×

মুক্তচিন্তা

নির্বাচনী যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ এবারে ভাবতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩২ পিএম

কারচুপির অভিযোগ যতই তুলুক তার সুনির্দিষ্ট প্রতিবাদ, উদাহরণহ সংসদের, আদালতে ও জনগণের সমাবেশে তুলে ধরাই হলো আন্দোলনের প্রকৃষ্ট পন্থা-শপথগ্রহণ বা সংসদ অধিবেশন বর্জন নয়।

নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ। এখন অপেক্ষা সংসদের প্রথম অধিবেশন। নিঃসন্দেহে তাও অতিসত্বর অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে হয়তো মহিলা আসনে ৫০ জন সদস্য মনোনীত হবেন। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন প্রার্থীরা।

আমাদের শাসকরা সম্ভবত নির্ধারিত ৫০টি আসনে মহিলাদের সরাসরি নির্বাচন অপছন্দ করেন কারণ তাতে প্রত্যাশা অনুযায়ী দলীয় শক্তি বৃদ্ধি নাও পেতে পারে। তবুও চাইব, আগামীতে যেন আমরা মহিলাদের আসন ১০০ তে উন্নীত হতে এবং সাধারণ আসন ৩০০ থেকে ৪০০ তে (জনসংখ্যার বিপুল বৃদ্ধির কারণে উন্নীত করে মোট ৫০০ আসনেই সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে।

সত্য বটে এবারের নির্বাচন অনেক জায়গায় ভোটের দিন কুৎসিত কারচুপি হয়েছে- যা আদৌ কাম্য ছিল না। সন্দেহ নেই, নানা যৌক্তিক কারণেই বিএনপিসহ ছোট বড় সব বিরোধী দল ও জোটের নির্মম পরাজয় ঘটেছে। তাই তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী ছিল নানা কারণে তবে ঠিক এমন করুণদশা কখনো কাম্য ছিল না। বিএনপির এতগুলো আসনে এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটের এতগুলো প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রত্যাশিত ছিল না।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের করুণ পরাজয়, প্রার্থীদের বিপুল সংখ্যা, সংগঠন ও প্রার্থীদের সাংগঠনিক শক্তির অভাব থাকায় জনসাধারণের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সম্পর্ক বহুকালেও গড়ে না ওঠা, নানাবিধ অপপ্রচার, সময় থাকতে নির্বাচনী প্রার্থীদের নিয়ে মাঠ-ঘাট চঞ্চল করে না তোলা, অর্থাভাব এবং সর্বোপরি জোটের অভ্যন্তরেও লুকিয়ে থাকা কখনো বা প্রকাশ্যে আসা বিতর্ক-মতানৈক্য সহানুভূতিশীল অনেককে বিভ্রান্ত করেছে। কোথাও কোথাও দলগুলো ঐকমত্যে না এসে সবারই জামানত খোয়ানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

সর্বাধিক ক্ষতিকর কাজটি হয়েছে এতগুলো প্রার্থী দাঁড় করিয়ে। তাদের নিজ নিজ পৌর এলাকায় কি উপযুক্ত সংগঠন ছিল? বা উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে? ছিল না অবশ্যই। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে- ফলে আশঙ্কা করি ব্যাপক হতাশা নেমে এসেছে কর্মীদের মধ্যে দেশব্যাপী।

জোটকে প্রসারিত করার জন্যও কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। আমি লিখেছি শুধুই কমিউনিস্ট ঐক্যের পরিস্থিতি এখনো আসেনি। এটা সাম্প্রতিক অতীতের পশ্চিম বাংলা বা ত্রিপুরাও নয়। কাজেই বাংলাদেশে প্রয়োজন ব্যাপকতম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ঐক্য যাতে বামেরা থাকবেন, অন্য প্রগতিশীল শক্তিরা থাকবেন আর থাকবেন গণতন্ত্রী উদার গণতন্ত্রীরা।

ওরাও খারাপ এরাও খারাপ না বলে যারাই খারাপ তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও নির্বাচনী ঐক্যের প্রয়োজন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটাই হতো সঠিক কৌশল যা মৌলিক নীতিগুলো বাস্তবায়নে সহায়ক।

কৃষক, শ্রমিক, নিম্ন -মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাও যে কারণে, ন্যায্য মজুরির অভাবে ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে রীতিমতো অস্থিরতায় ভুগছে। সংগঠন ও আস্থাভাজন নেতৃত্বের অভাবে বড় কোনো আন্দোলনের ডাকও দেয়া যাচ্ছে না।

তাই শুরু করা প্রয়োজন মানববন্ধন, দোকানে দোকানে বাড়িতে বাড়িতে ছোট ছোট লিফলেট হাতে হাতে হাটে-বাজারে-দোকানে বাড়িতে বিতরণ ও পরবর্তী সময় দেশব্যাপী পোস্টার। এরপর মিছিল সমাবেশ ভারতের মতো। কঠিন পরিস্থিতিতে আদায় যোগ্য দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খলভাবে হরতাল তবে তার আগে সর্বত্র কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য।

