×

জাতীয়

সম্ভাবনা-প্রত্যাশার নতুন বছরকে স্বাগত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৪১ এএম

সম্ভাবনা-প্রত্যাশার নতুন বছরকে স্বাগত
আরেকটি নতুন বছর! অনেক প্রত্যাশা ও অমিত সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে আরেকটি নতুন সূর্যোদয়। নতুন এ বছরটি সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ২০১৯ সাল অনেক প্রতীক্ষার একটি বছর। এ বছর দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। পরাজিত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা। এমনই প্রেক্ষাপটে স্বস্তি-আনন্দের আবহে দেশবাসী স্বাগত জানিয়েছে ইংরেজি নতুন বছরকে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটনাবহুল কেটেছে ফেলে আসা বছরটি। দুর্নীতি মামলায় বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়ার সাজা, ২১ আগস্ট গেনেড হামলার দায়ে তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের সাজা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন- রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্য দিয়েই পার হয়েছে ২০১৮ সাল। তবে বিএনপি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করায় এই উত্তাপ প্রলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সব মিলিয়ে আশা-আনন্দ, সংশয় আর উদ্বেগের বৈপরীত্যের মধ্যেই যাত্রা শুরু নতুন বছরের। তবে শুধু রাজনীতিই তো জীবন নয়! এর বাইরে জীবনযাপনের যে নানা বাঁক, তাও মানুষকে আন্দোলিত করে। তার আবেগকে নাড়া দেয়। সমাজে-সংসারে তুলে তুমুল আলোড়ন। হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা এই নিয়েই তো আমাদের বেঁচে থাকা। ‘জগৎজুড়ে উদার সুরে, আনন্দগান বাজে/সে গান কবে গভীর রবে, বাজিবে হিয়া-মাঝে/নয়ন দুটি মেলিলে কবে, পরান হবে খুশি/যে পথ দিয়া চলিয়া যাব/সবারে যাব তুষি।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতাটিতে রয়েছে অতীত দুঃখ ভুলে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে গ্রহণ করার আহবান। নিষ্ফলা অতীত নিয়ে আক্ষেপ না করে আগামীর কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ার এক আবাহনগীতি এ কবিতা। কারণ ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু, মাতলো রে ভুবন/আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন/অন্তরে যা লুকিয়ে রাজে/ অরুণবীণায় সে সুর বাজে/এই আনন্দযজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ।’ ক্যালেন্ডারের নতুন পাতা উল্টে নতুন দিনের নতুন সূর্যকে বরণ করেছে বিশ্ব। পৃথিবী প্রতীক্ষায় সোনালি দিনের। ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই হ্যাপি নিউ ইয়ারকে জানানো হয়েছে জমকালো স্বাগতম। প্রত্যাশা আর সম্ভাবনার স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে প্রতিটি হৃদয়ে। অন্তরে বাজছে, ‘অতন্দ্র আত্মার অমোঘ স্বীকারোক্তি/ রাত্রির শূন্যতা আর দিবসের আস্ফালন/বৃত্তির শিকল, কালের স্বীকৃতি ফেলে, ওইটুকুই/মুক্তি আছে ওখানেই।’ গোধূলির বেলায় রক্তিম সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেছে ঘটনাবহুল ২০১৮ সালটি। উদিত হয়েছে নতুন বছরের নতুন সূর্য। প্রত্যাশা কেবল মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ এবং সৌহার্দ্য সম্প্রীতির দেশ গড়ার। যাত্রা শুরু হলো নতুন বছরের, স্বাগত ২০১৯, বিদায় ২০১৮। রাতেই নতুন ক্যালেন্ডার জায়গা করে নিয়েছে পুরনো স্মৃতির ভিড়ে। ইংরেজি নববর্ষ ২০১৯ সালের আজ প্রথম দিন। নতুনের কেতন উড়িয়ে আগামীর কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ার আবাহন ও অমিত সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে ২০১৯ সাল। দূরের সোনালি দিন এখন হাতের মুঠোয়। ২০১৯-কে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা, অনেক স্বপ্ন, অনেক কল্পনা। যদিও সময়ের বিচারে খুব দীর্ঘ নয় একটি বছর, মাত্র তিনশ পঁয়ষট্টিটি দিন। তবু মানুষকে প্রতিটি দিনই ইঙ্গিতে-ইশারায় ডাকে। অজানা আগামীকালের পথে ডেকে নিয়ে যায়। দিন থেমে থাকে না, রাতও নয়। আলো ও আঁধারের অবিচ্ছিন্ন আবর্তনের ভেতর দিয়ে এবার এগিয়ে যাবে নতুন বছর। পুরনো বছরের ধূসর দিনগুলোর কথাও পাশাপাশি আমাদের মনে পড়বে- কী পেয়েছি, কী