×

জাতীয়

নিরাপত্তার ছক চূড়ান্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:১৬ পিএম

নিরাপত্তার ছক চূড়ান্ত
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ১৪ দিন। এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা প্রধানদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছেন। ভোট নির্বিঘ্নে করতে কীভাবে মাঠ সামাল দিতে হবে সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। ইসির নির্দেশনা পেয়ে নির্বাচনে নিরাপত্তার ছক চ‚ড়ান্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে তিন শ্রেণিতে পাঁচ স্তরে তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তার ছক। ওই ছক নিয়ে আগামী সপ্তাহে মাঠে নামবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ। এরপর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে চ‚ড়ান্ত হবে তাদের কর্মপন্থা। তবে এবার গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাচ্ছে সেনাবাহিনী। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ইসির নির্দেশনার পর নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে নিরাপত্তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। ভোটের মাঠ নির্বিঘœ রাখতে তৎপর থাকবে প্রায় দুই লাখ পুলিশ ও সাড়ে ৬ হাজার র‌্যাব সদস্য। ভোটকেন্দ্রগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ছক এঁকেছে পুলিশ। আগে পরে মিলিয়ে স্ট্রাকিং ফোর্স হিসেবে ১০ দিনের জন্য মাঠে থাকবে র‌্যাব। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি ক্ষমতা নিয়ে ভোটের ৬ দিন আগে মাঠে নামবে সেনাবাহিনী। নামবে ৯৬০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা মূলত থাকবে কেন্দ্রের মূল শৃঙ্খলার কাজে। এবার কাজে লাগানো হবে গ্রাম পুলিশ সদস্যদেরও। এ ছাড়াও সংখ্যালঘু ও নারী ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সে বিষয়েও বিশেষ খেয়াল রাখবে পুলিশ। সবমিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২ লাখেরও বেশি সদস্য আগামী সপ্তাহে একযোগে মাঠে নেমে সমন্বয় করে কাজ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সূত্রমতে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতা ও জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব রকম প্রস্তুতি নিতে বলেছে ইসি। ভোটকেন্দ্রে হামলা, ব্যালট পেপার ও বাক্স যাতে ছিনতাই হতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। বিশেষ করে তৃতীয় কোনো শক্তির যাতে উত্থান ঘটতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। অপর একটি সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রে নাশকতার পুরনো মামলাগুলো নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে উঠে আসা তখনকার নাশকতাকারীদের নাম পরিচয় ধরে ধরে তাদের বর্তমান অবস্থানের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, পাবনা, কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিশেষ নজরদারি চলছে। নাশকতা মামলার আসামিদের ব্যাপারে তাদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ছাড়া জঙ্গিদের পরিকল্পনা, তৎপরতা এবং পুরনো সব মামলা এবং কর্মকাণ্ডের দিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে তৃতীয় কোনো পক্ষ বা শক্তি ও বিদেশি কোনো গোষ্ঠী যাতে ভোটের মাঠে উত্তাপ সৃষ্টি করতে না পারে গোয়েন্দারা সেদিকে কড়া নজর রাখছে বলে জানা গেছে। র‌্যাব ও পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা ধরে ধরে নিরাপত্তা ছক সাজানো হয়েছে। বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় যাতে ভোটের আগে ও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সেজন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটের দিন সন্ধ্যা থেকে কেন্দ্র্রভিত্তিক ফলাফল ঘোষণার সময় ও পরে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় আবার হলেও যাতে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেইসব দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ-র‌্যাব। এদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০, ১৩১ ও ১৩২ ধারায় এবার সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩২ ধারার মধ্যে ১৩১ ধারায় সেনাবাহিনীর কোনো কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারকে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতেও জননিরাপত্তা বিপদগ্রস্ত হওয়ার মতো সমাবেশ ভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেয়া আছে। নির্বাচনী মাঠ সাজানো প্রসঙ্গে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন গতকাল শুক্রবার ভোরের কাগজকে জানান, পুলিশ সবসময় মাঠে থাকে। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে। থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়। তারা নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়, নির্বাচনের দিন এবং পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করবে পুলিশ। সেনাবাহিনী, বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে পুলিশ কাজ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত পরিপত্র চলতি সপ্তাহে জারি হবে। যাতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও এপিবিএন কতদিন মাঠে থাকবে তা উল্লেখ করা হবে। এরপর জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে সাজানো হবে নিরাপত্তা ছক। আনোয়ার হোসেন বলেন, কেন্দ্রগুলো ৩ ভাগে চিহ্নিত করা হয়। মহানগর, মহানগরের বাইরে সমতল এলাকা ও পাহাড়,পর্বত, হাওর ও দ্বীপ এলাকা। ক্যাটাগরি বিবেচনায় এক থেকে পাঁচজন পর্যন্ত সদস্য কেন্দ্রের দায়িত্ব পাবেন। মূলত পাঁচ দিনের জন্য কেন্দ্রের নিরাপত্তা বিবেচনা করে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ১০ দিনের জন্য ১২টি ইউনিটের সাড়ে ৬ হাজার র‌্যাব সদস্য স্ট্রাকিং ফোর্স হিসেবে ভোটের মাঠে থাকবে। নির্বাচনের আগে ৮ দিন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরের দিন র‌্যাব মাঠে থাকবে। তারা সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App