×

জাতীয়

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মেনন-আব্বাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:০৭ পিএম

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মেনন-আব্বাস
রমনা, মতিঝিল ও পল্টন নিয়ে ঢাকা-৮ আসন গঠিত। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে মুখোমুখি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সাধারণ ভোটারদের ধারণা, এই আসনে এবার নৌকা ও ধানের শীষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও একই ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই আসনে রয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, মন্ত্রিপাড়া ও জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এ আসনের প্রার্থীরাও হেভিওয়েট মর্যাদায় অভিসিক্ত। বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নির্বাচন করছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। তার প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ভোট করবেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। ঐক্যফ্রন্টের লক্ষ্য, হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধার আর মহাজোটের টার্গেট অধিকৃত দুর্গ রক্ষা। আসনটিতে মোট ১৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে এই আসনে ১৪ জন প্রার্থীর মধ্যে রাশেদ খান মেনন ও মির্জা আব্বাস ছাড়াও অন্যরা হচ্ছেন মই নিয়ে বাসদের শম্পা বসু, বাঘ প্রতীকে আবুল কালাম আজাদ, মিনার প্রতীকে আবু নোমান মোহাম্মদ জিয়াউল হক মজুমদার, টেলিভিশন নিয়ে আব্দুস সামাদ সুজন, মোমবাতি নিয়ে এস এম সরওয়ার, হাতপাখা নিয়ে আবুল কাশেম, লাঙল নিয়ে ইউনুস আলী আকন্দ, মাছ প্রতীকে জাকির হোসেন, আম প্রতীকে ছাবের আহাম্মদ, গোলাপফুল প্রতীকে নজরুল ইসলাম লিটন, গাভী প্রতীকে সুমি আক্তার শিল্পী ও কুঁড়েঘর প্রতীকে হাসিনা হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ১৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মহাজোটের রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মির্জা আব্বাসের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। দুজনই বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির বিপরীতমুখী গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী নেতা। তবে ভোটের মাঠে এর আগে তারা কখনো মুখোমুখি হননি। নির্বাচনী এলাকার প্রায় সব জায়গায় নৌকার পক্ষের পোস্টারিংয়ের পাশাপাশি ‘হাতপাখা’ প্রতীকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী আবুল কাশেমের পোস্টারও ঝুলছে। এ ছাড়া লাঙল প্রতীকে ইউনুস আলী আকন্দের পোস্টারও রয়েছে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের আশপাশের কিছু এলাকা ছাড়া অন্যত্র ধানের শীষের কোনো পোস্টার নেই। মির্জা আব্বাসের পক্ষেও প্রচারণা ছিলনা বললেই চলে। শাহজাদপুরের স্থানীয় ভোটার মো. মিলন মিয়া বলেন, পোস্টার দিয়ে কিছু হবে না। এ এলাকার ভোট মির্জা আব্বাসের। তবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় রাশেদ খান মেনন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ভোট পাবেন। তারপরও আব্বাসই এগিয়ে থাকবেন। নৌকা ও রাশেদ খান মেননের ছবি সংবলিত সাদা-কালো পোস্টার শান্তিনগরের বিভিন্ন রাস্তায় ঝুলতে দেখা গেছে। তবে এটি আওয়ামী লীগ ও মেননের ঘাঁটি। রাশেদ খান মেনন একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। ১৯৭৯ সালে তিনি সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১-এর পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রাশেদ খান মেনন। পরবর্তী সময় ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে এমপি হন। পরপর দুবার সাংসদ থাকায় এলাকায় অনেক উন্নয়নের সুযোগ পেয়েছেন মেনন যা তার জন্য ইতিবাচক হিসেবে ধরা হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকও করছেন তিনি। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮ এর একটি বড় অংশ শাহজাহানপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এখান থেকে (তৎকালীন ঢাকা-৬ আসন) এমপি নির্বাচিত হন। তবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে হেরে যান তিনি। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মির্জা আব্বাস। মন্ত্রী-এমপি ও মেয়র থাকাকালে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সাধারণ মানুষও তাকে পছন্দ করেন। স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, ঢাকা-৮ আসনের প্রতিটি অলি-গলি, ওয়ার্ড ও থানায় সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নেও গুরুত্ব দিয়েছেন রাশেদ খান মেনন। নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটির মাধ্যমে পুরোদমে চলছে প্রচারণা। সব মিলিয়ে এ আসনে নৌকা এবং ধানের শীষের মধ্যে ভোটের লড়াই জমে উঠেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App