×

জাতীয়

জাতীয় নির্বাচনে জামানত হারানোর নতুন রেকর্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:০৮ পিএম

জাতীয় নির্বাচনে জামানত হারানোর নতুন রেকর্ড
একাদশ সংসদ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীই রয়েছেন অন্তত ১৬৩ জন। এবারের নির্বাচনে ৩৯টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৬১ জন। এদের মধ্যে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষিত ২৯৮ জনের বাইরে খুব কম প্রার্থীই জামানত রক্ষা করতে পেরেছেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ১৪শ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। শতকরা হিসাবে যা ৭৫.২২ ভাগ। ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এটা বিরল দৃষ্টান্ত। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে ওই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলীয়ভাবে সবচেয়ে বেশি ২৯৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ধর্মভিত্তিক এই দলটির একজন প্রার্থীও জয়ী হতে পারেননি। এ ছাড়া জামানত বাজেয়াপ্তের দিক থেকেও তারা সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থী ছিল বিএনপির, ২৭২ জন। তবে জোট শরিকরা বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করায় ধানের শীষের প্রার্থী সংখ্যাও ছিল ২৯৮ জন। এদের মধ্যে বিএনপির ১৬৩, জামায়াতের ২৫ এবং জোট শরিক অন্য দলের অধিকাংশ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৮টি বামপন্থি দল নিয়ে গঠিত বাম ঐক্যজোটের প্রায় দেড়শ জন প্রার্থীর জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসি সূত্র। এবার ২৬১ আসনে সরাসরি দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর শরিকদের মিলিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৪ জনে। এর বাইরে দুটি আসন জেপি এবং মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির জন্য ২৪টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে ২৬৬ জন বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। বাকি আট প্রার্থীও খুব অল্প ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ২টি আসনে পরাজিত হলেও ২২টি আসনে বিজয় অর্জন করেছেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এর আগে বিএনপির এত বেশি সংখ্যক প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্তের নজির নেই। নবম সংসদে বিএনপির ১৪ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকেরও চার প্রার্থী জামানত হারান। সূত্র জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে একটিতেও বিএনপি প্রার্থীরা জামানত রক্ষা করতে পারেননি। আবার অনেক আসনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেলেও জামানত রক্ষা হয়নি বিএনপি প্রার্থীদের। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী একজন প্রার্থীকে যত ভোট কাস্ট হবে তার ন্যূনতম আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হবে। অন্যথায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এই বিধানটি রাখা হয়েছে প্রার্থীকে লজ্জা দেয়ার জন্য। এটাকে জরিমানাও বলা যেতে পারে। এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে জিততে না পারার কোনো সম্ভাবনা না থাকলে যাতে কেউ নির্বাচনে অংশ না নেন। ইসি জানায়, নবম সংসদের ভোটে ৩৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ওই ভোটে এক হাজার ৫৬৭ প্রার্থীর মধ্যে ৯৪১ জন জামানত হারান। ওই নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান ছিল। সেবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১৬৭ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ৪ ও বিএনপির ১৪ প্রার্থী জামানত হারিয়েছিলেন। বিএনপি ও তাদের শরিকদের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে ১৬৩ প্রার্থী জামানত হারান। যদিও ওই নির্বাচনে কেবল ১৪৭টি আসনে ভোট হয়, যেখানে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৯০ জন। এবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া জামানত হারানোদের মধ্যে রয়েছেনÑ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নোয়াখালী-৫ আসনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, কুমিল্লা-২ আসনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নরসিংদী-৩ আসনে সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান, ফরিদপুর-৩ আসনে সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ঢাকা-৩ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চট্টগ্রাম-১০ আসনে সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, রাজশাহী-৪ আসনে সাবেক এমপি আবু হেনা, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদ, কুষ্টিয়া-৪ আসনে সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, যশোর-৫ আসনে সাবেক এমপি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, পটুয়াখালী-১ আসনে সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ভোলা-৩ আসনে সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, ভোলা-৪ আসনে সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম, বরিশাল-১ আসনে জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-৫ আসনে মজিবর রহমান সরোয়ার, ঝালকাঠি-১ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, টাঙ্গাইল-৩ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা, নরসিংদী-৪ আসনে সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, কুমিল্লা-৭ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমদ, কুমিল্লা-১০ আসনে সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী, নোয়াখালী-১ আসনের সাবেক এমপি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি জয়নাল আবেদিন, নোয়াখালী-২ আসনে সাবেক এমপি ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূইয়া,লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দিনাজপুর-৩ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, লালমনিরহাট-১ হাসান রাজীব প্রধান, রংপুর-১ মো. রহমতউল্লাহ, রংপুর-৬ সাইফুল ইসলাম, গাইবান্ধা-৪ ফারুক কবির আহমেদ, গাইবান্ধা-৫ ফারুক আলম সরকার ও জয়পুরহাট-২ এ ই এম খলিলুর রহমান। এবারের নির্বাচনে কোন দলের কত প্রার্থী ছিল এলডিপি ৮ (ধানের শীষ ৪), জেপি ১১ (মহাজোট ২), সাম্যবাদী দল ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৯ (ধানের শীষ ৪), সিপিবি ৭৪, আওয়ামী লীগ ২৬১ (নৌকা ২৭৪), বিএনপি ২৭২ (ধানের শীষ ২৯৭), গণতন্ত্রী পার্টি ৬, ন্যাপ ৯, জাতীয় পার্টি ১৭৬ (মহাজোট ২৫), বিকল্পধারা ২৫ (নৌকা ৩), ওয়ার্কার্স পার্টি ৮ (নৌকা ৫), জাসদ ১২ (নৌকা ৩), জেএসডি ১৯ (ধানের শীষ ৪), জাকের পার্টি ৯০, বাসদ ৪৫, বিজেপি ৩ (ধানের শীষ ১), তরিকত ফেডারেশন ১৭ (নৌকা ১), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ২৩, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ ৪৮, এনপিপি ৭৯, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম ৮ (ধানের শীষ ৩), গণফোরাম ২৭ (ধানের শীষ ৭), গণফ্রন্ট ১৩, পিডিপি ১৪, বাংলাদেশ ন্যাপ ৩, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১১, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৮, কল্যাণ পার্টি ২ (ধানের শীষ ১), ইসলামী ঐক্যজোট ২৪, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২৯৮, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ২৫, জাগপা ৪, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২৮, খেলাফত মজলিস ১২ (ধানের শীষ ২), বিএমএল ১, মুক্তিজোট ২ ও বিএনএফ ৫৭ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাপা ছাড়া বিএনপির সিংহভাগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত এবং প্রায় ২৯টি দলের সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে ইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App