বাংলাদেশের বামপন্থিদের অনেকের বক্তৃতা বিবৃতিতে ধারণা জন্মায়, যেহেতু বুর্জোয়ারা মেহনতি মানুষের দুশমন তাদের শোষক তাই এক্ষুনি তাদের উচ্ছেদ সাধন করে এ দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু গরিব মানুষেরা তো বুর্জোয়া শাসিত দেশগুলোতে নানা কারণে মূলত শিক্ষা ও চাকরির জন্য যেতে উদগ্রীব।

ব্যক্তিগতভাবে আমি বার পাঁচেক অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি সেখানকার সিডনি শহরে থেকেছি। ওই শহরে সাবেক ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন করা অনেকে স্থায়ীভাবে আছেন- তবে তারা সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ ছাড়া অন্য কিছুতে নেই। ও দেশের শাসনটা বুর্জোয়াদের হাতে- তা সে যে দলেরই হোক না কেন? তবে তুলনামূলকভাবে লেবার পার্টি অনেকটা গণমুখী হওয়ায় এশিয়ানরা ব্যাপকভাবে লেবার পার্টি অনুসারী।

কেউ কেউ ওই পার্টিতে যোগও দিয়েছেন- স্থায়ীভাবে নেতৃত্বেও এসেছেন। যা হোক, অস্ট্রেলিয়ার পুঁজিপতিরা বৃহৎ পুঁজিপতি। তাদেরই রাজত্ব। সেখানে অতীতে কমিউনিস্ট পার্টি থাকলেও আজ আর তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না মিউজিয়াম ছাড়া। আমি অবশ্য মিউজিয়ামে গিয়ে খোঁজ করতে চাইলেও তা করিনি। যা হোক অস্তিত্বকালীন অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলেছিল এক শিল্প এক ইউনিয়ন এই নীতিতে।

দরকষাকষির অনুকূলে ভালো শক্তিও অর্জন করেছিল এবং তাই শক্তিশালী আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমজীবীদের জন্য ন্যূনতম মজুরি স্বীকৃত হয় প্রতি ঘণ্টায় ২০ ডলার। এর প্রয়োগ সর্বত্র। ন্যূনতম হওয়ায় বাড়তি মজুরিও কোনো কোনো শিল্পে শ্রমজীবীদের দেয়া হয়। বেকার নেই সে দেশে। যদি কিছু থাকেও তাদের বিস্তর বেতন-ভাতাদি দেয়া হয়।

এক পরিবারে তিনজন বেকার থাকলে তিনজনই বেকার ভাতা দেয়া হয় যা দিয়ে তারা বাড়ি-গাড়িও করতে পারে। কিন্তু এ সুযোগ পাওয়ার অধিকারী শুধু সে দেশের নাগরিকরা। বিদেশি অস্থায়ী ভিজিটররা নন। তাদের ও তাদের সন্তান-সন্তুতি সবার জন্যই শিক্ষা-চিকিৎসা পরিপূর্ণভাবে ফ্রি।

যখন বললাম, একটি মিলনমেলা ডাকুন সব ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সদস্যরা একত্রে বসে একটা সংগঠন গড়ে তুলি অস্ট্রেলিয়া শাখা হিসেবে- এক নাগাড়ে সবাই বলে উঠলেন আঙ্কেল বা দাদু, এখানে আমরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি তা তো সমাজতন্ত্রের চাইতে কম নয়।

শোষণ এখানে থাকলেও কোনোভাবেই তা বুঝার উপায় নেই কারণ যেসব সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্র আমাদের দেয়, সোভিয়েত ইউনিয়নেও প্রায় একই সুযোগ-সুবিধা ছিল বরং মধ্যবিত্তের উপার্জন এখানকার চেয়ে ওখানে সম্ভবত; কমই ছিল- শ্রমিকদের মজুরির ক্ষেত্রে তো তা সত্য ছিল বটেই।

এখানে নিম্নতম মজুরি প্রতি ঘণ্টায় ২০ ডলার কিন্তু আমেরিকাতে এখনো তা সাত ডলার মাত্র। তাই আমরা কোনো সংগঠন করিনি করতে আগ্রহীও নই। বললাম, কোনো দাবিতে নাই বা হলো কিন্তু সমমনারা মাঝেমধ্যে বসে দেশ নিয়ে, দেশের আমাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার জন্যও তো একটা সংগঠন থাকলে ভালো হয় কিন্তু সাড়া তেমন একটা না পাওয়াতে সেটা আর করা গেল না।

সুতরাং এ ব্যাপারে শেষ কথাটি হলো এক্ষুনি পুঁজিবাদ নিপাত যাক-কৌশলগতভাবে এ কথা না বলে আমরা যদি মেহনতি মানুষদের দাবিগুলো যথার্থভাবে তুলে ধরি সেটাই যুগোপযোগী এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ইস্যু হতে পারে- অধিকতর সংখ্যক মানুষকে আকৃষ্টও করা যেতে পারে।

