×

বিনোদন

সময়ের প্রয়োজনে যুদ্ধদিনের স্মারক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৩৭ পিএম

সময়ের প্রয়োজনে যুদ্ধদিনের স্মারক
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিকশিত শিল্প মাধ্যম হিসেবে সমাদৃত মঞ্চনাটক। যুদ্ধ শেষ হবার পরপরই এদেশে শুরু হয় টিকেটের বিনিময়ে নিয়মিত নাট্যচর্চা। দেশজুড়ে শুরু হয় নবোদ্যমে নাট্য আন্দোলন। স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রায় সব আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রেখেছে মঞ্চনাটক। বাংলাদেশের মঞ্চনাটককে বলা হয়- মুক্তিযুদ্ধের ফষল। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নাটকে কতটা উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ? মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যে নাটকগুলো মঞ্চে এসেছে সেগুলোর শিল্পমান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে? তবে এর মধ্যে যে কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মঞ্চনাটক শিল্পমান বজায় রেখে নিয়মিত মঞ্চায়নে প্রশংসিত হয়েছে তার মধ্যে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রযোজনা ‘সময়ের প্রয়োজনে’ অন্যতম। ২০০৫ সালে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয় মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে। জহির রায়হানের ছোট গল্প ‘সময়ের প্রয়োজনে’ অবলম্বনে নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন ড. মোহাম্মদ বারী। নাটকের অভিনয় শুরু হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গান ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ এর মধ্য দিয়ে। নাটকের শুরুতেই দেশাত্মবোধক এই গানটি দেশের প্রতি ভালোবাসার কথা ব্যাক্ত করে যা হৃদয় ছুঁয়ে যায় দর্শক সারিতে বসা প্রতিটি দর্শকের। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংবাদিক জহির রায়হান মুক্তাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্পে গেলে ক্যাম্প কমান্ডার তার হাতে তুলে দেন এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরি। জহির রায়হান ডায়েরি পড়তে শুরু করার মধ্য দিয়েই নাটকটি এগিয়ে চলে। একে একে দর্শকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের সংলাপে উঠে আসে যুদ্ধের পরিস্থিতি। আসে সা¤প্রদায়িক বিষাক্ত ছোবলের কথা। পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণের বিষয়টিও নাট্যকার চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। জহির রায়হানের ছোট গল্পের ভিত্তিতে গড়ে উঠলেও নাটকটি তার মূলভিত্তি ছাড়িয়ে বিস্মৃত হয়েছে বহুদূর। মূল গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নাট্যকারের তৈরি করা চরিত্রগুলো দর্শকের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে গল্পটিকে। এই প্রযোজনাটি ২০০৫ সালে থিয়েটার আর্ট ইউনিট মঞ্চে এনেছিল একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা এবং রাজাকারদের মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কে জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে। তাই নাটকে তুলে ধরা হয়েছে যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতির আভাসও। বঙ্গবন্ধু হত্যা, প্রতিক্রিয়াশীলদের অশুভ তৎপরতা, রাজাকারদের আবার ক্ষমতার কাঠামোতে স্থান পাওয়া বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের গৌরবগাথা মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনার একটি প্রতিচ্ছবি এই নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ বেদনার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সেই সোনালি সময়টাকে তুলে আনা হয়েছে এই নাটকে। নাটকে সেট-লাইট-সঙ্গীতের সমন্বয় মুগ্ধ করেছে। পুরোটা জুড়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়কেই তুলে ধরা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মামুনের ডায়েরিতে উঠে আসা রবি দা, সুশীল, বাবুসহ ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের সেই যুদ্ধ দিনের দিনগুলোকে সুনিপুণভাবে মঞ্চে তুলে এনেছেন অভিনয় শিল্পীরা। নাটকে নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নয়, মুখ্য হয়ে উঠেছে গল্প। আর সেই গল্পকে জীবন্ত করে তুলেছেন অভিনয় শিল্পীরা। চমৎকার সব সংলাপের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নানা বিশ্লেষণও উপস্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ক্যাম্প কমান্ডার প্রশ্ন করেন- ‘আমরা কেন যুদ্ধ করছি? তখন একজন মুক্তিযুদ্ধ বলেন- আমরা দেশের জন্য যুদ্ধ করছি। কমান্ডার পাল্টা বলেন- ‘দেশ তো ভ‚গোলের ব্যাপার। হাজার বছরে যার হাজারবার সীমানা পাল্টায়, ভবিষ্যতেও পাল্টাবে।’ তখন ক্যাম্পের সব মুক্তিযোদ্ধার মনে প্রশ্ন- ‘আমরা তাহলে কিসের জন্য যুদ্ধ করছি? এই পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধা মামুন বলে উঠে- আমরা আসলে সময়ের প্রয়োজনে যুদ্ধ করছি। এটা সুবর্ণ সময়। খুব কম মানুষের ভাগ্যে এমন সময় আসে।’ এমন দারুণ সব সংলাপ নাটকটিকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ‘সময়ের প্রয়োজনে’ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের অন্যতম সফল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মঞ্চনাটক। এই নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় করছেন- মোহাম্মদ বারী, প্রশান্ত হালদার, সেলিম মাহবুব, কামরুজ্জামান মিল্লাত, সাথী রঞ্জন দে, সাইফ সুমন, ফেরদৌস আমিন বিপ্লব, চন্দন রেজা, সৈয়দ অলক, কামাল রায়হান, আবু সুফিয়ান, নাহিদ সুলতানা, প্রদীপ বিশ্বাস, জায়েদ হোসেন, মাহফুজ সুমন, নুরুজ্জামান বাবু, এস আর সম্পদ, সরকার জামান, সুমন আকন্দ, রাকিব প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App