ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৪২ সাল। বাংলার মুক্তিপাগল যৌবন সেদিন দাবানলের মতো জ্বলে উঠেছিল গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। তারা জীবনপণ করে নির্ভীক সৈনিকের মতো আমৃত্যু যুদ্ধ করেছিল স্বাধীনতার জন্য। তাদেরই কিছু কাল্পনিক চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগের যাত্রাপালা ‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব’। পালাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে গতকাল সন্ধ্যায়। মহান ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে প্রসাদকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য রচিত এ যাত্রাপালাটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রখ্যাত যাত্রাশিল্পী ও নির্দেশক ভিক্টর দানিয়েল। সহযোগী নির্দেশক হিসেবে রয়েছেন মোফাখখারুল ইসলাম জাপান। যাত্রাপালার একপর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী শাসকের প্রলোভনে মত্ত জমিদার তার স্নেহের নাতি, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূসহ স্বজনদের হারিয়ে উন্মাদ হয়ে যায়। ইংরেজের বিচারে এই আন্দোলনের মূল নায়ক জমিদারপুত্র মহেন্দ্র (প্রশান্ত) চৌধুরীর দ্বীপান্তর হয়। কিন্তু স্বাধীনতা পাওয়ার পর কালাপানির নির্বাসন থেকে সে আবার ফিরে আসে প্রিয় জন্মভূমির বুকে। পালায় ইংরেজ সরকারের রায়বাহাদুর খেতাব পাওয়া বাঙালি জমিদার চরিত্র যেমন স্থান পেয়েছে, তেমনি জমিদারের ঘরেই জন্ম নিয়েছে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী দস্যুর হাত থেকে ভূখণ্ডের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূর্যসৈনিকরা। তারা ইংরেজের কবল থেকে মুক্ত করে পলাশপুর থানা। তাদের বিশ্বাস, সেদিনের সে সংগ্রাম আগামী দিনের সংগ্রামের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। কাল্পনিক চরিত্রের সমাবেশ এ যাত্রায় চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্নভাবে। এ যাত্রার চরিত্রগুলোর মধ্যে যেমন জন্মভ‚মি মায়ের মুক্তি সংগ্রামে নিবেদিত বীরসন্তানরা রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বার্থের মোহে অন্ধ ইংরেজের ক্রীতদাস, রয়েছে ঘরশত্রু বিভীষণের দল। যারা অব্যাহত রেখেছে দেশমায়ের মুক্তিসংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেয়ার কূটকৌশল। দেশপ্রেম ও ব্রিটিশবিরোধী বক্তব্য প্রচার করে চারণকবি মুকুন্দদাস শুরু করেছিলেন ‘স্বদেশি যাত্রা’। উদীচীরও প্রথম পরিবেশনা সেই ব্রিটিশ ভারতের স্বদেশি আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে যাত্রাপালা ‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব’। উদীচীর ভাষ্য, মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লড়াইয়ে উদীচী পথ চলছে অবিরাম। সে চলায় নিশ্চয়ই এটি নতুন মাত্রা সংযোজন করবে। যদি আমাদের স্বাধীনতার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে বর্তমানের তরুণ বন্ধুরা সমাজের অভ্যন্তরে বিরাজমান স্বার্থপর সাম্রাজ্যবাদী দেশীয় দালাল, মজুতদার, মুনাফালোভী লুটেরাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে, তবেই সার্থক হবে বিয়াল্লিশের বিপ্লব, সার্থক হবে উদীচীর এ প্রয়াস।