×

জাতীয়

সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:২০ পিএম

সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল
শুধু স্বাধীনতা অর্জন করেই থেমে থাকেনি বাংলাদেশ। হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এখন উন্নয়নশীল দেশ, বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। দেশে দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশের নিচে এবং চরম দারিদ্র্য নেমে এসেছে ১৩ শতাংশেরও নিচে। গত আট বছরে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজিতে তৃতীয় এবং আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন সপ্তম স্থানে। খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সুবিধাবঞ্চিত দেড় কোটি মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্প। সারা দেশেই এখন বিজলি বাতির চমক। দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষই ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ পেয়ে গেছেন। মরণব্যাধি ক্যান্সারের ওষুধ, হেপাটাইসিস সি ও রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিনসহ জটিল রোগের ওষুধ তৈরি করে চমকে দিয়েছেন দেশীয় বিজ্ঞানীরা। চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ১৫০টি দেশে। কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে মিলছে ৩০ ওষুধ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। সারা দেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮ হাজার ২০০ ই-পোস্ট থেকে ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছেন জনগণ। দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকীর সংখ্যা এখন ১৩ কোটিরও বেশি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে ৮ কোটি। দেশে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ৫০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। শুধুই দেশেই নয় লাল-সবুজের বিজয় পতাকা উড়ছে মহাবিশ্বে। মহাকাশের ৫৭তম স্যাটেলাইটের গর্বিত মালিক এখন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই অসামান্য অর্জনের পেছনে রয়েছে এক রক্তাক্ত ইতিহাস। পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে জাতি। অনেক রক্ত ও ত্যাগের মূল্যে এই যুদ্ধ পূর্ণতা পায় ওই বছরই ১৬ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির গৌরবময় বিজয়ের ৪৭ বছর পূর্ণ হলো আজ। এ জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে গৌরবের মহিমায় সমুন্নত অনন্য এই দিনটি। মহান বিজয় দিবস আজ। দেশের সর্বত্র আজ আনন্দ-উৎসব। বাঙালির জাতীয় জীবনের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই দিন। এ বছর দিবসটির তাৎপর্য অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। আর ১৩ দিন পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যেই নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার বর্জনের আওয়াজ উঠেছে সারা দেশে। জাতি আজ আনন্দ-উৎসব ও শোক-শ্রদ্ধার এক অপূর্ব সম্মিলনে বিজয়ের দিনটি উদযাপনের পাশাপাশি সে শপথেও বলীয়ান হবে। এবারের বিজয় দিবসে বাঙালি জাতি তাই আবারো শপথ নেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করার এবং একাত্তরের পরাজিত শত্রæদের নির্মূল করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে সফল ও সার্থক করে তোলার। শপথ নেবে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপ দিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার। এবারের বিজয় দিবসে বাঙালির শপথ হবে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও হানাহানিমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। এবারের বিজয় দিবসে যে কোনো মূল্যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শপথ নেবে বাংলার মানুষ। বিজয় দিবসের দিনে আজ বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ জাতির উদ্দেশে বাণী দিয়েছেন। পৃথক পৃথক এসব বাণীতে তারা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটি। কর্মসূচি : সূর্যোদয়ের সময় ঢাকার তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনি করে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা করা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সন্ধ্যায় আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। সূর্যোদয়ের ক্ষণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাবেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী শ্রদ্ধা জানাবেন সকাল ৭টায়। এর আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধারা, বিদেশি ক‚টনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত-প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। সংবাদপত্রগুলো বিজয়ের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগ : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূূর্যোদয়ের ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৬.৩৪টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মাজার জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিজয় দিবস পালনের জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App