×

মুক্তচিন্তা

ঢাবি স্বমহিমায় ফিরে আসুক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:১০ পিএম

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২১ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য অবদান রেখেছে। এমনকি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও ঢাবির নামটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি ও তাদের অধিকার আদায় ও কতিপয় মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ডাকসু গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাসু)। পরবর্তী সময় ১৯৫৩ সালে নাম সংশোধন করে রাখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। ডাকসু অসংখ্য কৃতিত্বপূর্ণ কাজের মাধ্যমে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ডাকসুই হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপত্র।

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি ডাকসু অন্যায় অবিচার ও সব অপরাজনীতির বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ায়। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই- ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২-এর শিক্ষানীতি, ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এমনকি ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ডাকসু তার সাহসিকতার জানান দেয়।

বহুকাল ধরে ডাকসুই নতুন ও জাতীয় নেতৃত্ব তৈরিতে মূল ভূমিকা রেখেছে। ডাকসু নেতাদের সাহসী ও বলিষ্ঠ উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় নেতৃত্ব উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এক সময় সচল থাকার কারণে দেশে অসংখ্য ত্যাগী ও যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা তৈরি হয়।

বর্তমান রাজনীতির মাঠে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তাদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আব্দুর রব, রাশেদ খান মেনন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মতিয়া চৌধুরীসহ অনেকেই ডাকসু নির্বাচনের ফলে বের হয়ে এসেছেন।

দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু অচল থাকায় নতুন প্রজন্মের ঢাবি শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জানে না ডাকসু কি ছিল! কি ছিল তার অতীত ঐতিহ্য? ডাকসুর পুরনো গৌরব নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই ভুলতে বসেছে। ১৯২৪-২৫ সালে ডাকসুর প্রথম ভিপি মনোনীত করা হয়। ডাকসুর প্রথম ভিপি ও জিএস হিসেবে মনোনীত হন মমতাজ উদ্দীন আহমেদ ও যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত।

ডাকসু প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৩৬ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪৮ বছরে মাত্র ৭ বার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। পরবর্তী সময় অনেকবার ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েও তার আলোর মুখ দেখেনি।

আগামী ১১ মার্চ ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদি সত্যিই কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ছাড়াই ডাকসু নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে নতুন রূপে দেখা যাবে ঢাবিকে। ডাকসু বহুদিন ধরে বন্ধ থাকায় জাতীয় জীবনে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীই রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং এদের বেশিরভাগই সহজাত নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন।

যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্রবান্ধব নেতার অনুপস্থিতির ফলে রাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের এক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন প্রমাণ করে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে যোগ্য ছাত্র নেতৃত্বের প্রয়োজন। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে সুযোগ সন্ধানীরা এ জনপ্রিয় আন্দোলনগুলোকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে।

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় আগামীর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবিলম্বে ডাকস পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া চালু করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির পথ সুগম করা হোক। ডাকসুই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই যে দেশ কিরূপ অবদান রাখতে পারে এটা আবারো প্রমাণিত হোক । ঢাবি ফিরে আসুক স্বমহিমায়।

মতিউর মহসিন : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App