×

মুক্তচিন্তা

পৃথিবী এখনো লেলিনময়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৮ পিএম

আজ মহামতি লেলিনের ৯৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বঞ্চিত মানুষের নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানিভ (লেলিন) ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল জার শাসিত তৎকালীন রাশিয়ায় সিমর্স্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ল্যা নিকোলয়েভিচ উলিনায়ভ ছিলেন একজন বিদ্যালয় পরিদর্শক আর মা মারিয়া আলেক্সন্ড্রাভনা ছিলেন শিক্ষিকা। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য সাইবেরিয়ার ‘লেনা’ নদীর নামানুসারে তিনি নিজের ছদ্ম নাম রাখেন লেলিন। মজার ব্যাপার হলো লেলিন ছাত্র বয়স থেকেই মার্কসবাদী হলেও তার বাবা ছিলেন একজন কট্টর গণতন্ত্রবাদী। বড় ভাই আলেকজান্ডার ও বোন অ্যানা ইলিচনিনা ছিলেন বিপ্লবী ও সহযোদ্ধা।

১৮৮৬ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের ওপর। এদিকে বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর একই বছরে লেলিনের পরিবারে আসে ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। বড় ভাই আলেকজান্ডার ছিলেন ‘নারোদনায়া ভোলিয়ার’ নামের একটি বিপ্লবী সংগঠনের সভ্য।

এই সংগঠন সিদ্ধান্ত নেয় তৃতীয় জারকে হত্যা করা হবে। গুপ্তচররা বিষয়টা জেনে ফেলে। চার সঙ্গীসহ আলেজজান্ডারকে ফাঁসি দেয়া হয়। তখন লেলিনের বয়স ছিল ১৭ বছর। বড় ভাইয়ের ফাঁসির বিষয়টি তাকে ভয়াবহভাবে নাড়া দেয়। বড় ভাইয়ের প্রভাব পরবর্তী জীবনেও ছিল উল্লেখযোগ্য মাত্রায়।

পরের বছর ১৮৮৭ সালে লেলিন স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। এই বছরের ৪ ডিসেম্বর ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় লেলিনকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করা হয়। ১৮৮৯ সালে তিনি সামারা যান।

সেখানকার তরুণরা ছিলেন বিপ্লবী পাঠচক্রের সদস্য এবং মার্কসবাদের অনুসারী। তিনি সেখানকার স্থানীয়দের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। লেলিন ১৮৯১ সালে সেন্ট পিটার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করে সামারাতে আইন পেশা শুরু করেন।

এর কিছুদিন পর সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে আসেন। এখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় বিপ্লবী নারী নাদেমদা ক্রুপস্কায়ার সঙ্গে। ক্রুপস্কায়া শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে সাম্যবাদ ও বিপ্লবী আদর্শ প্রচার করতেন। ১৮৯৫ সালে লেলিন কারারুদ্ধ হন এবং ১৮৯৭ সালে তাকে পূর্ব সাইবেরিয়ার নির্জন স্থানে নির্বাসিত করা হয়।

এর কিছুদিন পর ক্রুপস্কায়াকেও সেখানে নির্বাসনে পাঠায়। পরবর্তীকালে (১৮৯৮) তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নির্বাসনে লেলিন ৩০টি বই রচনা করেন। যার মধ্যে অন্যতম ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ।’ এই বইয়ে মধ্যে লেলিনের চিন্তা-মনীষা ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনা আমরা দেখতে পাই।

১৯০৫ সালে রাশিয়ায় ঘটে ভয়াবহ এক ঘটনা। সেই বছরের ৯ জানুয়ারি পিটার্সবুর্গে জারের শীতকালীন প্রাসাদে বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সাহায্যের আবেদন নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এর প্রতিবাদে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।

এই সময়ে সারাদেশে শ্রমিক শ্রেণি বিপ্লবী দল গড়ে তোলে। ইতোমধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দেখা দেয়। এই সময়ে লেলিন নানাভাবে বিপ্লবীদের সংগঠিত করতে থাকেন। তিনি এই সময়ে সক্রিয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও বলশেভিক আন্দোলনের প্রধান হিসেবেই ছিলেন বিপ্লবীদের মধ্যে।

১৯১৭ সালে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব, এপ্রিল থিসিস ও অক্টোবর বিপ্লব ধরে এগিয়ে গেল আন্দোলন। বেজে উঠল আন্দোলনের তীব্র গতি। চূড়ান্ত সময়ে ঘোষণা করা হলো শত্রুপক্ষের হামলার নির্দেশ। মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ল বিপ্লবী শ্রমিক আর রেডগার্ডের সৈন্যরা। ২৫ অক্টোবর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিল।

গৃহযুদ্ধ চলল, এক সময়ে যুদ্ধে হার স্বীকার করে নিল জার। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করল বলশেভিক পার্টি। ১৯১৮ সালে জানুয়ারি মাসে লেলিনকে হত্যার জন্য দুদফা গুলি করা হয়। দ্বিতীয়বার এক মহিলা গুলি করেন। প্রথম দফা বেঁচে গেলেও দ্বিতীয়বার গুলি তার হাতে ও চেয়ালে লাগে। সেই গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে নিয়ে গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যান এবং বিজয়ী হন।

চার বছর পর জার্মান চিকিৎসক গুলি অপসারণ করলেও তিনি শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যান। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অতিরিক্ত পরিশ্রম, গুলির ধকল নিয়ে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯২২ ও ১৯২৩ সালে তিনবার হুদরোগে আক্রান্ত হন। শেষদিকে তিনি বাকশক্তিহীন হয়ে পড়েন।

অবশেষে ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি মাত্র ৫৩ বছর বয়সে লেলিন মারা যান। ২৭ জানুয়ারি বিশেষ রাসায়নিকের মাধ্যমে তার মৃতদেহ ‘লেলিন স্মৃতিসৌধে রাখা হয়।’ লেলিনের রাষ্ট্রদর্শন হাজার বছরে পৃথিবীতে টিকে থাকবে।

ফারুক হোসেন চৌধুরী : সহকারী পরিচালক, জনসংযোগ দপ্তর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App