সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৫ পিএম
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে একটি নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর নীতিমালার বিষয়বস্তু তুলে ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অবগত করা হয়। তারপরও এক শ্রেণির শিক্ষক নামধারী আইন ও সরকারি নির্দেশনা অবজ্ঞা করেই চলেছে।
গত সোমবার স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দেয়ার নির্দেশ এবং শিক্ষার্থীর সামনে বাবা-মাকে অপমান করায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রধান শাখার অরিত্রী অধিকারী (১৫) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সে প্রভাতী শাখার ইংলিশ ভার্সনের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
জানা যায়, অরিত্রীর বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রবিবার ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। স্কুলে মোবাইল নেয়া নিষেধ থাকা সত্ত্বেও অরিত্রী মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে মোবাইলটি দেখতে পেয়ে শিক্ষকরা তা নিয়ে যান এবং অরিত্রীকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন।
পরদিন সকালে পরীক্ষা দেয়ার জন্য স্কুলে গেলে তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে তার বাবা-মাকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রিন্সিপালের কক্ষে গিয়ে তারা এই বিষয়ে ক্ষমা চান; এ সময় প্রিন্সিপাল উত্তেজিত হয়ে অরিত্রীসহ তাদের রুম থেকে বের করে দেন। বাসায় ফিরে সবার অগোচরে ক্ষোভে অপমানে অরিত্রী ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।
ঘটনার বর্ণনা দেখে মনে হচ্ছে কোনো সুস্থ শিক্ষক এমন আচরণ করতে পারেন না। মানসিকভাবে অসুস্থ লোক কীভাবে শিক্ষকতার দায়িত্ব পান সে প্রশ্নও উঠে আসছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা একটি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় এ নির্যাতন শারীরিক ও মানসিক পর্যায়ে হয়ে থাকে, যা মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন। অথচ এ ব্যাপারে শিক্ষকরা তেমন সচেতন নন। শাস্তি কখনই শিক্ষার্থীর চরিত্র বা আচরণে পরিবর্তন ঘটায় না।
এসবের পাশাপাশি আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে ‘কিশোর কিশোরীদের মনোবিজ্ঞান’ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের, বিশেষ করে শিক্ষকদের তেমন কোনো ধারণা নেই। তাই তারা মনে করেন শাস্তি প্রদানই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি থেকে সুরক্ষার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যে ঘটনা ঘটেছে, তা কেবল আত্মহত্যা নয়, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। একই সঙ্গে অভিযোগের আঙুল যার বিরুদ্ধে উঠছে সেই প্রিন্সিপালের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন। পাশাপাশি দেশের সব স্কুল শিক্ষার্থীবান্ধব হোক, শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল হোক এটাই চাইব আমরা। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন সবার আগে জরুরি।