×

জাতীয়

চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে প্রার্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:২২ এএম

চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে প্রার্থীরা
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বেঁধে দেয়া সময়সীমা অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয় গতকাল শুক্রবার সকাল আটটায়। প্রচারণার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে ছুটেছেন প্রার্থীরা। এরপর ভিন্ন কৌশলে ভোটের আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কৌশলগত বৈঠক, পোলিং এজেন্টদের দিক নির্দেশনা দেয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিজিটাল প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। আজ রাত পেরোলে কাল রবিবার ভোট উৎসব। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা কার হাতে আসবেÑ এই ভাগ্য নির্ধারণের দিন। ইতোমধ্যে ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সারা দেশে পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপার ও ভোট বাক্সসহ যাবতীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম। রায় দেয়ার অপেক্ষায় ভোটাররা। আর ভোটারদের সন্তুষ্টির জন্য শেষবারের মতো দোয়া চাইতে বিভিন্ন অলিগলি চষে বেড়িয়েছেন প্রার্থীরা। গতকাল মাঠের প্রচারণা বন্ধ থাকলেও বেড়েছে ডিজিটাল প্রচারণা। সরব ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। অধিকাংশ নিবন্ধিত দলের বর্জনে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার পাঁচ বছর পর এবারের নির্বাচনে সব দলের অংশ নেয়ায় বেশ চাপের মুখেই রয়েছেন প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে ভোটারদের মন জয় করার বিকল্প দেখছেন না তারা। ভোটের লড়াইয়ে নিবন্ধিত ৩৯ দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে এবার ১ হাজার ৮’শর বেশি প্রার্থী রয়েছেন। তবে মূল লড়াই হচ্ছে চির প্রতিদ্ব›দ্বী দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের সঙ্গে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের। এ লড়াইয়ে জয়ী হতে দিনরাত ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালিয়েছেন দুই জোটের প্রার্থীরা। গতকাল শুক্রবার মাঠের প্রচারণার পর তাদের ব্যস্ততা আরো বেড়েছে। কেন্দ্রভিত্তিক পোলিং এজেন্টদের নির্দেশনা, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সহযোগিতার পদ্ধতি চ‚ড়ান্তকরণ এবং নেতাকর্মীদের ভোটের দিনের কার্য পদ্ধতি নির্ধারণের ছক বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা। গতকাল সকালেই নির্বাচনী কার্যালয়ে যান ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সেখানেই তিনি সকালের নাস্তা খান। এরপর জুমার নামাজের পর হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট নজিবুল্লাহর জানাজায় অংশ নেন। এরপর আবার অফিসে ফিরে দলীয় কর্মীদের নির্দেশনা দেন। বাদ আছর কলাবাগানের আরেক নেতার মিলাদে অংশ নেন। পরে বিকালে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া দলীয় কর্মীদের নিয়ে আগেই তৈরি করা কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিগুলো গতকাল থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্লিপ দিচ্ছে এবং দোয়া চাচ্ছে। ব্যারিস্টার তাপস ভোরের কাগজকে জানান, ফেসবুকে ডিজিটাল প্রচারণা চলছে। সেইসঙ্গে নেতাকর্মীসহ স্থানীয় জনগণের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন। নাশকতার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন। শুধু ব্যারিস্টার তাপসই নন, কেন্দ্রভিত্তিক কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ২৯৯ আসনের প্রার্থীরা। রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। দুচোখের পাতায় ঘুম নেই তাদের। টেলিফোনেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ভোটার ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে। গতকাল অধিকাংশ প্রার্থীই নিজ নির্বাচনী এলাকার মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। ঢাকা-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস সকাল থেকেই শাজাহানপুরে নিজের বাসায় সময় কাটান। নিজস্ব আঙ্গিকে তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেয়ার কাজও করছেন। বাসায় আসা কর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া সময়েও বাসা থেকে তিনি খুব একটা বের হতে পারেননি। প্রতিদিনই তার বাসার সামনে থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ আসনে তার প্রতিদ্ব›দ্বী মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন ভোরের কাগজকে জানান, সকাল থেকে কেন্দ্রভিত্তিক পোলিং এজেন্ট সেট করা, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগসহ কেন্দ্রভিত্তিক বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। একই আসনের বাসদ প্রার্থী (মই মার্কা) শম্পা বসু ভোরের কাগজকে বলেন, পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করেছি। সকালে সিদ্ধেশ্বরী, বিকালে শান্তিনগর, সন্ধ্যায় সেগুনবাগিচার বিভিন্ন কলোনিতে দেখা করেছি। আগামীকাল (শনিবার) এজেন্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করব। রাজধানীর বাইরে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের মুহিবুর রহমান মানিক সারাদিন কেন্দ্রভিত্তিক পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করা, টেলিফোনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সরব ডিজিটাল প্রচারণা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী প্রচারণার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রচারণা। নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ থাকায় ডিজিটাল প্রচার মাধ্যমগুলো সরব হয়ে উঠেছে। প্রার্থীদের মতে, ডিজিটাল প্রচারণার কারণে অবৈধ প্রচারণা নেই বলেই চলে। কেননা, এখন সবার হাতে হাতে স্মার্ট ফোন রয়েছে, ফলে প্রার্থীদের প্রচারণার বিষয়গুলো খুব সহজেই ভোটারদের হাতে চলে যাচ্ছে। এ ডিজিটাল প্রচারণার বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্বাচনের আচরণবিধির আওতায় পড়ে না। তাই এ বিষয়ে কোনো ধরনের বাধা-নিষেধ নেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। তবে ডিজিটাল প্রচারণার বিষয়ে বাধা না থাকলেও গুজব রটিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানে থাকবে ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। তবে যারা গুজব ছড়াবে, সহিংসতা ও অপপ্রচার ছড়াবে তাদের বিষয়ে এনটিএমসি, বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে মনিটরিং করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ইসিকে জানিয়েই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এবার প্রায় সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের রায় যাদের পক্ষে যাবে তাদের হাতেই থাকবে আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের শাসনদণ্ড। এর মধ্যে ছয়টি আসনে ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন ভোটার প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেবেন। এ ছাড়া দুই রাজনৈতিক জোটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ছড়িয়েছে উত্তাপ। ফলে নির্বাচন নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকেই যাচ্ছে। অবশ্য ভোটের নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও। তিন স্তরের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর ৫ লাখ সদস্য মাঠে রয়েছেন। ফলে শুধু প্রার্থীই নয়, পাঁচ বছর পরের এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দেশের ষোল কোটি মানুষের ৩২ কোটি চোখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App