×

অর্থনীতি

সড়ক যোগাযোগ আধুনিকায়নে বিস্তৃত হচ্ছে বিআরটি প্রকল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০৫:০০ পিএম

সড়ক যোগাযোগ আধুনিকায়নে বিস্তৃত হচ্ছে বিআরটি প্রকল্প
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের সড়ক যোগাযোগ আধুনিক, দ্রæত এবং আরামদায়ক করতে চলছে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ। গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট শীর্ষক এ প্রকল্পের কাজ বিস্তৃৃত করা হচ্ছে মহাখালী পর্যন্ত। একইসঙ্গে এর আওতায় বিমানবন্দরের সামনে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক আন্ডারপাস। আশকোনা ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে এই আন্ডারপাস নির্মাণ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূূত্র জানায়, নর্থ বিআরটি নামে পরিচিত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট, যেখানে যানজটে পড়লে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। কর্মকর্তারা বলছেন, ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্প এখন টেনে নেয়া হবে মহাখালী পর্যন্ত, যাতে গাজীপুর থেকে মহাখালীগামী যাত্রীদের যাতায়াতও সহজ ও দ্রুত হয়। তা ছাড়া আশকোনা কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিমানবন্দরে ঢোকার সময় দেখা যায় অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আন্ডারপাস হতে পারে আশীর্বাদস্বরূপ। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটিএ লেন হচ্ছে। এটি চালু হলে ২০ মিনিটেই গাজীপুর থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছানো যাবে। আমরা এই প্রকল্পটিকে মহাখালী পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিমানবন্দর থেকে মহাখালী গুরুত্বপূর্ণ একটা রুট। আর বিমানবন্দরে আমরা একটা আধুনিক আন্ডারপাস নির্মাণ করব। দেখা যায়, অনেক মানুষ সেখানে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, যানজট নিরসনে রাজধানীর সড়ক পরিবহন সেক্টরে স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) সংশোধন করা হয়েছে। প্রথমে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এই রুটের দৈর্ঘ্য ছিল ২০ দশমিক ২০ কিলোমিটার। এখন এই রুট হচ্ছে গাজীপুর-বিমানবন্দর-মহাখালী-গুলিস্তান-ঝিলমিল পর্যন্ত। রুটের দৈর্ঘ্য বেড়ে হয়েছে ৪২ কিলোমিটার। আপাতত মহাখালী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে। পরবর্তী সময় বৈদেশিক ঋণ পাওয়া গেলে বাকি কাজ শুরু করবে সরকার। কর্মকর্তারা জানান, বিআরটি লেনে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত অংশটি অন্তর্ভুক্ত করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। এই অংশে ৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি সময় থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালের মধ্যেই বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হবে। এই অংশে বিআরটি লেন নির্মাণের জন্য আর্থিক প্রাক্কলন সংশোধন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক কাজগুলো- যেমন সামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনীয় পরামর্শকও নিয়োগ দেয়া হবে। গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। আধুনিক ও দ্রুত বাস পরিষেবা দেয়ার লক্ষ্যে গৃহীত এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। তখন এ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সে সময় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। নতুন করে মহাখালী পর্যন্ত অংশ যুক্ত হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ যেমন বাড়ছে, বাড়ছে ব্যয়ও। সরকারের পাশাপাশি এই প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসি দাতা সংস্থা এএফডি ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) অর্থায়ন করছে। প্রকল্প অগ্রগতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, বিআরটির আওতায় ৬টি ফ্লাইওভারের ৫ শতাংশ ও উড়াল সড়কের ১০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে। তবে ৬৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বাস-ডিপোর কাজ। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নির্মাণের কাজ ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং লিংক রোডের ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে চলাচলকারী বাসগুলো নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া কোথাও থামবে না। মহাখালী পর্যন্ত অংশ যুক্ত হওয়ার আগে কথা ছিল, দুই প্রান্ত অর্থাৎ গাজীপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে থাকবে দুটি মূল টার্মিনাল। আর মাঝপথে হবে ২৫টি স্টেশন। প্রতি দুই থেকে ৫ মিনিট পরপর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে। এ সার্ভিসে ভাড়া আদায় হবে স্মার্ট কার্ডে। তবে মহাখালী পর্যন্ত অংশ যোগ হওয়ায় মূল টার্মিনালের একটি গাজীপুরে হলেও আরেকটি হবে মহাখালীতে। যানজট নিরসনে বিআরটি বিশ্বব্যাপী এণ্টিড স্বীকৃত ব্যবস্থা। বিআরটি লাইসেন্স ছাড়া এ রুটে কেউ বাস চালালে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে আইনে। এ ছাড়া আইনের কোনো বিধান কেউ লঙ্ঘন করলে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়ার বিধানও রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App