×

পুরনো খবর

নজিবুল বশরের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:২০ পিএম

নজিবুল বশরের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি। নির্বাচনী এলাকায় বেশ কোণঠাসা অবস্থায় থাকা নজিবুল বশরকে এবার মোকাবেলা করতে হবে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ নির্বাচনে আগে থেকে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার। এমনকি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বহিষ্কারের খড়গ মাথায় নিয়ে এ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। যিনি ১৯৮৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে মহাজোটের প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির বিরুদ্ধে এবার নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের একাংশের নেতা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারি। সম্পর্কে তারা চাচা-ভাতিজা। নজিবুল বশর ভোটে লড়ছেন নৌকা প্রতীকে। আর ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকে মনোনয়ন নিয়েছেন সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারি। তিনি প্রথমবারের মতো ভোটের মাঠে নেমেছেন। স্থানীয়রা জানান, এই আসনে দলীয় প্রার্থী দিতে কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী মহলে চিঠি দিয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের চিঠিতে বলা হয়, মহাজোটের শরিক দল নয়, নিজ দল থেকে প্রার্থী চায় উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রার্থী না হলে অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে নেতাকর্মীরা কাজ করবে না বলেও উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে ফটিকছড়ি আসনে মাইজভাণ্ডারি তরিকতপন্থিদের প্রায় এক লাখ ভোট রয়েছে যেখানে এবার ভাগ বসাবেন সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারি। ফলে মহাজোট প্রার্থী নজিবুল বশরের জয়ের বিষয়টি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ২৫ জন। যাদের সবাই নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির বিপক্ষে। এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পর তাকেই সমর্থন দিয়েছেন বাকি মনোনয়ন বঞ্চিতরা। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী বিদ্রোহী প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের জন্য মাঠে নেমেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিমুদ্দিন মুহুরী বলেন, ‘অনেক দিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলন করে আসছেন। তৃণমূলের দাবি উপেক্ষা করে দলের বাইরে জোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ফটিকছড়িতে এবার বিতর্কিত প্রার্থী নজিবুল বশরকে চাই না, আমরা দলীয় প্রার্থী চাই। কোনো বিপদে-আপদে এমপিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দূরে থাক, এলাকার মানুষও কাছে পায়নি। আশা করছি, শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী এ আসনে দলীয় প্রার্থীর হাতেই নৌকা প্রতীক দেবেন।’ দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি গত পাঁচ বছরে এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেননি। অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক তো রাখেননি বরং বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ উসকে দিয়েছেন। গত ১ ডিসেম্বর ফটিকছড়ি উপজেলা সদরে মহাজোটের প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারিকে নৌকা প্রতীক দেয়ার প্রতিবাদে এবং আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে জুতা মিছিল করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি ভাণ্ডারি এলাকার সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে রাজনীতি করছেন। ২০০১ সালে তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছিলেন। তখন তিনি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সংগঠিত করেন। গতবার মহাজোট থেকে এমপি হয়ে ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরোধের জন্ম দেন ভাণ্ডারি।’ তিনি বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার জন্য। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ব। দল বহিষ্কার করলে করুক।’ তবে মহাজোট প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় সংগঠন। দলের ভেতর নানা মত থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। এখানে দলের চাইতে মার্কা বড়। তাই নৌকা প্রতীক যেহেতু আমাকে দেয়া হয়েছে, আশা করি, সবাই আমার পক্ষেই কাজ করবেন। গত পাঁচ বছরে ফটিকছড়িতে কয়েকশ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। অনেক বড় বড় প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান। এক সময়ের সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে পরিচিত ফটিকছড়িতে এখন মানুষ শান্তিতে আছে। নিশ্চয়ই এসবের মূল্যায়ন করবেন ভোটাররা। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে ফটিকছড়ি থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি। ১৯৯৬ সালে তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের তৎকালীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল আনোয়ার নির্বাচিত হন। এরপর সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালে রফিকুল আনোয়ার ও নজিবুল বশরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রফিকুল আনোয়ার। রফিকুল আনোয়ারের মৃত্যুর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের দ্বর কারণে জয় পায় বিএনপি। এরপর নজিবুল বশর তরিকত ফেডারেশন গঠন করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বাঁধেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি এ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App