×

জাতীয়

নৌকার বিস্ময়কর বিজয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:০৯ এএম

নৌকার বিস্ময়কর বিজয়
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিস্ময়কর বিজয় অর্জন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এই বিজয়ে সরকার গঠনে হ্যাটট্রিক করল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও শরিকদের ছাড়াই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা আবারো দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সরকার প্রধানের। টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে এটাও হবে একটি রেকর্ড। পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তিনবার নির্বাচিত হবেন। এ বিজয় নিয়ে তিনি চারবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্ন গোলযোগ এবং বিরোধী জোটের অনিয়ম-অভিযোগের মধ্যে গতকাল রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে ৪০ হাজারের বেশি কেন্দ্রে দৃশ্যত শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয় একাদশ সংসদ নির্বাচন। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা। সর্বশেষ রাত ২টায় পাওয়া ২৬৩টি আসনের বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ২২৭ জন। বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে ৬ জন ও গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে ১ জনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে ৭টি আসন। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন ১৯ জন। বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই কেন্দ্রেগুলোতে গণনা শুরু হয়। কেন্দ্রে গণনার ফলাফল প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা পাঠান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা বিভিন্ন কেন্দ্রের ফল সমন্বিত করে আসনভিত্তিক সর্বশেষ ফলাফল ঘোষণা করছেন। ওই ফল পাঠাচ্ছেন ঢাকায় নির্বাচন কমিশনেও। নির্বাচন ভবনে স্থাপিত সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা হয়েছে গোপালগঞ্জ-৩ আসনের। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির এস এম জিলানী পেয়েছেন মাত্র ১২৩ ভোট। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মারুফ শেখ হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৭১ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো. এনামুল হক আপেল প্রতীকে পেয়েছেন ১০ ভোট এবং অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. উজির ফকির সিংহ প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৪ ভোট। রবিবার রাত ২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারা দেশ থেকে আসা ফলাফলের ধারায় এবারো সংসদে প্রধানবিরোধী দলের আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকেই দেখা যেতে পারে। দশম সংসদ বর্জনকারী বিএনপি ও তার শরিকরা একাদশ নির্বাচনের ভোটের সম্ভাব্য ফল বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এদিকে নির্বাচন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের আনন্দ মিছিল না করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন উদ্ধৃতি দিয়ে তার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব, এই নির্বাচন তার প্রমাণ। দীর্ঘ ১০ বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষের সরাসরি ভোটযুদ্ধ নিয়ে মানুষের মধ্যে ছিল ব্যাপক কৌত‚হল। ভোটের আগের রাত থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যার পর তা চালু করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর আগে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নিজস্ব জরিপে ১৬৮ থেকে ২২২ এবং বেসরকারি সংস্থা আরডিএসের জরিপে আওয়ামী লীগ ২৪৯ আসন পাবে বলে আভাস দেয়া হয়েছিল। ফলে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল আওয়ামী লীগ। তবে এমন অভূতপূর্ব বিজয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দলের অনেকেই। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বীর তুলনায় এক থেকে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ের নজির সৃষ্টি করেছেন। ইতোমধ্যেই দলের এই ভূমিধস বিজয় দেশবাসীকেই উৎসর্গ করা হবে জানিয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। গতকাল রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশের প্রায় সব আসন থেকেই একই রকম ভোট ডাকাতির খবর এসেছিল। এ পর্যন্ত আমাদের শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করা হোক। এই নির্বাচনের কথিত ফলাফল আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং সেই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন দাবি করছি। এর আগে দুপুরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ইসিতে গিয়ে অভিযোগ করেন, ২২১টি আসনে অনিয়মের চিত্র অভিন্ন। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হলেও আগের রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরার অভিযোগও করেন তিনি। এ ছাড়াও ভোটগ্রহণের পরপরই প্রার্থীদের কর্মীর ওপর হামলা, জালভোট দেয়া, কেন্দ্রে ভোটারদের এবং পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে না দেয়াসহ নানা অভিযোগ তুলে ভোট বয়কট করেন ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মোট ৮২ জন। এদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৬৯ জন, জাতীয় পার্টির ৬ জন এবং ৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোটের সহিংসতায় ১১ জেলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। ২৯৯টি আসনের ৪০ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে অনিয়মের কারণে ভোট স্থগিত হয়েছে ২২টি কেন্দ্রে। তবে রাজধানীর অনেক ভোটকেন্দ্রেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। আবার কিছু কিছু ভোটকেন্দ্র ছিল অস্বাভাবিক রকম ফাঁকা। পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। নিয়োজিত ছিল সেনাবাহিনীও। ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি আসনের ভোটকেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য কিছু জায়গায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও তা অত্যন্ত নগণ্য বলে মন্তব্য করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলাদেশের গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সংঘাতহীন হয়েছে। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১০ জনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তিনি বলেন, আমরা এটা অনেক আগে থেকে আশঙ্কা করেছিলাম, বিএনপি-জামায়াত শেষ রক্ষার জন্য যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে পারে। আমরা এ জন্য দেশবাসীকে বারবার সতর্ক করেছি। দেশবাসী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে তারা বড় ধরনের কোনো নাশকতা চালাতে পারেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App