×

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘে বাংলাদেশের এক বছরের সাফল্য তুলে ধরলো স্থায়ী মিশন

Icon

শামীম আহমেদ

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:০৬ এএম

জাতিসংঘে বাংলাদেশের এক বছরের সাফল্য তুলে ধরলো স্থায়ী মিশন
জাতিসংঘে বাংলাদেশের এক বছরের সাফল্য তুলে ধরলো স্থায়ী মিশন
জাতিসংঘে বাংলাদেশের এক বছরের সাফল্য তুলে ধরলো স্থায়ী মিশন
জাতিসংঘে বাংলাদেশের এক বছরের সাফল্য তুলে ধরলো স্থায়ী মিশন
২০১৮ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য তুলে ধরলো জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন। সেইসঙ্গে নতুন বছরে বাংলাদেশেকে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সে সম্পর্কে ধারনা দিয়ে বলা হয়, গত বছরের সাফল্যকে ধরে রেখে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি এসব বিষয়ে দক্ষ ও আগ্রহী ব্যক্তি এবং সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। কারন চ্যালেঞ্জিং বিষয় সমূহ মোকাবেলায় যে মানের বিশেষায়িত জ্ঞান, চিন্তা, এবং কর্ম পরিকল্পনা ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দরকার তা সরকারের হাতে নাও থাকতে পারে। তাই দেশকে যারা ভালোবাসেন, যারা বাংলাদেশকে সেরা জাতির একটি হিসেবে দেখতে চান তারা শত ভাবে স্ফূর্ত এ কাজে অংশ নিতে পারেন। গত বছর বিশ্ব কূটনীতিতে যেসব সাফল্য জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেয়েছে বলে মতবিনিময় সভায় উল্লেখ করা হয়, এরমধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, শান্তি রক্ষায় অনন্য ভ‚মিকা, অভিবাসন, এসডিজি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি,জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাস, সহিংসতা ও উগ্রবাদ উল্লেখযোগ্য। একইসঙ্গে নতুন বছরে যেসব ইস্যুতে বাংলাদেশকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে বলা হয় তার মধ্যে রয়েছে, মুক্ত বাজার অর্থনীতি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন, জলবায়ুর ঝুকি মোকাবেলা এবং উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের ধারনা দিতে আজ ২২ জানুয়ারি মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। নিউইয়র্কের বানিজ্যিক নগরী ম্যানহাটনের জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা ছাড়াও জাতিসংঘ মিশন ও কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শুরুতেই কেন এই মতবিনিময় সভার আয়োজন সে সম্পর্কে ধারনা দেন স্থায়ী মিশনের ফাষ্ট সেক্রেটারি নূর এলাহি মিনা। এরপর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন সংক্ষেপে ২০১৮ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক‚টনীতি কতটা সফল হয়েছে, কিভাবে সফল হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে তার কি প্রভাব পড়বে সে সম্পর্কে সংক্ষেপে সাংবাদিকদের ধারনা দেন। এছাড়া বছরজুড়ে সার্বিক সাফল্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন উপ স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম। একই সঙ্গে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের সেবা, সেবার মান উন্নয়ন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক‚টনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন সম্পর্ক উন্নয়নে কনস্যুলেট কিভাবে কাজ করবে যে সম্পর্কে ত্রৈমাষিক,ষান্মাসিক এবং বার্ষিক পরিকল্পনা সাংবাদিকদেও সামনে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের মিনিষ্টার কে এম মনোয়ার হোসেন, ইকোনোমিক মিনিষ্টার ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন, কাউন্সেলর সঞ্চিতা হক, কাউন্সেলর নিরুপম দেবনাথ, কাউন্সেলর তৌফিকুর রহমান, কাউন্সেলর নুর ই আলম, কাউন্সেলর হুমায়ুন কবীর, কাউন্সেলর শাহ আসিফ রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের কাউন্সেলর আয়েশা হক, ও ফাষ্ট সেক্রেটারি শামীম হোসেন ও কাউন্সিলর আয়েশা হক। মিশনের ২০১৮ সালের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও অর্জনের বিষয়ে উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিগত বছরগুলোর মত প্রধানমন্ত্রীর এবারের অংশগ্রহণও ছিল অত্যন্ত সফল ও তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিষয়গুলো