×

জাতীয়

যশোরে ব্যতিক্রমী মানবিক উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৩:৪২ পিএম

যশোরে ব্যতিক্রমী মানবিক উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া
যশোরে ব্যতিক্রমী মানবিক উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া
যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটনায় ‘শীত নিবারণ বৃক্ষ’ নামে একটি গাছ স্থাপন করা হয়েছে। এ বৃক্ষের থিম হলো, ‘সচ্ছল মানুষের ব্যবহৃত পুরনো কাপড়ে হতদরিদ্রের শীত নিবারণ’। বনিফেস নামে একটি ফেসবুক গ্রæপ এই মহতী উদ্যোগে নিয়েছে। ব্যতিক্রমী মানবিক এ উদ্যোগটি ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ গ্রুপের উদ্যোক্তা বেলাল হোসেন বনি নামে এক যুবক ও তার সহপাঠীরা। দেখা যাচ্ছে, এ শীত নিবারণ বৃক্ষের ডালে শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের ব্যবহৃত ‘অপ্রয়োজনীয়’ কাপড় ঝুলিয়ে রেখে যাচ্ছেন। সেখান থেকে শীতার্ত মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিচ্ছেন তাদের পছন্দের কাপড়। এ শীত নিবারণ বৃক্ষে কেউ দিয়ে খুশি, আবার অনেকে পেয়ে খুশি হচ্ছেন এমটাই দেখা গেছে। বেলাল হোসেন বনি জানান, গত ২৪ নভেম্বর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় ‘শীত নিবারণ বৃক্ষ’ স্থাপন করা হয়। গত প্রায় দেড় মাসে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। শীতের শেষ পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় আমরা মুগ্ধ। তাদের ব্যবহৃত ‘অপ্রয়োজনীয়’ কাপড় শীতার্তদের জন্য দান করতে পেরে যেমন খুশি হচ্ছেন, তেমনি শীতার্ত ছিন্নমূল মানুষও বেজায় খুশি। তিনি আরো জানান, অনেক প্রতিষ্ঠান শীতার্তদের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন শীতের শেষে। এতে প্রকৃতপক্ষে ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট লাঘব হয় না। বিষয়টি আমাদের নাড়া দেয়। এরপর বনিফেস নামের ফেসবুক গ্রুপে আমরা সিদ্ধান্ত নেই শীতার্তদের জন্য কিছু করার। এরপর সিরাজুল ইসলাম মৃধা, জাহিদুল ইসলাম জাদু, আল মামুন শাওন, তানভীর রহমান, মোহাম্মদ জুয়েল, এ কে সুমন, আশিকুর রহমান শিমুল, আসাদুজ্জামান শাওন, রাজু আহমেদ, আকাশ, মিলন, রাজ মিম ও ফাতেমা বিনতে আফরিন মিলে আলোচনা করে ‘শীত নিবারণ বৃক্ষ’ থিমটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমাদের গ্রুপে ৩০ জন সদস্য রয়েছেন বলে তিনি জানান। বেলাল হোসেন বনি বলেন, শুরুতে অনেকে এটি নিয়ে ব্যঙ্গ করেন। কিন্তু পরে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। শীত নিবারণ বৃক্ষের প্রধান সহায়ক সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের দানেই হতদরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে তাদের ব্যবহৃত পোশাক দান করছে। তবে দাতাদের বেশির ভাগ নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক। অনেকে রাতের আঁধারে শীত নিবারণ বৃক্ষের ডালে পোশাক রেখে যাচ্ছেন।   সরেজমিন দেখা যায়, যশোর শহরের জিরো পয়েন্ট দড়াটানায় দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটির গায়ে কাঠের ফ্রেমে প্যানাসাইন টাঙানো। তাতে জলছাপায় বস্তা জড়িয়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকা একটি শিশুর ছবি। তার ওপর একটি গাছের ছবি। নিচে লেখা, ‘আপনার অপ্রয়োজনীয় বস্ত্র বস্ত্রহীনদের জন্য এখানে দান করুন’, ‘দরিদ্র বস্ত্রহীনরা এখান থেকে বিনামূল্যে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করুন।’ সাইনবোর্ডের সামনে মাটিতে পোঁতা একটি গাছের ডাল। এর শাখা-প্রশাখায় ঝুলছে পোশাক। এটিই ‘শীত নিবারণ বৃক্ষ’। এখানে এসে দেখা মেলে সাতক্ষীরার রুবিনা বেগম নামে এক মহিলার। তিনি যশোর শহরের দড়াটানায় ভিক্ষা করেন। মেয়ে মর্জিনার চার মাস বয়সে তাদের ফেলে উধাও হন রুবিনার স্বামী জাহাঙ্গীর। বাড়ির অবস্থা করুণ হওয়ায় পথে নেমেছেন রুবিনা। যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুরে ভাড়া থাকেন। তিনি বললেন, ‘ঘর ভাড়া দেয়ার পর ভিক্ষার টাকায় তিনজনের ঠিকমতো খাবারই জোটে না, গরম কাপড় কিনব কেমনে? বিনা খরচে গরম কাপড় পেয়ে বড় ভালো হলো। আমার বাচ্চা দুটোর আর শীতে কষ্ট পেতে হবে না।’ ফারুক নামে এক বৃদ্ধও ভিক্ষা করেন। তিনিও ডালে ঝোলানো একটি গরম সোয়েটার পাড়লেন। সোয়েটারটি নিয়েছেন স্ত্রীর জন্য। বললেন, ‘বাবা, বউ শীতি কষ্ট পায়। এইডে গায় দিলি বুড়ি শীতির কামড়েত্তে বাঁচপেনে। টাকা দিয়ে এইরাম জিনিস কিনতি পারতাম না।’ যশোর জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষক মুনিরুজ্জামান নিয়ে এসেছেন দুই ব্যাগভর্তি ছোট-বড় চল্লিশটির বেশি পুরনো পোশাক। কিছু পোশাক গাছের ডালে, বাকিগুলো বৃক্ষের সামনে রাখা দুটি কার্টনে রাখলেন। তিনি বলেন, বিষয়টি দেখে ভালো লেগেছে। এই পোশাকে একটি মানুষ বা একটি শিশু গরম থাকবে, সেটিই বড় আনন্দের। কাপড় দিতে আসা আর একজন চৌগাছা পৌরসভার প্রধান অফিস সহকারী আক্তারুজ্জামান তুহিন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শীত নিবারণ বৃক্ষের খবর পেয়েছি। তারপর নিজে এসে দেখেছি। উদ্যোগটি ভালো লেগেছে। এ জন্য নিজেও দান করেছি। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন এখানে অসংখ্য মানুষ কাপড় জমা দিচ্ছেন। আবার অনেকে নিয়ে যাচ্ছেন। দৃশ্যটি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি নিজের ব্যবহৃত পোশাক দান করেছি। এমন মানবিক উদ্যোগ সবখানে ছড়িয়ে দেয়া উচিত। এ সংগঠনের একজন সদস্য কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম মৃধা বললেন, পুরনো গরম কাপড় ব্যবহার না করলেও অনেকে বাড়িতে রেখে দেন। ওই কাপড়গুলো বিক্রি করলেও সামান্য টাকা পাওয়া যায়। এ ধরনের শীতবস্ত্র যদি এখানে জমা পড়ে তাহলে যাদের কেনার সামর্থ্য নেই, তারা এখান থেকে পোশাক নিয়ে শীতের প্রকোপ থেকে রেহাই পাবেন। এই বিষয়টি চিন্তায় নিয়ে আমরা এ সিদ্ধান্ত নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App