হারিয়েছি। সেই একই সূর্য, একইভাবে আজ কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে উঠেছে পূর্বাকাশে। তবু তার উদয় ভিন্নতর। আজকের দিনটি আলাদা, কারণ একটি নতুন বর্ষপরিক্রমা শুরু হলো আজ থেকে। নতুনের কেতন উড়িয়ে আজ হ্যাপি নিউ ইয়ার। নতুনের প্রতি সবসময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ ও উদ্দীপনা। নতুনের মধ্যে নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণ করার সুযোগ করে দিতে এলো নতুন বছর। মানুষকে প্রতিটি নতুন দিনই ইঙ্গিতে-ইশারায় ডাকে। অজানা আগামীকালের পথে ডেকে নিয়ে যায়। আলো ও আঁধারের অবিচ্ছিন্ন আবর্তনের ভেতর দিয়ে এবার এগিয়ে যাবে নতুন বছর। পুরনো বছরের ধূসর দিনগুলোর কথাও পাশাপাশি আমাদের মনে পড়বে কী পেয়েছি, কী হারিয়েছি। সেই একই সূর্য, একইভাবে আজ কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে উঠেছে পূর্ব আকাশে। শুধু তার উদয় ভিন্নতর। ইতিহাসের খেরো পাতা থেকে জানা যায়, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বর্ষ বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানো মানুষের আবেগ ও হৃদয়বোধেরই একটি অন্তর্নিহিত প্রতিফলন। ইতিহাস সচেতন পাঠকমাত্রের জানা, প্রাচীন রোমের পৌরাণিক দেবতা জেনাসের নামানুসারে নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির নামকরণ। দেবতা জেনাসের দুটি মুখ। একটি সূর্য অপরটি চন্দ্র। সূর্য উত্তাপ বিকিরণ করে জীবন সঞ্চালন ঘটায়। চন্দ্র তার মধুর আলোয় জীবনের পরিপুষ্টি আনে। আবার জেনাসের একটি মুখ ভবিষ্যতের প্রতীক, অন্যটি অতীতের। তিনি পার্থিব মানুষের জীবনদ্বারের প্রহরী। তাই দৃষ্টি প্রসারিত করে আছেন আমাদের অতীত থেকে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে। অতীত থেকে অনাগতের যাত্রাপথে যে চলমান প্রবাহমানতা, জেনাস তার নিয়ামক এবং নিয়ন্ত্রক। তিনি স্বস্তি, শান্তি আর কল্যাণের দেবতা। প্রাচীন রোমানরা একে ভক্তিভরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতেন বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানে, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরুর আগে ও পরে, শিশু জন্মের মুহূর্তে। ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার বেবিলিয়নরা ‘আকিতু’ নামে নববর্ষ অনুষ্ঠান পালন করে সুখী, শান্তিপূর্ণ, শুভময় ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা জানাতেন দেবতার দুয়ারে। আর আবহমান কাল ধরে বিশ্বও এগিয়ে চলেছে নতুনের হাত ধরে। পুরনো জীর্ণতাকে ভুলে নতুন দিনের নতুন কাব্যে জীবনকে আরো কাব্যময় করে তুলতে। তাই ইংরেজি ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ^বাসী মেতে ওঠে নানা আয়োজনে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালিও মেতে ওঠে ইংরেজি নববর্ষ বরণের আনন্দে। শহর-নগর, গ্রাম-বন্দরসহ সারা দেশে যেন বয়ে চলে এক খুশির বন্যা। প্রতি বছর এই উৎসব এভাবে আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। পুরনো বছরের গ্লানি ভুলে নতুনকে বরণ করার উৎসবে সারা বিশ্বের একাত্মতা বিশ্ববাসীকে একটু হলেও এক সুতায় গেঁথে রাখে। নতুন আশায়, স্বপ্নে উদ্দীপ্ত হয় মানুষ। সাফল্যে ঔজ্জ্বল্য হয়ে উঠবে, মুছে যাবে ব্যর্থতার গ্লানি- এমন প্রত্যাশায় মানুষ উজ্জীবিত হয়। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে নতুনকে নিয়ে এগিয়ে চলার আনন্দময় ও উন্নত জীবনের গল্পে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। সবার প্রত্যাশা, নতুন বছর হবে একটি সুখী-সমৃদ্ধ-জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ। নতুন বছরের কাছে প্রত্যাশা ভালো থাকার, সুন্দর থাকার। দেশটা হোক সহিংসতা, নৃশংসতা ও জঙ্গিবাদমুক্ত। চাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা। সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ, শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ পরিবেশে বেঁচে থাকুক স্বপ্নেরা। পুরনো বছরের ব্যর্থতা ও গ্লানিকে পেছনে ফেলে নবোদ্যমে সোনালি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে বিশ্ব এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। হ্যাপি নিউ ইয়ার!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App