আমরা ভাগে ভাগে আলোচনা করবো। তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণ ও অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকালে প্রদত্ত বক্তব্যে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার/ রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে সভায় বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরেছেন যা সবার কাছে অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে। ২০১৮ সালে মিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ছিল রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কাজ করা। আমরা সারা বছরই জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রদের নিকট এ বিষয়ে দেন দরবার করেছি। ফলশ্রæতিতে বিষয়টি জাতিসংঘে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা বিষয়ে আরও শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছেন। জাতিসংঘে আমাদের এ সংক্রান্ত কার্যক্রম মূলতঃ দু’টি ধারার ছিলঃ সাধারণ পরিষদে এবং নিরাপত্তা পরিষদে। আমরা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ কাজে লাগিয়ে এবং বিশ্ব নেতৃত্বের উপস্থিতির সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গা বিষয়ে বিশ্ব জনমত দৃঢ়তর করতে সহায়তা করি। আপনারা জানেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাধারণ পরিষদের বক্তৃতায় অত্যন্ত জোরালোভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি আবারও তুলে ধরেন এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে তিনটি সুপারিশ প্রস্তাব করেন। সাধারণ পরিষদে এবার আমরা গতবছরের চাইতেও জোরালো একটি রেজুল্যুশন এনেছি যা বিপুল ভোটে গৃহিত হয়েছে। এতে প্রথমবারের মত মিয়ানমারের দায়বদ্ধতা বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত হয়েছে, মহাসচিবের বিশেষ দূতের কার্যক্রমের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবার ওআইসি’র পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন রেজ্যুলেশন এর কো-স্পন্সর হয়েছে। ফলশ্রæতিতে গত বছরের চেয়ে স্পন্সর এর সংখ্যা বেড়েছে। এবার পক্ষে ভোট গতবারের চেয়ে বেড়েছে ১০টি, বিপক্ষে ভোট কমেছে। আমাদের দেনদরবারের কারণে বেশ কয়েকটি দেশ, যারা আমাদের বিপক্ষে গত বছর ভোট দিয়েছিল এবার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এ সবই রেজ্যুলেশনের পক্ষে বিশ্বজনমত আরও সুদৃঢ় হবার প্রতিফলন। এর পিছনে আমাদের ব্যাপক তৎপরতা ছিল। আমাদেরকে অত্যন্ত কঠিন নেগোশিয়েশন এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে; অনেক ধরনের সমঝোতা করতে হয়েছে; বিশেষ দূত এর অফিসের বাজেট নিয়ে নেগোশিয়েট করতে হয়েছে; বহু সদস্য রাষ্ট্রের নিকট, আঞ্চলিক গ্রæপের নিকট ধর্ণা দিতে হয়; তাদেরকে সমস্যাটি ব্যাখ্যা করতে হয়; দেশ-পর্যায়ের রেজুলেশনে অনেকেরই ভোটদানে বিরত থাকার নীতিগত অবস্থান থাকে সেটি বদলানো খুব কঠিন; তারপরও আমরা কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে সেটা করে দেখিয়েছি। এবার নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের অর্জনের দিকে ফিরে তাকাই। নিরাপত্তা পরিষদ হতে এ পর্যন্ত রেজুলেশন হয়নি, যার কারণও আপনারা জানেন। তবে আমরা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য না হওয়া এবং রোহিঙ্গা বিষয়ে কিছু দেশের ভিন্নমত সত্তে¡ও আগস্ট ২০১৭ পর হতে নিরাপত্তা পরিষদে এ পর্যন্ত ১৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ ২৮ এপ্রিল হতে ১ মে ২০১৮ বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছে যা সমস্যার গভীরতা ও ব্যাপ্তি অনুধাবনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কিছু সদস্য দেশ নিরপত্তা পরিষদে একটি রেজ্যুলেশন আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কাজেই আমরা নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সমস্যাটি জিইয়ে রাখতে সফলকাম হয়েছি। এ সবই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ক্রমঅগ্রসরমান পদক্ষেপ যা সম্ভব হয়েছে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার কারণে। রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের বিভিন্ন ধরণের কৌশলগত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হয়েছে। সময়াভাবে