×

মুক্তচিন্তা

প্রতিকারহীন সড়ক দুর্ঘটনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৩১ পিএম

প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটে ১৪ জন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে বাস ও থ্রি-হুইলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ ১১ এবং বাগেরহাটের রামপালে বাস উল্টে ৩ জন মারা যায়। এমন কোনো দিন নেই যে, সংবাদ মাধ্যমে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর থাকে না। সড়কে এরকম প্রাণহানি মর্মান্তিক, অনাকাক্সিক্ষত।

সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস।

এ ছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ইদানীং মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো যেন ফ্যাশন অনেক চালকের কাছে। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে, কিন্তু সে আইনের ব্যবহার হয় না। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার জন্য যা-ই দায়ী হোক না কেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘সড়ক নিরাপত্তা দশক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ সময়ের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার বিষয়ে সদস্য দেশগুলো একমতও হয়েছে। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতে (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু দেশে সড়ক নিরাপত্তায় দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।

গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদকে। গাড়ি চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি এবং দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ ছাড়া সড়কের পাশে বিশ্রামাগার তৈরি, সিগন্যাল নিয়ে কড়াকড়ি, অনিয়মতান্ত্রিক রাস্তা পারাপার বন্ধ, গাড়িতে সিটবেল্ট বাঁধার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ সব নির্দেশনার অগ্রগতি কতদূর তা আমাদের জানা নেই। আমরা সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর যেন দীর্ঘ না হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App