×

অর্থনীতি

নির্বাচনের প্রভাবে মন্দা ব্যবসা-বাণিজ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৫১ পিএম

নির্বাচনের প্রভাবে মন্দা ব্যবসা-বাণিজ্য
দেশের মহা আয়োজন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হলো গতকাল। এই নির্বাচনের প্রভাবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা বিরাজ করছে। এই নির্বাচন ও বছরান্তে রাজধানীর কোলাহলই ছিল না। এ ছাড়া সন্ধ্যা রাতে চিরাচরিত চিত্র ছিল না রাজধানতে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বড় শহর ছেড়েছেন ভোটাররা। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই। কমে গেছে ব্যবসা ও বাণিজ্যের গতিশীলতা। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, বর্তমানে সারা দেশে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে উৎপাদন খাতে ব্যবসায়িক লেনদেন কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আবার খুচরা ব্যবসায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি। পাশাপাশি নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন ও পরের দিনসহ তিন দিন যানচলাচল বন্ধ রাখছে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলো। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে তা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি সব ব্যবসা খাতে প্রায় এক সপ্তাহ মন্দাভাব বিরাজ করবে। এতে সাময়িকভাবে ভোগান্তিতে পড়বে শ্রমজীবী মানুষ। ব্যাহত হবে উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া। তবে বাজারে অস্থিরতার আশঙ্কা নেই বলেও জানিয়েছেন আমদানি-রপ্তানিকারক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এদিকে, এনবিআর সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছয়ের ঘরে নেমে এসেছে, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ শতাংশের বেশি। চার মাসে প্রবৃদ্ধি এত নিচে এনবিআরের ইতিহাসে নামেনি। এতে চলতি অর্থবছর চার মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর আগে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব ঘাটতি ছিল প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। নির্বাচন উপলক্ষে আমদানি-রপ্তানি ও উৎপাদন কমে যাওয়ায় রাজস্ব প্রবৃদ্ধি আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা। বিগত পাঁচ অর্থবছরে যেখানে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, সেখানে চলতি অর্থবছর চার মাসে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি মাত্র ছয় দশমিক ২৮ শতাংশ। অথচ ২০১৭-১৮ অর্থবছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ কম। সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছর পাঁচ মাসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৯৫৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ১৭ হাজার ৯১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ রাজস্ব আদায় কম করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নির্বাচন উপলক্ষে সব খাতেই উৎপাদন কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গ্রাহকদের চাহিদা কমে গেছে। অতিরিক্ত উৎপাদন করে ইতোমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। আগের সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এত আতঙ্ক ছিল না। তবে এ নির্বাচন নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করায় উৎপাদন কম। এ ছাড়া খুচরা পর্যায়ে পণ্যের চাহিদা কম থাকায় উৎপাদন কমে গেছে। এ ছাড়া উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য যানবাহন ও শ্রমিক সংকটকে দায়ী করেন ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সময় শীতের পোশাকসহ সব ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু নির্বাচন উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে বিক্রি কমে গেছে। অধিকাংশ মানুষ শহর ছেড়ে ভোট দিতে গ্রামে চলে গেছে। ভোট শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এক সপ্তাহ লাগবে। এ সময় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তবে এফবিসিসিআই নেতারা বলছেন, বড় কারখানায় উৎপাদন কিছুটা কম হতে পারে। তবে ছোট ছোট কারখানায় উৎপাদন কমেনি। নির্বাচন উপলক্ষে যানবাহনের কিছুটা সংকট রয়েছে। নির্বাচনের কারণে ব্যবসা খাতে ক্ষতি হবে না বলে জানান তিনি। বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, নির্বাচন উপলক্ষে বিদেশি অর্ডার কিছুটা কমেছে। বিদেশিরা নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উৎপাদন ও অর্ডার বেড়ে যাবে। তবে শীতের কারণে স্থানীয় বাজারে চাহিদা থাকায় কিছু কিছু কারখানায় উৎপাদন না কমে বরং বেড়ে গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App