×

জাতীয়

টালমাটাল বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:০৮ পিএম

টালমাটাল বিএনপি
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে, জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবি, নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ভ‚মিকা নিয়ে সন্দেহ, সিনিয়র নেতাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-অবিশ্বাস, জামায়াত ছাড়ার চাপ, নেতাকর্মীদের নামে মামলা ও হয়রানির মুখে টালমাটাল বিএনপি। দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলটির ঐক্য ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। তবে সংকট উত্তরণের পথ বের করে ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে এগিয়ে নিতে দুএকদিনের মধ্যেই স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসবে। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ভরাডুবির পর অনেকটাই মুষড়ে পড়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। দলীয় কর্মসূচি থেকে শুরু করে নিজ এলাকায়ও যাচ্ছেন না তারা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন’ এমন গুঞ্জন এখন দলটির ভেতরে ও বাইরে। যার কারণে মহাসচিবের ফোন ধরছেন না সিনিয়র নেতারা। এ কারণে গত ২ সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করেও স্থায়ী কমিটির বৈঠকের দিন-ক্ষণ ঠিক করতে পারেননি মির্জা ফখরুল। এই সুযোগে আওয়ামী লীগ নেতারাও বিএনপির ‘অস্তিত্ব’ কিংবা ‘ভাঙন’ নিয়ে দুবেলা প্রশ্ন তুলেছেন। তবে গতকাল শুক্রবার সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র নেতারা অংশ নেন যা নির্বাচনের পর এই প্রথম। বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, নির্বাচনের আগে থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে তারা মোটেও সন্তুষ্ট নন। তাদের অভিযোগ, ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ও ঐক্যবদ্ধভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে গতিশীল করতেই ড. কামালের গণফোরামসহ ঐক্যফ্রন্টের অন্য দলের সঙ্গে জোট গঠন করা হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই তারা আলাদাভাবে নিজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। ইশতেহার ঘোষণা থেকে শুরু করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সব কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করেছে। নির্বাচনের দিন তারা অনিয়মের চিত্রগুলো ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারেনি। এখন সর্বশেষ জামায়াত ছাড়ার অহেতুক প্রশ্ন তুলে জোট ভেঙে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতারা যে কৌশলে এগোচ্ছেন তাতে ঐক্যফ্রন্ট না রাখাই ভালো। এর চেয়ে পুরনো ২০ দলীয় জোটের ঐক্য ধরে রেখে নতুন করে দলকে গুছিয়ে আনা জরুরি। সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টে থাকা না থাকা নিয়ে দলের সিনিয়ির নেতাদের মতবিরোধের জের ধরেই গত বৃহস্পতিবার ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে যোগ দেননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অথচ মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আলোচনা করেই ওই দিন ড. কামাল হোসেন তার চেম্বারে বৈঠকের আয়োজন করেন। ওই দিন বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য মির্জা ফখরুল গুলশান থেকে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান টেলিফোনে ফখরুলকে এই বৈঠকে যেতে বারণ করেন, যার ফলে তিনি মাঝপথ থেকে ফিরে যান। সূত্র জানায়, আপাতত বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মসূচিতে যোগ দেবে না। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘোষণাও তারা দেবে না। বরং বিএনপি ২০ দলীয় জোটকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, জামায়াতের ব্যাপারে ড. কামালের কঠোর অবস্থানকে তারেক ও খালেদা জিয়া ভালোভাবে নেননি। খালেদা জিয়া নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানিতে উপস্থিত হয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট ছাড়বে। কিন্তু ২০ দলীয় ঐক্যজোট থেকে বের হবে না। তারেক জিয়াও জামায়াত থেকে বিএনপিকে আলাদা করাকে সরকারি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে জামায়াত নিয়ে যে ইস্যু তৈরি করা হয়েছে, তা আমরা অনভিপ্রেত ও অপ্রাসঙ্গিক মনে করি। এই মুহূর্তে জামায়াত কোনো ইস্যু নয়। কিন্তু জামায়াতের ইস্যুকে বড় করা হচ্ছে, যাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ লাভবান হচ্ছে বলে আমি মনে করি। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে গিয়ে বিএনপির লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঐক্যফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। সেখানে আন্দোলন কতটুকু হয়েছে বা হচ্ছে সেটা নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে বিএনপির। অন্যদিকে নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে অনেক নেতা বের হয়ে যাবে বলে আলোচনা চলছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বেশ কজন বিকল্পধারায় যোগ দিচ্ছেন। বিকল্পধারার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। খুব শিগগিরই বিকল্পধারায় বিএনপি নেতাদের যোগদান দৃশ্যমান হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিকল্পধারার অন্যতম নেতা মাহী বি. চৌধুরী। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিকল্পধারা দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবিভর্‚ত হওয়ার চেষ্টা করবে বলেও জানা গেছে। সূত্র জানায়, নির্বাচনের পর বিএনপিতে মতবিরোধ, দ্ব›দ্ব ও হতাশার পুরো ফায়দা নিতে চায় বিকল্পধারা। বিএনপিতে বি. চৌধুরীর অনুসারী কম নয়। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের পর বি. চৌধুরী বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর মিশনে নেমেছেন। বিগত নির্বাচনে যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও মনোনয়ন বাণিজ্যের জন্য বিএনপিতে যারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন; আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এবং নানা কারণে যারা বিএনপির নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন তাদের অনেকেই বিকল্পধারায় যোগ দিচ্ছেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে বিকল্পধারা চেয়ারম্যানের দুদফা কথা হয়েছে বলে জানা যায়। জামায়াত ইস্যুতে দুজন অভিন্ন মত দিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে। বিএনপির আরেক নেতা ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খানের বিকল্পধারায় যোগদান সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ ছাড়াও জাতীয় নির্বাহী কমিটির যে সব সদস্য দলের জন্য ত্যাগী ছিলেন, অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার পরও তারা মনোনয়ন পাননি এমন অন্তত ৩০ জন নেতা বিকল্পধারায় যোগ দেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App