×

জাতীয়

উত্তরাঞ্চলে বাড়ছে শীতের তীব্রতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:১০ পিএম

উত্তরাঞ্চলে বাড়ছে শীতের তীব্রতা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্রমশ অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে আবহাওয়ার আচরণ। দেশে শীত ও গরমকাল যেমন দীর্ঘ হচ্ছে তেমনি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যও বেড়ে চলেছে। গত কয়েক বছরে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশেষ করে সম্প্রতি তীব্র শীতের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে গোটা উত্তর জনপদ। গত বছরের শুরুতেই অর্ধ-শতাব্দীকালের রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বেশি শীত অনুভ‚ত হয়েছে সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। ভয়াবহ শীতের কারণে প্রাণহানি ও ব্যাপক ফসলহানির ঘটনাও ঘটে। এবারো বছরের শুরুতেই পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। এ ছাড়া উত্তরের বেশ কয়েকটি জেলাতেও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে ওঠানামা করছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের সূত্রমতে, বর্তমানে দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ১৫টি জেলায় চলছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে আরো কয়েক দিন। তবে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। শীতের তীব্রতাও কমে আসতে পারে। আবার চলতি জানুয়ারিতে কয়েক দফায় আবারো কমে যেতে পারে তাপমাত্রা। তাতে আরো দুয়েকটি শৈত্যপ্রবাহের মুখোমুখি হতে পারে গোটা দেশ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে উত্তরের জেলাগুলোতে। বিশেষ করে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আবারো ৫ ডিগ্রির নিচে নামতে পারে তাপমাত্রা। উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই এ অঞ্চলে আগাম শীত পড়তে দেখা যাচ্ছে। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে শীত পড়ার কথা থাকলেও অক্টোবরের শুরুতেই শীতের আগমন ঘটছে। ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে হালকা কুয়াশা ঢেকে ফেলছে বিস্তীর্ণ জনপদ। সদ্যবিদায়ী বছরেও এমন প্রবণতা দেখা গেছে। এবার শীত নামতে দেখা গেছে অক্টোবরেই। এমন পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোটা দেশসহ উত্তরাঞ্চলেও শীতকালে ব্যাপক হারে বোরো চাষ করা হচ্ছে। আর নদ-নদী, খাল-বিল ভরে ওঠার কারণে খুব সামান্যই ব্যবহার করা যাচ্ছে ভ‍ূ-উপরস্থ পানি। মূলত বোরো চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উত্তোলন করা হচ্ছে ভ‚গর্ভস্থ পানি। এতে গোটা উত্তরাঞ্চলের ভূ-পৃষ্ঠ শুষ্ক হয়ে পড়ছে। এর ওপর খরা আর অতিবৃষ্টির প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে আবহাওয়ার বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। জানতে চাইলে উত্তর জনপদে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ আর এম তৌফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব উত্তরাঞ্চলেও দেখা যাচ্ছে। তবে তা খুব ধীরগতির। এ কারণেই আবহাওয়া অস্বাভাবিক আচরণ করছে। খরা আর অতিবৃষ্টির প্রবণতা যেমন বাড়ছে তেমনি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যও দিন দিন বাড়ছে। এতে উত্তরে শীতের তীব্রতাও বাড়ছে। সূত্রমতে, গত ২০১৭ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে রেকর্ড করা তাপমাত্রা ছিল ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। তবে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তাপমাত্রা নেমে আসে ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যেটা ছিল অর্ধ-শতাব্দীকালের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় রেকর্ড করা হয় ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে গতকাল রবিবার ঢাকা আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রামের টেকনাফে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন উত্তরের ১৬ জেলার গড় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়ামের মধ্যেই ওঠানামা করেছে। পাশাপাশি মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ রহিদুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ের আকাশে যেমন মেঘ নেই তেমনি কুয়াশাও কেটে গেছে। উত্তর থেকে কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। এ কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। আজ (গতকাল) রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। রংপুর বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত নভেম্বর বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে আগাম শীত নেমেছে। জানুয়ারি মাসে এমনিতেই কম তাপমাত্রা থাকে। তবে গত কয়েক বছর ধরে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য বাড়তে দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে শীতকালে উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে দেশের ১৫ জেলায় মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে স্বাভাবিক হতে পারে। তবে আবারো তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। এ মাসে এমন শৈত্যপ্রবাহ আরো হতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App