তার সবটুকু আপনাদের বলা যাচ্ছে না। মোটাদাগে আমাদের কার্যক্রম ছিল ঃ আমরা জাতিসংঘে যে ফোরামেই সুযোগ পেয়েছি রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে কথা বলেছি বা বলার সুযোগ করে নিয়েছি; যেখানে মিয়ানমার কথা বলেছে আমরা তার প্রত্যুত্তর দিয়েছি; মিয়ানমারের প্রোপাগান্ডা মেশিনারি যে বিশাল মিস্ইনফরমেশন ক্যাম্পেইন চালিয়েছে এবং যা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে সেগুলো ভুল প্রমাণ করতে সদস্য রাষ্ট্রের নিকট আমরা রোহিঙ্গা সংকটের বস্তুনিষ্ট বিবরণী ও সঠিক তথ্য ও উপাত্ত বিতরণ করেছি; আমরা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেছি এবং তাদের প্রত্যেকের অবস্থানের নিরিখে সুকৌশলে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি; জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সাইড ইভেন্ট করেছি; এ সময়কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অন্যান্য যত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ঢাকা থেকে এসেছেন। তাঁদেরকে জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বে সাথে রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে বৈঠক করিয়েছি; মহাসচিব বারং বারই আমাদের সময় দিয়েছেন; নিরাপত্তা পরিষদ ও মহাসচিব ছাড়াও জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ও প্রতিনিধিদলকে আমরা কক্সবাজার সফর করিয়েছি; তাঁরা স্বচক্ষে রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখে তার উপর বিবৃতি দিয়েছেন, ফলশ্রæতিতে রোহিঙ্গাদের পক্ষে জনমত সুদৃঢ় হয়েছে। সাধারণ অধিবেশন ও নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের এ নিরন্তর, কৌশলী ও দ্বিমুখী আউটরিচ শুধু নিউইয়র্কেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাসসমূহ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আমাদের মিশনগুলোকে এ জন্য কাজে লাগিয়েছি। জেনেভাতে মানবাধিকার কাউন্সিলে মিয়ানমারের উপর একটি রেজ্যুলেশন বিপুল ভোটে গৃহীত হয়েছে। জেনেভাতে আমাদের স্থায়ী মিশন এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এজন্যই রোহিঙ্গা সমস্যা জাতিসংঘে এবার এতটাই আলোচিত হয়েছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি ওআইসি, সৌদিআরব, তুরস্ক এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের জোরালো সমর্থনের কারণে। গত বছরও আপনাদের বলেছিলাম, এ বছরও বলছি এ পর্যন্ত যে সাফল্য আমরা পেয়েছি তা অত্যন্ত আশাপ্রদ ও গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘের ও আন্তর্জাতিক মহলের সজাগ নজর ও সহানুভুতি আমরা এ সমস্যার উপর বজায় রাখতে এ পর্যন্ত আমরা সফলকাম হয়েছি। কিন্তু চূড়ান্ত সফলতা আসবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে। সে লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা নতুন বছরেও চলমান থাকবে। তিনি বলেন, আগস্ট ২০১৭ তে রোহিঙ্গা সমস্যা শুরুর পর হতেই আমরা মহাসচিবকে বাংলাদেশ সফর করানোর জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাম। গত বছর তা সফল হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মহাসচিব ৩০জুন-০৩ জুলাই ২০১৮ বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাঁরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, এ বিষয়ে কথা বলেছেন । তাঁরা বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতিতেও সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। উপ স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ১৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভোলপমেন্ট পলিসি (সিপিডি) বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার হতে উত্তরণের শর্তাদি প্রথমবারের মত পুরণ করে বলে ঘোষণা দেয়। এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে একটি মাইলফলক, আমার উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রতি জাতিসংঘের একটি অনন্য স্বীকৃতি। এটি অর্জনে মিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। তথ্য বিছিন্নতার কারণে যেন বাংলাদেশের এ শর্তাদি পূরন ব্যাহত না হয় সেজন্য সিপিডি কর্তৃক বাংলাদেশের শর্তাদি পূরণের ৎবারবি প্রক্রিয়া চলাকালে আমরা সিপিডি’র সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করি, তাদেরকে সঠিক এবং সর্বশেষ ডেটা দিয়ে সহায়তা করি এবং তাদেরকে বাংলাদেশ সফর করাই। যেখানে এলডিসি ক্যাটাগরি হতে বেরিয়ে আসতে অন্যান্য দেশ অনীহা প্রকাশ করে সেখানে এ বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ এবং প্রচেষ্টা জাতিসংঘে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরের পুরোটাই বাংলাদেশ সৈন্য/পুলিশ সরবরাহকারী দেশগুলোরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। বর্তমানে আমাদের শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ৬৯৭৮। বাজেট হ্রাসের জন্য সামগ্রিকভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা ২০% হ্রাস পেলেও বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীদেও সংখ্যা তেমনভাবে হ্রাস পায়নি। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যে তীব্র প্রতিযোগিতা তা সত্তে¡ও আমাদের এ অবস্থান বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের উপর জাতিসংঘের আস্থারই স্বীকৃতি। সাউথ সুদান এর আবিই (অনবুর)-তে আমরা এবছর হতে শান্তিরক্ষী পাঠানো শুরু করেছি। আমাদের নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে; শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে; আমাদের মোতায়েন প্রস্তুতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর আমাদের কোন শান্তিরক্ষী অভিযুক্ত হয়নি। মিশনের পক্ষ হতে আমরা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে সর্বদাই কোন ওপেনিং তৈরি হলে সেখানে আমাদের শান্তিরক্ষীদের নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকি। নিরাপত্তা পরিষদে, যেখানে শান্তিরক্ষা মিশনগুলো খোলা বা বন্ধ এদের ম্যান্ডেট রিভিউ এবং নবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে কৌশলগত ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেখানে সৈন্য/পুলিশ সরবরাহকারী দেশ হিসেবে আমরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পক্ষে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমাদের শান্তিরক্ষীদের সার্বিক কার্যক্রমের গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি মিশনের এ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাংলাদেশকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ১টি ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার ও ২টি সেক্টর কমান্ডার পদে অধিষ্ঠিত আছে। আমরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের বিষয়টিও জোরালোভাবে শান্তিরক্ষী কার্যক্রমের নীতিগত আলোচনায় তুলে ধরি। শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা রক্ষায় মালিতে আমরা নিজ খরচে মাইন প্রটেক্টেড ভিহাইকেল মোতায়েন করেছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আমাদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ মহাসচিব সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাকশন ফর পিসকিপিং শীর্ষক যে উচ্চ পর্যায়ের সভা আহŸান করেন তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধান এ বিশেষ সম্মান পান। তিনে বলেন, অভিবাসন বিষয়ে আমরা জাতিসংঘে অন্যতম সোচ্চার দেশ। আমাদের বিপুলসংখ্যক অভিবাসীদের বিষয়টি মাথায় রেখে গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন এর বছরব্যাপী নেগোশিয়েশনে আমরা অংশগ্রহন করেছি। নিউইয়র্কে ফ্রেন্ডস্ অফ মাইগ্রেশন গ্রুপ এর প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ার হিসেবে আমরা এ গ্রুপের নিয়মিত সভা আয়োজন করেছি, বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট বিষয়ে আমাদের মতামত/ প্রত্যাশার কথা জানিয়েছি; বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট যেন একটি অর্থবহ, কার্যকর এবং অগ্রগতিশীল নীতি-কৌশল হিসেবে আর্বিভূত হয় সেজন্য জনমত প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা করেছি; আমরা সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ী কমিউনিটি’র সঙ্গেও সভা করেছি। ফলশ্রæতিতে অভিবাসীদের মানবাধিকার ও কল্যাণ, অভিবাসন ব্যবস্থাপনা, মানুষের বিচরণ, বিভিন্ন ধরণের মানুষের একত্র যাত্রা বিষয়গুলো গ্লোবাল কমপ্যাক্ট এ অন্তর্ভ্ক্তু হয়েছে। তিনি আরও