম ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেল এবং কোটা সংস্কার ঘিরে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র প্যানেল।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনের সংখ্যা ১৩টি। অবশ্য ক্যাম্পাসে কার্যক্রম দৃশ্যমান রয়েছে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ হাতেগোনা কয়েকটি বাম সংগঠনের। বাম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বলছে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র আধিপত্য। হলগুলোর নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে। কিন্তু ছাত্রসংসদ নির্বাচন করতে হলে সবার সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সব জায়গায় সহাবস্থান থাকতে হবে।

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, শ্রেণিকক্ষেও প্রচারণা শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে ডাকসু নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের ছাত্ররাজনীতি প্রাণ ফিরে পাক- এটিই আমাদের প্রত্যাশা। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া হোক।

বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন বাধ্যতামূলক করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App