×

জাতীয়

সিলেটের সব আসনেই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আ.লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:১২ পিএম

সিলেটের সব আসনেই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আ.লীগ
সিলেটের ৬টি আসনেই সুবিধাজনক অবস্থায় আছে আওয়ামী লীগ। জমজমাট প্রচারণা শেষ করে এখন ভোটের দিনের কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরাও আছেন ফুরফুরে মেজাজে। অপরদিকে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি আছে বেকায়দায়। পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে গত কয়েক দিন তাদের প্রচারণাও ছিল সীমিত। গ্রেপ্তার এড়াতে বেশির ভাগ নেতাকর্মী এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান প্রতিক‚ল পরিবেশে অনেকেই দলের এজেন্ট হতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে বিএনপি প্রার্থীরা সব কেন্দ্রে তাদের পোলিং এজেন্ট দিতে পারবেন কিনা তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা যেখানে সব আসনে জয়ের ব্যাপারে তুমুল আত্মবিশ^াসী, সেখানে বিএনপি প্রার্থীদের প্রতীক্ষা নীরব ভোট বিপ্লবের। সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, প্রচারণার শেষদিন বৃহস্পতিবার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া কর্মীদের বাসাবাড়িতে তল্লাশিসহ হুমকি-ধমকি অব্যাহত আছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে টিকে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ। তবে শেষ পর্যন্ত লড়তে চান তিনি। মুক্তাদির বলেন, আমার আস্থা ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে এবং নিজেদের ভোট দিতে পারলে ৩০ তারিখ শেষ হাসি জনতারই হবে। অপরদিকে বৃহস্পতিবার নির্বাচনী শোডাউনে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহাজোট ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. এ কে মোমেন। গতকাল শুক্রবার সকালে নিজ বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভোটারদের সাড়া দেখে আমি আপ্লুত। অনেকেই আমাকে হাসতে বললেও আমার কান্না আসছে। বিপুল জনগণের যে প্রত্যাশা তা কি সত্যিই আমি পূরণ করতে পারব? জনগণের এই ভালোবাসার মূল্য কি আমি রাখতে পারব? তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখুন। আগামীর বাংলাদেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান হবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদমুক্ত আলোকিত বাংলাদেশ। শান্তির পথে বাংলাদেশই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। ৩০ ডিসেম্বর নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে সিলেট-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনয়ন আদালত কর্তৃক বাতিল হওয়ায় এখানে ঐক্যফ্রন্টের সমর্থন পেয়েছেন গণফোরামের মোকাব্বির খান। উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে তিনি খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। এই আসনে বিএনপি সমর্থকরা ভোটের প্রচারণায় ছিলেন না, এমনকি নিজেদের ভোট দেবেন কিনা তা নিয়েও দ্বিধা আছে। এমন অবস্থায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন মহাজোট প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। তার প্রতীক লাঙ্গল। প্রচারণার প্রথম কয়েক দিন আওয়ামী লীগ কর্মীদের অসহযোগিতার কারণে মাঠে খুব একটা সক্রিয় হতে পারেননি তিনি। গত সপ্তহজুড়ে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা তার প্রচারে মাঠে নামলে দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এখন জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী এহিয়া। সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে আছেন মাহমুদ উস সামাদ কয়েস। তার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী। তিনিও প্রতীক্ষায় আছেন নীরব ভোট বিপ্লবের। সমানতালে প্রচারণা চালাতে পারলেও শেষ মুহূর্তে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন অনেকটাই বেকায়দায় তিনি। শেষদিনের প্রচারণায় তার নেতাকর্মীদের খুব একটা সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। তবে নৌকার প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ শেষদিনেও নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশাল শোডাউন করেছেন। আবারো জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে মাহমুদ উস সামাদ কয়েস বলেন, গেল ১০ বছরে এই অঞ্চলে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি আমরা। আশা করছি এই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে জনগণ আমাদেরই নির্বাচিত করবে। সিলেট-৪ আসনেও বিএনপি খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই গ্রেপ্তার আর পুলিশি হয়রানির অভিযোগ ধানের শীষ প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিমের। গতকাল শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দিলদার হোসেন সেলিম অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিরবচ্ছিন্ন প্রচারণা চালাতে পারলেও বিএনপির কাউকে মাঠেই নামতে দেয়নি পুলিশ। প্রচারণার শেষদিনে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্টসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া শেষদিনের জনসভার মঞ্চ ভেঙে দেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা, আর পুলিশি বাধায় সমাবেশ করতেই পারেননি তিনি। তবে মহাজোট প্রার্থী ইমরান আহমদ বলেন, এসব অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। বিএনপি প্রার্থী এতদিন নির্বিঘ্ন প্রচারণা চালিয়েছেন। এখন নৌকার পক্ষে জনসমর্থন দেখে পরাজিত হওয়ার ভয়ে এসব বলছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে জনগণ শান্তিতে থাকে। তাই জনগণ বিএনপিকে চাইছে না। সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী হাফিজ আহমদ মজুমদার। ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে এলাকায় যথেষ্ট সুনাম রয়েছে তার। সাবেক এই সাংসদের জনপ্রিয়তাও অন্য প্রার্থীদের তুলনায় ঈর্ষণীয়। তাই ভোটের দিনের হিসেব নিকেষে আগে থেকেই অনেকটা এগিয়ে তিনি। অপরদিকে তার প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে আছেন ধানের শীষ প্রতীকের উবায়দুল্লাহ ফারুক। জমিয়তে উলামা ইসলামের এই সহসভাপতিকে ভোটারদের বেশির ভাগই চেনে না। প্রথম থেকেই এই আসনে দলীয় প্রার্থী চেয়েছিল বিএনপির কর্মীরা। তবে শেষ পর্যন্ত জোটের কারণে ছাড় দিতে হয়। ধানের শীষ প্রতীকের কারণে অভিমান ভেঙে বিএনপি নেতাকর্মীরা তার পক্ষে মাঠে নামেন বেশ দেরিতে। তাই এ আসনে ভোটের চিত্র খুব একটা পাল্টানোর আশা করছেন না কেউ। সিলেট-৬ আসনে প্রথম থেকেই শক্ত অবস্থানে ছিলেন বিএনপি প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী। জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এলাকার সাধারণ ভোটারদের কাছে বেশ সাড়া ফেলেন তিনি। এমনকি তার প্রচারণায় জামায়াতের কাউকে অংশ নিতে পর্যন্ত দেখা যায়নি। কিন্তু শেষদিকে এসে পুলিশের বাধা আর নেতাকর্মী গ্রেপ্তারে তার অবস্থা এখন অনেকটাই দুর্বল। বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহত হওয়ার ঘটনায় একদিনেই প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মী আটক হয় তার। তিনি নিজেও সেই মামলার প্রধান আসামি। যদিও বরাবরই তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। তবে শেষ দুদিনের প্রচারণায় তিনি আর মাঠে নামতে পারেননি। এমনকি নির্বাচনী কার্যালয়েও দেখা যায়নি কাউকে। অপরদিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রথমে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে প্রচারণায় গতি না থাকলেও শেষদিকে তুমুল প্রচারণা চালান। কোন্দল মিটিয়ে নেতাকর্মীরাও কোমর বেঁধে নামেন নৌকাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। প্রচারণার শেষদিনে বিশাল নির্বাচনী সমাবেশে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে এ গণজোয়ার বলে দেয় ৩০ ডিসেম্বর বিজয় আমাদেরই হবে। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করার আহবান জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App