বলেন,আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা বিশ্বমহলে বিশেষ সমাদৃত হয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে অটিজম, যুব উন্নয়ন, ড্রাগ ব্যবহার প্রতিরোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজ্অ্যাবিলিটিজ্, সামাজিক নিরাপত্তা জাল, তথ্যে প্রবেশাধিকার, সৃজনশীল সরকারি সেবা প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের অর্জন জাতিসংঘে ক্রমাগতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলাতে যেন এলডিসি’র দেশগুলো প্রয়োজনীয় সহায়তা পায় সে বিষয়ে আমরা ২০১৮ তেও সোচ্চার ছিলাম। গত সেপ্টেম্বরে মালাউই (গধষধরি)–র নিকট এলডিসি’র চেয়ার-এর দায়িত্ব হস্তান্তরের পূর্ব পর্যন্ত আমরা ২০৩০ গ্লোবাল ডেভোলপমেন্ট এজেন্ডা ও এসডিজি বাস্তবায়নে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করছি। এলডিসি’র দেশগুলোর চাহিদা যেমনঃ অর্থায়ণ, ওডিএ, বৈদেশিক বাণিজ্য, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ, প্রযুক্তির কথা জাতিসংঘ ও আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে তুলে ধরছি। আমাদেও চ্যালেঞ্জগুলোর কথা , আমাদের উদ্বেগেগুলোর কথা তুলে ধরছি এবং এগুলোর সমাধানে উন্নতবিশ্বের সহায়তা কামনা করছি। এলডিসি’র দেশগুলোর জন্য টেকনোলজি ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু করার পেছনে আমাদের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা সর্বত্র স্বীকৃত হয়েছে। বিগত অনেকগুলো বছরের মধ্যে একটি ছিল বাংলাদেশ মিশন কর্তৃক জাতিসংঘে আয়োজিত একইসঙ্গে সবচেয়ে মর্যাদাকর অনুষ্ঠান যাতে মহাসচিব ও সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট উভয়েই উপস্থিত ছিলেন। দু’জনই তাঁদের বক্তব্যে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অবদান ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বছরব্যাপি মিশন জাতিসংঘের নেতৃত্বের সঙ্গে নিয়মিত এবং কৌশলগত যোগাযোগ রক্ষা করেছে। জাতিসংঘ সব সময় বাংলাদেশ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবই প্রদর্শন করেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেগোসিয়েশন সমূহ পরিচালনার মাধ্যমে সহমত আনয়ন বহুপাক্ষিক কুটনীতির একটি অন্যতম মর্যাদাকর কিন্তুু কঠিন কাজ। প্রতিবছর অল্প কিছুসংখ্যক দেশকে জাতিসংঘে তাঁদের কার্যক্রমের ভিত্তিতে সাধারন পরিষদ বা ইকোসক -এর প্রেসিডেন্ট এ দায়িত্ব প্রদান করে। এটিকে জাতিসংঘের ভাষায় ভধপরষরঃধঃরড়হ বলে। আমরা এবছর এরকম তিনটি রেজুল্যুশন/ঘোষনাপত্র ফ্যাসিলেশন (ভধপরষরঃধঃরড়হ)-এর দায়িত্ব পেয়েছি এবং সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছি। এটি জাতিসংঘে আমাদের দক্ষতাপূর্ণ কার্যক্রমের স্বীকৃতি স্বরুপ। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আমরা ওআইসি’র নিউইয়র্ক চ্যাপ্টার এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছি। এর মাধ্যমে আমরা মুসলিম উম্মাহ সমুন্নত রাখা এবং ওআইসি’র জন্য সংবেদনশীল বেশ কিছু বিষয় যেমন : প্যালেস্টাইন, রোহিঙ্গা সমস্যা ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছি অনেক সময় জোরালো বিরোধিতার মুখেও। আমাদের এ ভূমিকা নিউইয়র্কস্থ ওআইসি সদস্য মিশনগুলো কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি জানান,বাংলাদেশ গত বছর জাতিসংঘের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় নির্বাচিত হয়েছে : হিউম্যান রাইটস্্ কাউন্সিল এ ২০১৯-২০২১ মেয়াদে: কমিশন অব স্টাটাস অব উইমেন -এ ২০১৯-২০২২ মেয়াদে; এবং ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেন এর নির্বাহী বোর্ড এ ২০১৯-২০২১ মেয়াদে। এটি বহুপাক্ষিক কুটনীতিতে একটি দায়িত্ববান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উপর বিশ্বসম্প্রদায়ের আস্থারই প্রতিফলন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উত্থাপিত এ বার্ষিক ফ্লাগশীপ রেজুলেশনটি বিপুল সংখ্যক কো-স্পন্সরসহ এ বছর আবারও সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পর পর ১৯ টি বছর ধরে এটি গৃহীত হওয়া শান্তি বিনির্মানে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অবদানেরই স্বীকৃতি। আমরা এবার রেজুলেশনটিতে শান্তির সংস্কৃতির উপর ডিক্লারেশন এবং প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন এর ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এ সাধারণ পরিষদের একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠান আয়োজন এর উপর সহমত আনয়নে সমর্থও হই। এছাড়া টেকসই শান্তি এবং শান্তির সংস্কৃতি এর মধ্যকার পরিপূরক যোগসূত্রের বিষয়টি এতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন,বিশ্বশান্তি নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থানের কারনে এবং জাতিসংঘ মহাসচিব ও সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্টের প্রাধিকারের সঙ্গে কৌশতগত সঙ্গতি রক্ষাকল্পে আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবের সার্চ ইন পিস ডিপ্লোমেসি প্রচেষ্টাকে সর্বোত সমর্থন দিয়ে গেছি। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, শান্তি বির্নিমানে পিসবিল্ডিং কমিশন, পিসবিল্ডিং ফান্ডে আমাদের অবদান, নিরাপত্তা পরিষদসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন আলোচনায় এবং বিভিন্ন গ্রƒপস্ অফ ফ্রেন্ডস্ এর মাধ্যমে আমরা টেকসই শান্তির ধারণাটিকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং জাতিসংঘের শান্তি ও নিরাপত্তা স্তম্ভটিকে জোরদার করার চেষ্টায় সহায়তা করেছি। গত এপ্রিল মাসে সাধারণ পরিষদে টেকসই শান্তির উপর অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রেরিত বিশেষ আমন্ত্রণ এবং বাংলাদেশকে এ সংক্রান্ত রেজ্যুলেশন ফ্যাসিলেটেশন -এর দায়িত্ব অর্পন মিশনের উপরোক্ত অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ। বর্তমান মহাসচিব দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতিসংঘের সংস্কার এর উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। শান্তি ও নিরাপত্তা কাঠামো, অভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনা সংস্কার এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা সংস্কার-এ তিনটি মূলধারায় সংস্কার চলছে। সংস্কারে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের স্বার্থ যেন রক্ষিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এ প্রক্রিয়াটিতে আমরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি এবং মহাসচিবের উদ্যোগে সহায়তা প্রদান করে চলেছি। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সকল আলোচনায়, নীতি-আদর্শ নির্ধারন কার্যক্রমে এবং সংশ্লিষ্ট ফোরামে সক্রিয় আছি। আমরা জাতিসংঘের নতুন সৃষ্ট অফিস অফ দ্যা কাউন্টার টেরোরিজম ছাড়াও জাতিসংঘের বিভিন্ন সন্ত্রাস দমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই নিবিড়ভাবে কাজ করছি। তাদের টিমকে বাংলাদেশে সফর করাচ্ছি; সক্ষমতা বিনির্মাণ-এ তাদের সহায়তা নিচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের দেশে যে কাজগুলো হচ্ছে সেগুলো তাদের অবহিত করছি; আমাদের ‘সমগ্র-সমাজকে নিয়ে কাজ করার দৃষ্টিভঙ্গি’ কিভাবে কাজ করছে তা ব্যাখ্যা করছি। সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও সহিংস উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশের ‘ জিরো টলারেন্স পলিসি’র প্রতিফলনকারী ও সকল কার্যক্রম জাতিসংঘে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রদের সঙ্গে নিয়ে সামষ্টিকভাবে প্যারিস এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ এবং এজন্য জাতিসংঘের সকল সংশ্লিষ্ট ফোরামে আমরা সোচ্চার আছি। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ঝুঁকি সংকুলতা বিবেচনায় এ বিষয়ে চলমান নতুন কুটনৈতিক প্রচেষ্টা গেøাবাল প্যাক্ট অন দ্যা এনভাইরনমেন্ট কে আমরা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। তিনি জানান, সুনীল অর্থনীতিতে আমাদের প্রাধিকার বিবেচনায় এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে সামুদ্রিক অনুসন্ধান আমাদের অমিত সম্ভাবনা; টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার; মানবকল্যাণে মানব সভ্যতার সাধারণ ঐতিহ্যর ব্যবহার বিষয়ে বিভিন্ন আইনগত বিধিবিধান ও রীতি-নীতি তৈরির কাজ জাতিসংঘে চলছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় সমুদ্র তলদেশে খনিজ সম্পদ উত্তোলন বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিধি বিধান কাজও চলমান। আমরা বাংলাদেশের পক্ষ হতে এ প্রক্রিয়াগুলোর