×

মুক্তচিন্তা

জনগণের আস্থার প্রতিদান দেয়াই এখন সরকারের মূল দায়িত্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪০ পিএম

গ্রামগুলোতে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেয়া, তরুণদের কর্মসংস্থান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তা সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় আগামীর স্বপ্নে ভাসিয়েছে জনতাকে। সবার চাওয়া একটিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ ইশতেহারে বর্ণিত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে হবে আগে। সুশাসনের প্রতি জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোরতর হতে হবে। সন্ত্রাস, মাদকদ্রব্য নির্মূল ও রাজধানীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। দলের নাম ভাঙিয়ে সুবিধাবাদীরা যেন জনগণের ভরসায় চির ধরাতে না পারে। দলের ত্যাগী, প্রকৃত কর্মীরা যেন নিরাশ না হয় সে দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।

একাদশ জাতীয় নির্বাচন ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হয়েছে। আজ নববির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করবেন। আশার কথা হলো, এবারের নির্বাচনে ভোটাররা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন। কেননা এত বিপুলসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি স্বাধীন বাংলাদেশে কেউ দেখেনি আগে। প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এ দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছিল, ছিনিয়ে এনেছিল চূড়ান্ত বিজয়। বন্যাসহ চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল তখন। আজ ৪৮ বছর পর ২০১৮ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেখা গেল তারই প্রতিচ্ছবি।

এ জয় নিয়ে সমালোচকদের কানাঘুষা থাকলেও বাস্তব উপযোগিতা নেই বিন্দুমাত্র। এখন হিসাবটা সামনে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে। মহাজোটের কাঁধে এখন বিশাল দায়িত্ব। মানুষ বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে মহাজোটের পক্ষে রায় দিয়েছে। নানা শ্রেণির নানা বয়সের বিভিন্ন পেশার ছোট-বড় অসংখ্য স্বপ্নের প্রতিফলন এবারের নির্বাচন।

সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়- বিশাল জয়ের ক্ষেত্রে ক্ষমতা আরো বেশি কেন্দ্রীভূত হওয়ার আকাক্সক্ষা থেকে যায়, সেটা যেন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এ দেশের জনগণ তথা তরুণরা শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে নৌকা মার্কায় রায় দিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা- নতুন সরকার তাদের স্বপ্ন পূরণে অবিচল থাকবেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর এ দেশে ৬ বছর পর প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সামরিক জান্তার জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়ার পরও হাল ছাড়েননি তিনি। জীবন বাজি আর কণ্টকময় সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে স্বৈরাচারের হাত থেকে গণতন্ত্র উদ্ধার করেন।

১৯৯১ সালে সূক্ষ্ম কারচুপি, ভুয়া ভোটার লিস্ট ও নানা চক্রান্তের কারণে ক্ষমতার কাছাকাছি গিয়েও লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর বিএনপি সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে চালিয়ে যায় আন্দোলন। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে পরাজিত হয় বিএনপি। ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই রচিত হয় সুবর্ণ এক অধ্যায়ের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এটা ছিল প্রথম জয়।

এরপর ২০০১ সালের লতিফ-শাহাবুদ্দিন-সায়েদ গং পরিচালিত নির্বাচনে নীল নকশার মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আসে একাত্তরের পরাজিত শক্তি বিএনপি-জামায়াত। দেশে নেমে আসে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, মঙ্গার প্রকোপ, চুরি, লুণ্ঠন আর বোমাবাজির রাজনীতি। গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়।

পরম করুণাময়ের অশেষ দয়ায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে বেঁচে থাকে লাখো প্রাণের স্বপ্নের সারথি, জনতার নেত্রী। ২০০৮ সালের সম্পন্ন নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা। আওয়ামী লীগ পায় ২৩০টি আসন, বিপরীতে বিএনপি-জামায়াত পায় ৩০টি আসন। এরপর শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যান অনন্য এক উচ্চতায়, যা ছিল জাতির জন্য কল্পনাতীত।

দেশজ সম্পদ, মাথাপিছু আয়, শিল্প-কৃষি ও সেবা খাতের উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মহাকাশ বিজয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন, ছিটমহল সমস্যা, যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ বিশ্বে রোল মডেল হয়ে উঠেন শেখ হাসিনা।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি শুরু করে। জনগণের মনে ভয়, আতঙ্ক জন্ম দিয়ে জয়ী হতে চেয়েছিল জোট। কিন্তু এ দেশের মানুষ তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। জোটের নেতারা পাবলিক সেন্টিমেন্ট বুঝে আর অংশ নেননি নির্বাচনে।

এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুনরূপে শুরু হয় উন্নয়নের কাজ। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশাল এক অর্জন পায় মহাজোট। ফলে এবার নিরঙ্কুশ বিজয়লাভ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট।

এত চড়াই-উতরাইয়ের পরও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে সরকার। এ দেশের জনগণও তাই পুনর্নির্বাচিত করেছেন শেখ হাসিনাকে। কারণ জনগণ মনে করে একমাত্র শেখ হাসিনাই পারে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে। একটি সমৃদ্ধিশালী, প্রাযুক্তিক, আত্মমর্যাদাশীল জাতি গড়তে।

নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা দেশের জনগণকে আরো বেশি আস্থাশীল করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি। গ্রামগুলোতে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেয়া, তরুণদের কর্মসংস্থান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তা সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় আগামীর স্বপ্নে ভাসিয়েছে জনতাকে।

আমাদের বন্ধু, সুহৃদ শুভাকাক্সক্ষী অনেকের সঙ্গে কথা হলো, সবার চাওয়া একটিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ ইশতেহারে বর্ণিত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে হবে আগে। সুশাসনের প্রতি জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোরতর হতে হবে। সন্ত্রাস, মাদকদ্রব্য নির্মূল ও রাজধানীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।

দলের নাম ভাঙিয়ে সুবিধাবাদীরা যেন জনগণের ভরসায় চির ধরাতে না পারে। দলের ত্যাগী, প্রকৃত কর্মীরা যেন নিরাশ না হয় সে দিকে তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে। বিপুল ভোটের মাধ্যমে জনগণের যে আমানত শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিল তার সঠিক প্রয়োগ যেন হয়। সরকার পরিচালনায় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

প্রয়োজনে একটি বিশেষ টিম গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সমাধানের ব্যবস্থা করবেন। গত সেপ্টেম্বরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে জরুরি সেবা প্রদানের চিন্তাটি ছিল অত্যন্ত আধুনিক, সময়োপযোগী। ত্বরিত ফলাফল ও দোরগোড়ায় সেবা পেতে এ ধরনের আরো বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে পরিত্রাণ দিতে হবে জনগণকে। তাদের অভিযোগগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে তা সমাধান বা পরিত্রাণের বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে দায়িত্বশীল ভূমিকাই সবার কাম্য। স্বচ্ছতা, সুনিশ্চিত জবাবদিহির মাধ্যমে উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

বাঙালি স্বপ্নবান জাতি, তাদের স্বপ্নের কাণ্ডারি এখন শেখ হাসিনা। তাই সব আবদার, প্রত্যাশা শেখ হাসিনাকে ঘিরেই। এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন আপনাকে নিয়ে যাবে মহাকালের চূড়ায়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রূপ আপনি দিবেন এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ: গবেষক ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App