×

অর্থনীতি

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০১৯, ০২:৫৪ পিএম

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ
নতুন বছরে বিশ্ববাজারে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে। বর্তমানে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৫০ থেকে ৫৮ মার্কিন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। তবে ওপেক (অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ) সদস্য দেশ ও ওপেকের বাইরে থাকা দেশগুলো নতুন বছরের চাহিদা অনুযায়ী তেলের উৎপাদন না বাড়ানোর কারণে আগামী বছর তেলের দাম পৌঁছাতে পারে ৬৫ থেকে ৭০ ডলার পর্যন্ত। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে চাপ পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও। বর্ধিত দামের কারণে আমদানির খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ও বাড়বে। বিদেশি মুদ্রার আয় না বাড়ার কারণে তা গিয়ে চাপ তৈরি করবে রিজার্ভের ওপর। এর ফলে টাকার মানও কমে যেতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়া এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকলে দেশীয় বাজারে লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যাবে। তখন স্থানীয় বাজারে এই দাম সমন্বয় করতে হবে। এতে করে সব ধরনের পণ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই অবস্থায় দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির শৃঙ্খলা রাখতে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে অর্থনীতির হিসাব-নিকাশও পরিবর্তন হয়। তেলের দাম বাড়লে সব দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ে। এ কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো ভেবে দেখা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, দিন দিন দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। প্রতি বছর এ চাহিদা বাড়ার হার ১০ থেকে ১২ শতাংশ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৮ লাখ টন তেল আমদানি করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৬৪ লাখ টন। আগামী বছরে এর পরিমাণ বেড়ে ৭০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। জ্বালানি তেল নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেল আমদানি বেশি হওয়ায় ব্যয়ও বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪২ কোটি মার্কিন ডলারের জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে ব্যয় বেড়েছিল ৩২ শতাংশ। চলতি অর্থবছর ৩০ শতাংশের বেশি খরচ বাড়বে। জুলাই-অক্টোবর সময় জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২৪ শতাংশ এবং এলসি খোলার হার বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। সূত্র জানায়, জ্বালানি তেল এখন শুধু পরিবহন ও কৃষি খাতেই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে মোট জ্বালানি তেলের ৪৬ শতাংশ ব্যবহার পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। বিদ্যুৎ খাতে ২৫ শতাংশ, কৃষিতে ১৭ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ১২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাড়ছে বিদ্যুৎ খাতে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম সর্বোচ্চ ৫৮ মার্কিন ডলার। এক সপ্তাহ ধরে এর দাম ৫০ থেকে ৫৮ ডলারে ওঠানামা করছে। স¤প্রতি বিশ্বব্যাংক তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, আগামী বছরের মধ্যে এই দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৭২ ডলারে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হলে প্রতি ব্যারেলের মূল্য ১০০ ডলারেও উঠতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, দেশের মোট আমদানি ব্যয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যায় জ্বালানি খাতে। মূল্য বাড়লে এটি ২৫ শতাংশে ওঠে। তখন ভর্তুকি দিয়ে তেল বিক্রি করতে হয়। ফলে সরকারের খরচ বেড়ে যায়। তখন সমন্বয় করতে তেলের দাম বাড়ানোর চাপ থাকে। কেননা এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ানোয় বাজেট ঘাটতি তৈরি হয়। এ ঘাটতি মেটাতেই বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর চাপ বাড়ে। আবার তেলের দাম বাড়ালে সব খাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App