আর এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে নিংসন্দেহে বলা যায়, জামায়াত, হেফাজত বর্জনের দাবি জোরেশোরে তোলা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলবাজি, হেফাজত প্রীতির বিরুদ্ধে ঐক্য অবশ্যই আন্তরিক প্রচেষ্টাও উদ্যোগ নিলে ড. কামাল হোসেন ও অপরাপর গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তিকে একটি.... শক্তিতে পরিণত হতে পারতাম।

সে উদ্যোগ তখন নিলে অনেক বেশি উপকার হতো। কিন্তু সময় এখনো আছে। আমার মতে বিএনপিকেও এই জোটে নেয়া ভালো যদি তারা তাদের ২০ দলীয় উগ্র দক্ষিণপন্থি শক্তিগুলোকে ছেড়ে আসতে রাজি হয়। একদিকে সরকারের ওপর জামায়াত হেফাজত নিষিদ্ধ করার দাবি জোরদার করা- অপরদিকে বিএনপি থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন বা সংযোগ ছিন্ন করার চেষ্টা করা জাতীয় স্বার্থে, সংবিধানের মূলনীতিগুলো অবিকল উদ্ধার করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

এবং সে কাজটির জন্য বর্তমানকালে ড. কামাল হোসেন ছাড়া ভিন্ন কাউকে ভাবা যায় না। তার নেতৃত্বে অনেক প্রখ্যাত আইনজীবী ও বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আস্থার সঙ্গেই আজো সমবেত হবেন বলে বিশ্বাস করি। পাকিস্তানি ধারা আমাদের রাজনীতিতে যেভাবে বেঁকে বসেছে তাতে এ ছাড়া উত্তম কোনো বিকল্প দেখি না।

সত্য বটে, ড. কামাল হোসেনের সাম্প্রতিক ভূমিকা বেশ কিছুটা বিতর্কিত হয়েছে। আবার তাকে প্রগতিশীল ধারায় সম্পৃক্ত রাখার ব্যাপারে আমাদের অনেকে যে উন্নাসিকতা ও নেতিবাচকতাও ভূমিকা পালন করেছে- তাও কম সত্য নয়। তিনি চাননি তবু ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের চাপেই ধানের শীষ প্রতীক ঐক্যফ্রন্টের প্রতীকে পরিণত হয়। উচিত ছিল গণফোরাম প্রার্থীদের ‘উদীয়মান সূর্য’ এবং বিএনপি বাদে বাদ বাকি দলগুলোরও নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা।

ড. কামাল হোসেনের স্পষ্ট অভিমত ছিল, ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতে ইসলামী থাকবে না কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল গণফোরাম, রব জাসদ, মান্নার দল ও বিএনপি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ড. কামাল হোসেনের দাবি সবাই মেনে নিলেন। কিন্তু হঠাৎ ২০ দলীয় উগ্র দক্ষিণপন্থি জোটের পৃথক সভা করে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীকে ধানের শীষ প্রতীক দিল।

এটা সুস্পষ্টভাবেই ঐক্যফ্রন্টের গৃহীত নীতিমালা লঙ্ঘন। এই ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হবে জানলে আমি ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতাম না।’ এতে স্পষ্টতই বুঝা যায় বিএনপি আসলে প্রতারণামূলকভাবে এমন সিদ্ধান্ত ঐক্যফ্রন্টের মূল নেতাকেও না জানিয়ে গ্রহণ ও কার্যকর করেছে।

হ্যাঁ, ড. কামাল হোসেন এটা জানার পর ঐক্যফ্রন্ট থেকে পদত্যাগ করে বেরিয়ে আসতে পারতেন কিন্তু সম্ভবত শেষ মুহূর্তে তার তেমন পদক্ষেপ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচনী বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে- এই রকমটাই আমার ধারণা। এখন এর মর্যাদা আগামীর ও বর্তমানের রাজনীতিতে বিএনপি দেবে কিনা তা তারাই জানে।

আবারো ভুল করবে বিএনপি? বিএনপির নির্বাচনী ফলাফলে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হওয়ার ও এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার সঙ্গত কারণ আছে। তাই ঐক্যফ্রন্ট ও তারা একযোগে এই নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ও সরকার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তবে একটি কথা স্পষ্টতই বলা দরকার, কারচুপির অভিযোগ যতই তুলুক তার সুনির্দিষ্ট প্রতিবাদ, উদাহরণহ সংসদের, আদালতে ও জনগণের সমাবেশে তুলে ধরাই হলো আন্দোলনের প্রকৃষ্ট পন্থা-শপথগ্রহণ বা সংসদ অধিবেশন বর্জন নয়।

সংসদের ভেতরে বাইরে আন্দোলন চালাতে হবে, তাতে জনসম্পৃক্তি ঘটাতে হবে ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এবং সেভাবেই জনমত সঙ্গে আনা যেতে পারে-অন্য যে পথ তা হলো সন্ত্রাসী পথ-গণতন্ত্র-বিরোধী পথ এবং এ কথা আগেই প্রমাণিত ওই পথে সাফল্য আসবে না।

রণেশ মৈত্র : রাজনীতিক ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App