×

বিনোদন

আমাকে যেন ভুলে না যাও...

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম

আমাকে যেন ভুলে না যাও...
আমাকে যেন ভুলে না যাও...
আমাকে যেন ভুলে না যাও...
আমাকে যেন ভুলে না যাও...
আমাকে যেন ভুলে না যাও...
আমাকে যেন ভুলে না যাও...
আমাকে যেন ভুলে না যাও...
আমাকে যেন ভুলে না যাও...
বরেণ্য সুরকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল নিজ ভুবনে ডুবে থাকতেন সুর আর গান নিয়ে। এর মধ্যে কিছুদিন পরপর ফেসবুকে এসে নানা বিষয়ে কথা বলতেন। যার বেশিরভাগই থাকত দেশ, মাটি, মানুষ আর মমতার কথা। গত ২ জানুয়ারি তেমনই একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সঙ্গে নিজের একটি ছবিও দিয়েছিলেন। লেখেন, ‘আমাকে যেন ভুলে না যাও... তাই একটা ছবি পোস্ট করে মুখটা মনে করিয়ে দিলাম।’ এভাবে আর ছবি পোস্ট করা হবে না তার। না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোকাহত সব বয়সী গানপাগল মানুষ। ফেসবুকও যেন শোকবইয়ে পরিণত হয়েছে। প্রিয় এই তারকার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বাসায় ছুটে আসেন বন্ধু-সহকর্মী, সুহৃদ, স্বজনরা। বুলবুলকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন তার গানের জনপ্রিয় চারজন শিল্পী
খুব কষ্ট লাগছে এই ভেবে যে আমরা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি। এত কম বয়সে বুলবুল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তারপর বুলবুল এ দেশের একজন প্রথিতযশা সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু এমন একজন সঙ্গীত পরিচালকের সঠিক মূল্যায়ন আমরা করতে পারিনি। এটাই আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। বুলবুলের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ বিটিভির জন্য একটি অনুষ্ঠানে। ১৯৭৮ সালের কথা। সেই অনুষ্ঠানে মাঝি নাও ছাইড়া দেরে মাঝি পাল উড়াইয়া দে, একদিন ঘুম ভেঙে দেখি তুমি নাইসহ আরো দুটি গান গেয়েছিলাম বুলবুলেরই সুর-সঙ্গীতে। কিন্তু দুঃখ হলো বিটিভি সেসব অনুষ্ঠান যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে না। যদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করত তাহলে নিশ্চয়ই এই প্রজন্মের শ্রোতারা, শিল্পীরা সেসব গান শুনে কাজে লাগাতে পারত। যাই হোক সে কথা আজ বলে কোনো লাভ নেই। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল চলে গেল, যেন আমাদের সবই শেষ হয়ে গেল। আর কিছুই রইল না আমাদের। বুলবুলের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমি কিছু বলার আগেই বুঝে ফেলত বুলবুল আমি কী বলতে চাচ্ছি। আবার বুলবুল আর হারমোনিয়ামে হাত দিলেই আমি বুঝে ফেলতাম বুলবুল কী বুঝাতে চাইছে। এতটাই বোঝাপড়া ছিল আমাদের মধ্যে। বুলবুল আর আমার পরিকল্পনা ছিল তার করা আমার গাওয়া দেশের গানগুলো আবার নতুন করে রেকর্ড করার। কিছু গান করেছিও। কিন্তু সবগুলো করা হয়ে ওঠেনি। আজ বুলবুল নেই। কিন্তু তারপরও ইচ্ছে আছে তার গানগুলো নতুন করে গাইবার। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়। সত্যি বলতে কী এগুলো ভাবছি আর নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। নিজেকে সান্ত¡না দেয়া ছাড়া তো এখন আর কিছু করার নেই। বুলবুলের সুর-সঙ্গীতে আমার প্রথম গান ছিল ও বন্ধুরে প্রাণও বন্ধুরে, কবে যাব তোমার বাড়ি গানটি। প্রথম গানটিই সেই সময় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এরপর আরো অনেক গান গেয়েছি বুলবুলের সুর-সঙ্গীতে। যেহেতু বুলবুল নিজেই গান লিখত, তাই তার প্রতিটি গানের সুর-সঙ্গীতায়োজন একটু অন্যরকমই হতো। যা শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যেত। বুলবুুল তার নিজের সুরে আমার একটি অ্যালবামও করেছিল। একজন শিল্পীকে স্বাধীনতা দিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। শিল্পীকে গান বুঝিয়ে দিয়ে শিল্পীর নিজের মতো