নেগোসিয়েশনে অংশগ্রহণ করেছি যাতে আমাদের স্বার্থ রক্ষিত হয়, আমাদের সক্ষমতার ঘাটতির কারণে যেন আমরা সামুদ্রিক সম্পদের ভান্ডার হতে বঞ্চিত না হই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে আমরা বছরব্যাপী নানাবিধ কাজ করেছি। জাতিসংঘের যেসকল রাষ্ট্র গণহত্যার শিকার হয়েছে তারা কিভাবে বিষয়টি আন্তর্জাতিকীকরণ করেছে এ বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জেনেছি; তাদের সুপারিশ নিয়েছি; তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি এবং জাতিসংঘের গণহত্যা দিবস উদ্যাপনে অংশ নিয়েছে; আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বাণী তাঁদেরকে প্রেরণ করেছি; জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ কার্যালয়ের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করেছি। আমরা প্রথমবারের মত গতবছরের ২৫ মার্চ মিশনে গণহত্যা স্মরণ দিবস পালন করেছি যাতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র, গণহত্যা এর উপর যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ অংশগ্রহন করেন। তিনি বলেন আমরা রোহিঙ্গা, নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং যুব, শান্তি ও নিরাপত্তা ইস্যু ছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদ আয়োজিত মাসওয়ারী প্রায় সকল উন্মুক্ত আলোচনাতেই অংশগ্রহন করেছি এবং বক্তব্য দিয়েছি যাতে আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছি। এটি নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের দৃশ্যমানতা এবং গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে যা নিরাপত্তা পরিষদসহ জাতিসংঘে আমাদের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমর্থন আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, আমরা গত বছর দ্বিতীয়বারের মত জাতিসংঘে ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করি। এতে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের কুটনীতিক, জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং বহুভাষাবিদগণ অংশগ্রহণ করেন। সাধারণ পরিষদের বহুভাষাবাদ শীর্ষক একটি রেজুলেশনেও আমাদের প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উল্লেখ করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরার জন্য এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখতে আমরা বছরব্যাপি জাতিসংঘে আমাদের বিভিন্ন প্রাধিকার বিষয় যেমন: অভিবাসন. অটিজম, গনহত্যা, এসডিজি বাস্তবায়ন, তথ্যে প্রবেশাধিকার, সৃজনশীল সরকারি সেবা প্রদান সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং খ্যাতনামা থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করেছি। নিউইয়র্কভিত্তিক বিভিন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সঙ্গেও আমরা আমাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছি এবং যৌথ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। তিনি বলেন, আমরা বছরব্যাপি চেষ্টা করেছি জাতিসংঘে আমাদের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম, অবদান বা অর্জনকে আপনাদের নিকট পৌঁছাতে বা সেগুলো আপনাদের দ্বারা কাভার করাতে। আমাদের পক্ষ এ আউটরিচ আরও বৃদ্ধির জন্য আমরা এ বছরও চেষ্টা করবো। আমরা এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি এবং আরও বেশী সহযোগিতা পাবার আশা রাখছি। বিগত এক দশকে বাংলাদেশের বিপুল আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন জাতিসংঘে বাংলাদেশকে ইতোমধ্যেই একটি সম্মানজনক আসনে আসীন করেছে। আমরা ২০১৮ তে তা আরও সমুন্নত করার চেষ্টা করেছি। যেখানে শরণার্থী এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষকে সাহায্য দেয়ার বিষয়ে এমনকিু উন্নত দেশগুলোর মধ্যেও চরম অনীহা দেখা গেছে সেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের কারণে বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে নতুনভাবে দেখছে। এটি জাতিসংঘে আমরা ভীষণভাবে অনুভব করছি। ২০১৯ সালেও আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের প্রফাইল আরও বৃদ্ধি করার। এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা একান্তই কাম্য।      

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App