×

জাতীয়

আ.লীগের বাজি উন্নয়ন : বিএনপির বুলি গণতন্ত্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২৭ পিএম

আ.লীগের বাজি উন্নয়ন : বিএনপির বুলি গণতন্ত্র
জেলার ছয়টি আসনেই বড় দুই রাজনৈতিক জোট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা দুই ধরনের বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। নির্বাচনী প্রচারকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাতের ঘটনা ঘটলেও তুলনামূলক শান্ত ছিল যশোর। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবাধে সভা-সমাবেশ-গণসংযোগ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে বিএনপির ছিল নানা অভিযোগ। আওয়ামী লীগ বলেছে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার কথা। আর বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা গত ১০ বছরে দেশে খুন, গুম, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে দাবি করে ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার কথা বলেছেন। ভোটাররা জানান, মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা উন্নয়ন আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা এতটাই বেশি বলেছেন যে, স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তাতে চাপা পড়ে যায়। প্রার্থীরা আগের মতো আর সেভাবে স্থানীয় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন নাই। তবে ভোটারদের কাছে এসব কিছু ছাপিয়ে যশোরের কাক্সিক্ষত উন্নয়নই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থীরা বর্তমান সরকারের উন্নয়নমুখী নানা পদক্ষেপ ভোটারদের কাছে তুলে ধরেছেন। স্থানীয় উন্নয়নের মধ্যে যশোরে স্থাপিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্ক, মেডিকেল কলেজ, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনার প্রতিশ্রুতি, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন, ভৈরব নদ খনন প্রকল্প, বেনাপোল-যশোর সড়ক উন্নয়নসহ যশোরের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলো তুলে ধরে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন তারা। অন্যদিকে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা দেশে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ ও দেশব্যাপী বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের ওপর হামলার কথা বলে ভোটারদের সহানুভ‚তি আদায়ের চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তারা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য ধানের শীষে ভোট দেয়ার অনুরোধ করেন। যদিও সাধারণ ভোটাররা যশোরের সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চান। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের দ্রুত কাজ শুরু করার কথাও বলেছেন। এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে বেকারত্ব সমস্যা সমাধানসহ এ অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা। এসব বক্তব্যে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে রয়েছে নানা অভিযোগ ও শঙ্কা। যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে ২০ লাখ ৩০ হাজার ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ নতুন ভোটার এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এই ৬ সংসদীয় আসনে প্রতীক পাওয়া আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৩৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। যশোর-১ : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আফিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শেখ আফিল উদ্দিন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রচারণা চালিয়েছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকার বিকল্প নেই বলে দাবি করছেন তিনি। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা দলের সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলছেন, যশোরসহ দেশব্যাপী লোক দেখানো কিছু উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ব্যাপারে কেবল খালেদা জিয়াই আন্তরিক। তার কারামুক্তির স্বার্থে ধানের শীষে ভোট দেয়া উচিত। যশোর-২ : এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মে. জে. (অব.) নাছির উদ্দিন। তিনিও উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহবান জানান। অন্যদিকে এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের বিএনপি মনোনীত জামায়াত নেতা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদৎ হুসাইন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার পক্ষের লোকজন বলছেন, গত ১০ বছরে দেশে খুন, গুম, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে। এ থেকে মুক্তি পেতে তাদের প্রার্থীর মুক্তিসহ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। যশোর-৩ : এ আসন যশোর জেলার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় পুরো জেলার রাজনীতিসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড। এ আসনে বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদ নৌকা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সদ্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে যশোরসহ দেশের উন্নয়নের ফিরিস্ত তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সরকারের নানা চক্রান্ত উল্লেখ করে দেশে খুন, গুম, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে দাবি করে ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার কথা বলেছেন। যশোর-৪ : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায় নৌকা প্রতীক নিয়ে এবার হ্যাট্রিক করার মনোবাসনা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপি নেতা টি এস আইয়ুব বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে গৃহীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার স্বার্থে ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন। যশোর-৫ : এ আসনের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার কথা বলে ভোট চেয়েছেন। এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপি জোটের মুহাম্মদ ওয়াককাস ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। তবে প্রচার-প্রচারণায় তাকে খুব বেশি দেখা যায়নি। তিনি অনেকটাই আছেন আত্মগোপনে। তবে তার সমর্থকরা আওয়ামী লীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন। যশোর-৬ : এ আসনের প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক এমপি ও বিএনপির আবুল হোসেন আজাদ। বর্তমান সংসদ সদস্য ইসমত আরা সাদেক তার নির্বাচনী প্রচারণায় বলছেন, পরপর দুটি মেয়াদে তার সময়ে এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনার কাছেই দেশ নিরাপদ। আর সে বিবেচনায় ভোটারদের নৌকায় ভোট দেয়া উচিত। অন্যদিকে বিএনপির আবুল হোসেন আজাদ খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ‘সম্মান ও মর্যাদা’ প্রতিষ্ঠার জন্য ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন। তবে সব বিষয়ে হিসাব কষছেন ভোটাররা। মানুষের চিন্তাচেতনারও পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে রাজনীতির চর্চায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App