×

জাতীয়

পদ্মাপাড়ে নতুন বিমানবন্দর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:২৮ এএম

পদ্মাপাড়ে নতুন বিমানবন্দর

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্ভাব্য নকশা -ভোরের কাগজ

দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি পদ্মার ওপারেই করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের দুটি স্থানকে চ‚ড়ান্ত উপযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো একটি স্থানকে বেছে নেয়ার পরপরই বহুল প্রত্যাশিত এ বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ২০১৬ সালে ২৭টি স্থানকে প্রাথমিক বিবেচনায় নিয়ে বিমানবন্দরের স্থান নির্বাচনের সমীক্ষা শুরু করে জাপানের নিপ্পন কোয়ি কোম্পানি লিমিটেড। সেখান থেকে দুটি স্থানকে চ‚ড়ান্ত করে ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয় কোম্পানিটি। কিন্তু এই বিমানবন্দরের জন্য বিশাল এলাকা অধিগ্রহণ করতে গিয়ে ভোটের মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় তখন শুরু করা হয়নি এর নির্মাণকাজ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন সেই প্রকল্পই গুরুত্ব পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী গতকাল মঙ্গলবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি আরো নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এভিয়েশন হাব হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে। সেটি পদ্মা সেতুর কাছাকাছি হচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, জাপানের নিপ্পন কোয়ি কোম্পানি লিমিটেডের সমীক্ষা অনুযায়ী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের দুটি স্থানকে চ‚ড়ান্তভাবে উপযুক্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে এসডব্লিউপি-২ নামে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় একটি এবং এসডব্লিউপি-৩ নামে মাদারীপুরের শিবচর (চর জানাজাত) ও শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকা মিলিয়ে অন্যটির স্থান চিহ্নিত করা হয়। এ দুটি স্থানের মধ্যে যে কোনো একটিকে চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তৎকালীন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত মাদারীপুরের একজন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার আপত্তির কথা তুলে ধরেন। বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষে তিনি অবস্থান নিলেও নির্বাচনের আগে তার এলাকায় এটি করার ক্ষেত্রে আরো বিশদভাবে বিবেচনার দাবি তোলেন তিনি। ২০১০ সালে মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ বন্ধের দাবিতে স্থানীয়দের বিক্ষোভের কথা তুলে ধরেন তিনি। একই ধরনের আপত্তি এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছিলেন বিমানবন্দরের জন্য সম্ভাব্য তালিকায় থাকা এলাকার আরো দুই সাংসদ। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর এটি করা হলে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য তা আরো ভালো ফলাফল বয়ে আনবে বলে উল্লেখ করেন তারা। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী স্থানটি চূড়ান্ত না করে পরবর্তী বিবেচনার জন্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেবিচকের উপস্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্থান নির্বাচন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানের নিপ্পন কোয়ি কোম্পানি লিমিটেডকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ কিলোমিটার প্রস্থের বিমানবন্দর এলাকার জন্য প্রথমে ২৭টি স্থানকে প্রাথমিক বিবেচনায় এনে কাজ শুরু করে। ঢাকা থেকে দূরত্ব, জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের ধারা, জাতীয় মহাসড়ক থেকে দূরত্ব প্রভৃতি বিবেচনায় এনে সেখান থেকে ১০টি স্থানকে পরবর্তী তালিকায় আনা হয়। এরপর এয়ারস্পেস, ভূমির প্রাপ্যতা, দুর্যোগের ঝুঁকি, প্রকল্প খরচ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় এনে তালিকা আরো ছোট করে ৩টিতে নামিয়ে আনা হয়। ওই তিনটির মধ্যে মানিকগঞ্জের আটিগ্রাম, সিংগাইরের তালিবপুর ও ধামরাইয়ের শুয়াপুর এলাকাগুলো মিলিয়ে বিমানবন্দরের জন্য এনডব্লিউ-১ নামে একটি স্থান চিহ্নিত করা হয়। দ্বিতীয়টি এসডব্লিউপি-২ নামে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর, মাহমুদপুর, চিকনদি, দোমাসার, চন্দ্রপুর, তুলাসর ও চিতলিয়া ইউনিয়নে এবং তৃতীয়টির স্থান নির্বাচন করা হয় এসডব্লিউপি-৩ নামে মাদারীপুরের শিবচরের উমেদপুর, দ্বিতীয়কান্দা, কাদিরপুর, কুতুবপুর এবং জাজিরার বড় গোপালপুর, সেনেরচর এবং বড় কৃষ্ণনগর ইউনিয়নজুড়ে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে আকাশপথে বিমান ওঠানামার নিরাপদ দূরত্ব কম থাকায় মানিকগঞ্জকে পরে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বাকি দুটি স্থানের তালিকা চ‚ড়ান্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় নিপ্পন কোয়ি। প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, শরীয়তপুরে বিমানবন্দরটি করতে গেলে ৮ হাজার ৬৫০টি পরিবারকে তাদের বসতভিটা থেকে স্থানান্তর করতে হবে। স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দিরসহ স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে ১৫০টি। আর ১ হাজার ৫৬ একর আবাসিক ও ২৭ হাজার একর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে এ স্থানের দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার। অন্যদিকে শিবচর অংশে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করতে ৮ হাজার ৪৮০টি পরিবারকে স্থানান্তর করতে হবে। স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে ১০০টি। আর ১ হাজার ২২২ একর আবাসিক ও ২৬ হাজার ৭৫ একর কৃষিজমি বিমানবন্দরের জন্য নিতে হবে। জিরো পয়েন্ট থেকে এখানকার দূরত্ব ৫৯ কিলোমিটার। এই দুই স্থানের ৯০ ভাগ জমিই ব্যক্তি মালিকানাধীন। মাত্র ১০ ভাগ জমি সরকারি বা খাস রয়েছে। এ দুটি স্থানের মধ্যে চূড়ান্ত মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ১৩টি বিষয় র‌্যাঙ্কিং করে নিপ্পন কোয়ি। এর মধ্যে দুটি স্থানকেই শাহজালালের সঙ্গে আকাশসীমার নিরাপদ দূরত্বে তিন তারকা বা সম্পূর্ণ নিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যান্য মূল্যায়নেও পাশাপাশি অবস্থান করে স্থান দুটি। ফলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ওপরই চ‚ড়ান্তভাবে নির্ভর করতে হয় তাদের। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করার বিষয়টি ছিল আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতিহারের ১৫-এর ৬ দফায় বলা হয়, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংযোগস্থল হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। এ ধারণাটি মূলত খোদ প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাপ্রসূত। তাই টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পরপরই বিমানবন্দরটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় কাজ শুরুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় মন্ত্রণালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App