×

জাতীয়

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪৮ এএম

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা
সহিংসতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন ভণ্ডুল বা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র আবারো প্রেট্রলবোমা মেরে নাশকতায় নেমেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাতিলসহ তাদের নেতাকর্মীদের মুক্ত করার জন্য তারা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পেট্রলবোমা, যাত্রীবাহী গাড়িতে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো আবারো সন্ত্রাস শুরু করেছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে। চট্টগ্রামে পেট্রলবোমার নাশকতা শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা। এর পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের মধ্যে অতীতের ভয়াবহ হামলা-নির্যাতন-খুন-জ্বালাও-পোড়াও-মন্দির-উপাসনালয় ধ্বংসের ভীতিকর বিষয়টিও কাজ করছে। সীতাকুণ্ডে গত ২৫ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ছোড়া পেট্রলবোমার আগুনে ৫ নেতাকর্মী ঝলসে যায়। এর পরদিনই গত ২৬ ডিসেম্বর আবার সীতাকুণ্ডে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার গাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ পেট্রলবোমা তৈরির সরঞ্জাম আটক করে পুলিশ। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে ১৮টি পেট্রলবোমাসহ বিএনপির ২ নেতাকে গত ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নগরীর খুলশী থানার টাইগারপাস এলাকা থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরা হলেন মো. জাবেদ ও রুহুল আমিন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, জাবেদ খুলশী থানা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং রুহুল আমিন সহসাধারণ সম্পাদক। টাইগারপাস এলাকা থেকে আটকের পর তাদের কাছে ১৮টি পেট্রলবোমা পাওয়া গেছে। তারা নির্বাচনে নাশকতা করার জন্য পেট্রলবোমাগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য জামায়াত-শিবির সমর্থকরা ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিরোধিতা ও বিচার প্রক্রিয়া বন্ধে শুরু করে নানা নাশকতা। ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক সহিংসতার ৪১৯টি প্রধান ঘটনায় ৪৯২ জন নিহত এবং ২২০০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি একাত্তরের কুখ্যাত খুনি জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর জামায়াত-শিবিরের দুই দিনের হরতালে সারা দেশে কমপক্ষে তিন জন নিহত হয়। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায় হরতালে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়। আবার একই বছর ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির পর জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা এবং তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সহিংসতায় সারা দেশে সংঘর্ষে কমপক্ষে সাত জন নিহত ও ১৫০ জন আহত হয়। একই বছর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের নামে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। তাদের সহিংসতায় ১২ জন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন নিহত এবং ২ হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসের রাজত্ব শুরু হয়। ওই ঘটনায় তাদের পেট্রলবোমা, হাতবোমা এবং অন্যান্য সহিংসতায় ২০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জা ভাঙচুর এবং পবিত্র কুরআনের শত শত কপি জ্বালিয়ে দেয়। নির্বাচনের দিন একজন প্রিসাইডিং অফিসারসহ মোট ২৬ জনকে হত্যা করে এবং সারা দেশে ৫৮২টি স্কুলে ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগায় বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা। এরপর ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যা দিয়ে আবারো জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে ওই সময় ২৩১ জনকে হত্যা করে তারা। যাদের বেশির ভাগই পেট্রলবোমা এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায়। ওই ঘটনায় আহত হয় আরো ১ হাজার ১৮০ জন। সে সময় ২,৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি এবং ৮টি যাত্রীবাহী জাহাজে আগুন লাগিয়ে হামলা চালায় তারা। ওই সময় হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় সরকারি অফিসগুলো। আর, বিএনপি-জামায়াতের ভাঙচুর এবং আগুনে পুড়ে ৬টি ভ‚মি অফিসসহ ৭০টি সরকারি কার্যালয় নষ্ট হয়ে যায়। আর যে কোনো নির্বাচন পূর্বাপর সময়ে বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বারবার হামলার শিকার হয়েছে। সেটি ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় থেকে সবচেয়ে বেশি ঘটে আসছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পুলিশের জমা দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত হিন্দুদের ওপর দেশের ২১ জেলায় হামলা চালায়। আর ওই সময় মোট ১৬০টি হামলা ও অত্যাচারের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। আর বেশির ভাগ হামলার জন্যই বিএনপি-জামায়াত দায়ী বলেই মনে করা হয়। অত্যাচারের মধ্যে রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়কে আহত করা, তাদের ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া এবং লুটপাট। এবারের নির্বাচন ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন এলেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। আমরা বারবারই দাবি জানিয়ে আসছি, বাংলাদেশের রাজনীতি-প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতায়ন। কিন্তু সে বিষয়টি এর আগে উপেক্ষিত থাকলেও এবার একটু ভিন্নতা লক্ষ্য করছি আমরা। প্রশাসন-রাজনৈতিক দল-নির্বাচন কমিশন অনেকটা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে অন্যান্যবারের তুলনায়। এটি একটি ইতিবাচক দিক। আমরা অন্য সবার মতো সমানাধিকার-সম্মান নিয়ে এদেশে পূর্ণ মর্যাদায় থাকতে চাই। আমরা আস্থা রাখতে চাই রাজনৈতিক দল-প্রশাসনের ওপর যাতে আগের মতো আবারো কোনো ধরনের সহিংস হামলার শিকার হতে না হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App