×

জাতীয়

এগিয়ে যাচ্ছেন নারী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৫২ পিএম

এগিয়ে যাচ্ছেন নারী
ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়াম। মাঠে হিমালয় কন্যাদের মুখোমুখি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ৪৯ মিনিটে মনিকা চাকমভর ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন মাসুরা পারভীন। এরপর সমতা ফেরাতে একের পর এক চেষ্টা করেও লাল-সবুজের রক্ষণে চিড় ধরাতে পারেনি হিমালয়কন্যারা। ফলে ১-০ গোলের জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরে বাংলাদেশের দামাল মেয়েরা। খেলার মাঠ থেকে এভারেস্ট। সর্বত্র বিজয় নিশান উড়াচ্ছে বাংলাদেশের নারী। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিঙ্গ সমতা দূর করার দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ায় দ্বিতীয়। বর্তমানে কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতে কাজ করছেন দুই কোটি নারী। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ষষ্ঠ। দশম জাতীয় সংসদে দায়িত্ব পালন করছেন ৭২ জন নারী সংসদ সদস্য। সরকারের ১০ বছরে নারীর ক্ষমতায়নের অর্জন অনেক। বৈশ্বিক স্বীকৃতিও কম নয়। নারী শিক্ষার উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগে ভূমিকার জন্য গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জাতিসংঘের ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ অ্যাওয়ার্ডেও ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নারীর ক্ষমতায়নে ১০ বছরে বেশ কিছু আইন-নীতি ও বিধিমালা তৈরি করেছে সরকার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১, মনোসামাজিক কাউন্সেলিং নীতিমালা ২০১৬ (খসড়া), জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নকল্পে কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০১৫, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইন-২০১৪, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭। ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬’ অনুযায়ী নারীর ক্ষমতায়নে ১৪৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭২তম, যা দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো দেশের চেয়ে ভালো। বর্তমানে বিচারপতি, সচিব, ডেপুটি গভর্নর, রাষ্ট্রদূত, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মানবাধিকার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারী। নারীর উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি তাদের কাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতেও সহায়ক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন মাস থেকে দুই ধাপে ছয় মাস করা, সন্তানের পরিচয়ে বাবার সঙ্গে মায়ের নাম যুক্ত করা, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ছেলের পাশাপাশি একজন নারী উদ্যোক্তা নিশ্চিত করা, মেয়েদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প চালু, নগরভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন প্রকল্প, নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প, অতিদরিদ্র ১০ লাখ মহিলার দক্ষতা উন্নয়ন ও কারিগরি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া, নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা দেশে বিক্রির জন্য নারীবান্ধব বিপণন নেটওয়ার্ক ‘জয়িতা’ গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া তৃণমূলের নারীদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশব্যাপী ১২ হাজার ৯৫৬টি পল্লী মাতৃস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মা ও শিশুর যত্নসহ যাবতীয় বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ দেয়া হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোকেয়া দিবসে (৯ ডিসেম্বর) রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নারীদের সব ক্ষেত্রে সুযোগ দিতে হবে। তারা যেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে। তাহলে পরিবারেও তাদের গুরুত্ব বাড়বে। মেয়েদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গ্রামীণ নারীরা যেন কোনোভাবেই পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে তারা ইনকাম জেনারেটিং প্রোগ্রামের আওতায় ড্রাইভিং, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৮টি ট্রেডে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারীদের যাতায়াত ভাতাও দেয়া হচ্ছে। সারা দেশে হাসপাতাল স্থাপনের অংশ হিসেবে প্রায় ১৬ হাজার ৫শ কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে নারীদের প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। মেটারনাল হেলথ ভাউচার স্কিম চালুর মাধ্যমে গর্ভধারিণী মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে নিরাপদ সন্তান প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে নারী ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করেছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। ওসিসি থেকে জানুয়ারি ২০০৯ হতে ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত মোট ২১ হাজার ৪০৩ জন নারী ও শিশুকে প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই সেন্টারে টোলফ্রি হেল্পলাইন ১০৯ নম্বরে ফোন করে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু, তাদের পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট সবাই প্রয়োজনীয় তথ্য, পরামর্শসহ দেশে বিরাজমান সেবা এবং সহায়তা সম্পর্কে জানতে পারে। জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম এনডিসি বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে উন্নীত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন এবং নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৪৩২ জন শিক্ষিত বেকার নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকার নারীর ক্ষমতায়নে চলতি অর্থবছরে ১৮ লাখ ২০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সরকারি চাকরিতে নারী কর্মকর্তার হার ২০২০ সাল নাগাদ ২৫ শতাংশে উন্নীত করা, ২০ থেকে ২৪ বছরের নারীদের সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। অবশ্য নারীর ক্ষমতায়ন এখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারেনি বলে মনে করছেন নারীনেত্রীরা। এ ব্যাপারে মানবাধিকার আইনজীবী ও নারীনেত্রী এডভোকেট সালমা আলী বলেন, নারীরা বাইরে বেরিয়ে আসছেন এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে সমতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। একদিকে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ পুরস্কার পাচ্ছে, অন্যদিকে যত্রতত্র যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে এখনো ক্ষমতায়নের সুফল বঞ্চিত বাংলার নারীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App