×

জাতীয়

গুরুত্বপূর্ণ ১১ মন্ত্রণালয়ে চুক্তিতে সচিব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:২৯ এএম

গুরুত্বপূর্ণ ১১ মন্ত্রণালয়ে চুক্তিতে সচিব
প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বেড়েই চলছে। এ মুহূর্তে কমপক্ষে ১১টি মন্ত্রণালয়ে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন। এতে একদিকে যেমন পদোন্নতির আশায় থাকা যোগ্য কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে প্রশাসনে বাড়ছে ক্ষোভ। বেশির ভাগ পদোন্নতি পাচ্ছেন সরকার-সমর্থক প্রভাবশালী কর্মকর্তারা। ২০১১ সালে সরকারি কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৫৭-৫৯ বছর করা হয়। এর দুই বছর পর মুক্তিযোদ্ধা কোটার কর্মচারীদের অবসরের বয়স আরো এক বছর বাড়িয়ে করা হয় ৬০ বছর। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকে প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ কমিয়ে আনার বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরকার প্রধানের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের মধ্য মেয়াদ পর্যন্ত অনেক সচিবকে নিয়মিত অবসরে যেতে দেখা গেছে। সরকারের বয়স বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকনিক্যাল অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যেখানে ঘাটতি থাকে শুধু সেখানেই চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ হতে পারে। সাধারণ প্রশাসনে চুক্তির কারণে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা শীর্ষ পদে বসার অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন না, যা একজন যোগ্য কর্মচারীর শুধু স্বপ্ন নয়, অধিকারও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সর্বশেষ পে-কমিশনের সুপারিশেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সচিব ও সিনিয়র সচিবদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও সাধারণত মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে রেখে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় না। কিন্তু বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সৌভাগ্যের অধিকারী। তার স্বাভাবিক চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৩ ডিসেম্বর। এর আগেই তাকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিসিএস ১৯৮২ সালের নিয়মিত ব্যাচের কর্মকর্তা শফিউল আলম ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পান। দীর্ঘদিন ধরে চুক্তিভিত্তিক সচিব দিয়ে চলছে আইন মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ। লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক ইতোমধ্যে তিন দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। সব মিলিয়ে পাঁচ বছর ধরে চুক্তিতে দায়িত্ব পালন করছেন এ কর্মকর্তা। ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তার চুক্তির মেয়াদ আছে। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হককে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট অবসর-উত্তর ছুটি বাতিল করে একই পদে দুই বছরের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। বিচার বিভাগের কর্মকর্তা জহিরুল হক আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে নিয়োগ পান। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শহীদুল হকের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। এর অনেক আগেই তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার আদেশ জারি হয়েছে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে শহীদুল হককে অবসর-উত্তর ছুটি বাতিলের শর্তে আগামী ৩১ ডিসেম্বর বা যোগ দেয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে পদায়ন করা হলো। শহীদুল হক ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ৩১ জুলাই তাকে সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ২০১৭ সালের মে থেকে দুই বছরের জন্য চুক্তিতে আছেন। এর আগে তিনি ২০১৫ সালে সচিব পদে পদোন্নতি পান। গোপালগঞ্জের অধিবাসী শহীদ উল্লা খন্দকার প্রশাসনের অল্প কিছু সচিবদের মধ্যে অন্যতম যিনি একসঙ্গে সচিব পদে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। জানতে চাইলে শহিদ উল্লা খন্দকার ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের চলমান উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা রাখতে আমাকে এখানে আরো দুই বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আশা করছি, আমাদের বিপুলসংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করা সম্ভব হবে। তথ্যসচিব আবদুল মালেক বিদ্যমান সচিবদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী সচিব হিসেবে প্রশাসনে পরিচিত। এর আগে তিনি স্থানীয় সরকার সচিব থাকলেও হঠাৎ করেই তথ্যসচিব পদে বদলি করা হয় তাকে। তারও আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ ছিলেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর তার অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা। বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা আবদুল মালেকও এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আখতার হোসেন ভঁ‚ইয়াও আগামী ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়ার তারিখে অবসরে যাওয়ার সময় নির্ধারিত আছে। তার দেড় মাস আগে তাকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রশাসন ক্যাডারের ষষ্ঠ ব্যাচের এ কর্মকর্তা ১৯৮৬ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভঁ‚ইয়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব থাকার সময়ে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে বিশ^ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে তার অবসরে যাওয়ার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও এখনো পর্যন্ত সরকারে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে ওই দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন পবন চৌধুরী। দুই বছরের চুক্তিতে মোশাররফ হোসেন ভ‚ঁইয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব পদে যুক্ত আছেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত বেড়েছে। সিনিয়র সচিবের বেতন ও সুবিধাসহ তিনি পদটি উপভোগ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিএস ৮৫ ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ২০১৪ সালেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার কোনো অগ্রগতি আজ পর্যন্ত হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App