করেই গাইতে বলতেন। যে কারণে শিল্পী অনায়াসে গান গাইতেন। ‘শিল্পী’ সিনেমাতে আমি অভিনয় করেছিলোম। এই সিনেমাতে একটি উর্দু গান ছিল ‘তেরি জুলফে’। একটি ভার্সনে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সুবীর নন্দী ও শাকিলা জাফর। আরেকটি ভার্সনে আমি গেয়েছিলাম। এই গানটির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বুলবুল কাজ করেছিলেন। এটা সত্যিই অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল একজন মেধাবী সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। আমার সৌভাগ্য যে বুলবুল ভাইকে শেষ দেখাটা দেখতে পেরেছি। কারণ আমার তো আজ সকালেই অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিল। এটা সত্যি যে বুলবুল ভাই চলে গেলেন এটা আমি ভাবতেই পারছি না। কারণ তার সঙ্গে আমি এত কাজ করেছি, এত সুন্দর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল তার সঙ্গে যে আমি ভাবতেই পারছি না যে তিনি নেই। যতদূর মনে পড়ে বুলবুল ভাইয়ের সুর-সঙ্গীতে আমি প্রথম একটি ফোক সিনেমায় গান গেয়েছিলাম। তবে তার সুর-সঙ্গীতে আমার প্রথম হিট গান ছিল ‘আঁখি মিলন’ সিনেমার আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে গানটি। এরপর আমি তার সুর-সঙ্গীতে বেলাল আহমেদ পরিচালিত আমার সারা দেহ খেও গো মাটি গানটি গেয়েছিলাম। অবশ্য এই গান যখন রেকর্ড করা হলো তখন আমার কণ্ঠের অবস্থা ভালো ছিল না। কিন্তু তারপরও সেই গানই সিনেমার গল্পের পরিস্থিতির কারণে চ‚ড়ান্ত করা হলো। এই গানও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেল। এরপর অসংখ্য গান গেয়েছি। আমার আরেক বন্ধু প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী শেখ ইশতিয়াকের কথা বিশেষতই বলতেই হয়। কারণ শেখ ইশতিয়াকই আমাকে বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। বুলবুল ভাইয়ের সুর-সঙ্গীতে একসময় যখন রিয়াজ অভিনীত ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ সিনেমার পড়ে না চোখের পলক গানটি গাইতে হলো তখন আমাকে বুলবুল ভাই বুঝিয়ে বলেছিলেন যে রিয়াজের লিপে গানটি যাবে। যেহেতু রিয়াজ তখন একেবারেই যুবক। তাই গানটি তার গলার উপযোগী করেই গাইতে হয়েছিল। বুলবুল ভাই আর আমার মধ্যে সেই বোঝাপড়াটা ছিল যে কীভাবে গাইতে হবে। আমরা এমন গুণী মানুষদের প্রয়াণের পর সাধারণত বলে থাকি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। বুলবুল ভাইয়ের হঠাৎ চলে যাওয়াটা সত্যি সত্যিই অপূরণীয় ক্ষতিই হয়ে গেল। আমরা জাতি হিসেবে খুব দুর্ভাগা জাতি। কারণ বুলবুল ভাইয়ের মতো এমন একজন সঙ্গীত পরিচালকের কাছ থেকে অনেক কিছুই নিংড়ে নেয়ার সুযোগ ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা দুর্ভাগা বলেই তা পারিনি। বুলবুল ভাইয়ের সুর-সঙ্গীতে আমি অসংখ্য প্লে-ব্যাক করেছি। বুলবুল ভাই নিজে গান লিখতেন, তার লেখা গানের প্রতি মায়া কাজ করত বলেই হয়তো এত সুন্দর সুর সৃষ্টি হতো। সাবিনা আপার গাওয়া বুলবুল ভাইয়ের সুর করা সব ক’টা জানালা গানটির কথাই যদি বলি, এই এক গান দিয়েই তিনি বাংলাদেশের বুকে বেঁচে থাকবেন যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, এটা আমি বিশ্বাস করি মনেপ্রাণে। আমি বুলবুল ভাইয়ের অনেক জুনিয়র। আমার স্বামী মইনুল তার খুব ভালো একজন বন্ধু। কিন্তু শুরুতেই আমাকে ভাবি বলেছিলেন বিধায় আমি এরপর বহুবার বলেও তা পরিবর্তন করাতে পারিনি। কত যে স্মৃতি আছে বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে তা বলে বুঝাতে পারব না। কত দিন কত রাত আমরা একসঙ্গে কাজ করে পার করেছি, কত সুন্দর সুন্দর গান সৃষ্টি হয়েছে। সে সবই আমার কাছে আগামী দিনের পথচলার অনেক বড় পাথেয়। বুলবুল ভাই বেঁচে থাকবেন আমার প্রার্থনায়, আমাদের পথচলায়। বুলবুল ভাইদের মতো নিবেদিত সংস্কৃতিকর্মীদের এখনই সঠিক মূল্যায়ন করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App