×

বিনোদন

নায়কের জন্য হাহাকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৪৮ পিএম

নায়কের জন্য হাহাকার
প্রায়ই শোনা যায়, বদলে গেছে ঢাকাই সিনেমা। কিন্তু কতটা বদলেছে? একটা চেনা ছকের গল্প, নায়ক-নায়িকার পাঁচটা গান আর কিছু অ্যাকশন দৃশ্য এই ফর্মুলা থেকে কতটুকু বেরিয়ে এসেছে সিনেমা? অনেক পরিবর্তনের আওয়াজ শোনা গেলেও বাণিজ্যিক সিনেমায় এখনো ফর্মুলা মেনেই ছবি নির্মাণ করছেন নির্মাতারা। একটি ছবির গল্পে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রকে যদি ‘নায়িকা’ বলা হয়, তবে সেই নায়িকার চরিত্রে গত কয়েক বছরে কি কোনো অদল-বদল দেখা যাচ্ছে? দর্শকরা নিশ্চয়ই বলবেন, পুরনো গতেই নায়িকার চরিত্র সাজাচ্ছেন নির্মাতারা। যেখানে নায়িকার জন্য একজন নায়ক থাকেন বাঁধা-ধরা। যাতে কোনো নড়চড় দেখা যায় না। শীর্ষস্থানীয় নায়িকারা তো বটেই, পেছনের সারির নায়িকারাও নায়ক ছাড়া ছবির কথা ভাবতে পারেন না সিনেমার এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও। মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার বাইরে নায়কহীন চরিত্র প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু মূলধারার সিনেমার গল্পে নায়ক ছাড়া কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রের কথা ভাবাই যায় না। নায়কের চরিত্র যত অনুলেখ্যই হোক না কেন, নায়ক একজন থাকতেই হবে। অন্যথায় কোনো নায়িকাই ছবি করতে রাজি হোন না। এ কথা জানাচ্ছেন নির্মাতারা। ব্যতিক্রমী গল্পের অনেক প্রস্তাব নায়িকাদের কাছে গেলেও নায়িকারা সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন শুধুমাত্র গল্পে একজন পুরুষ চরিত্র নেই বলে। এ কারণে নায়িকাদের কখনোই নায়কবিহীন ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় না। গল্পের চেয়ে তারা প্রাধান্য দেন নায়কের উপস্থিতিকে। সৃষ্ট চরিত্রগুলো তখন পার্শ অভিনেত্রীদের কাছে চলে যায়। নায়িকাদের একটু সাহসের অভাবে অনেক আকর্ষণীয় নারী চরিত্র নিয়ে ছবি নির্মাণ স্থগিত হয়ে যায়। কিংবা ছবি নির্মিত হলেও সেই ছবিতে কোনো নায়িকা নয়, চরিত্রাভিনেত্রীকে দেখা যায়। এর ফলে নায়িকারাই ক্ষতিগ্রস্ত হোন। সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও তারা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন না। সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার নেপথ্যে যাই ঘটুক, নায়িকাদের নায়কবিহীন ছবির প্রতি অনীহার বিষয়টি কিন্তু অপ্রকাশিত থাকেনি। ‘পোড়া মন টু’র নির্মাতা রায়হান রাফি ‘দহন’ নামে একটি ছবি নির্মাণের শুরু থেকেই নায়িকা বিষয়ক জটিলতায় পড়ে যায়। ‘পোড়া মন টু’র জুটি সিয়াম-পূজা ‘দহনে’ অভিনয় করছেন এটা জানা গেলেও জটিলতা বাধে ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়ে। এই চরিত্রে প্রথমে বাঁধনের অভিনয় করার ঘোষণা আসে। বিশাল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাঁধনের অন্তর্ভুক্তির খবর জানানো হয়। কিন্তু প্রায় এক দশক পর সিনেমায় ফিরে এলেও বাঁধন ‘দহন’র সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেননি। তিনি ছবির ইউনিট থেকে বেরিয়ে যান। তার জায়গায় আসেন পূর্ণিমা। তিনিও দীর্ঘদিন সিনেমা থেকে দূরে। তার কামব্যাক ছবি হিসেবে ‘দহন’ হয়ে ওঠে আলোচিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পূর্ণিমাও ‘দহন’ ছেড়ে দেন। তার জায়গায় আসেন মম। কেন ‘দহন’র একটি চরিত্রের জন্য এতজনের আগমন-প্রস্তান? কারণ কি এটাই যে, আলোচিত চরিত্রটি নায়কবিহীন? তাই সবাই বিচার-বিশ্লেষণ করে সরে গেছেন। মুখে স্বীকার না করলেও ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টদের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না যে, নায়কবিহীন ছবির প্রতি নায়িকাদের এলার্জিই ভালো চরিত্রের সঙ্গে তাদের আপস করতে বাধ্য করে। গত শুক্রবার ‘দহন’ মুক্তি পেয়েছে সারাদেশে। মম অভিনীত চরিত্রটি কতখানি শক্তিশালী আর মম নায়ক ছাড়া অভিনয় করে তার ক্যারিয়ারে কোনো ভালো চরিত্র যোগ করতে পারলেন কিনা সেটা এ সপ্তাহের মধ্যে সবাই জেনে যাবেন। ইতিহাস বলছে, নায়কবিহীন ছবিতেও নায়িকারা ঝলসে উঠতে পারেন। আর ছবি সাফল্য না পেলেও অভিনেত্রী তার সাহসিকতার জন্য ঠিকই প্রশংসা কুড়িয়ে নেন। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইতিহাস’ এমনই একটি ছবি। এ ছবির নায়ক কাজী মারুফ আর নায়িকা রত্না। কিন্তু প্রথাগত নায়িকার চরিত্রে অভিনয় না করেও ছবির প্রাণ ছিলেন মৌসুমী। ছবির মূল নারী চরিত্রটি অর্থাৎ মারুফের বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন মৌসুমী। এই চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য মৌসুমী ভূয়সী প্রশংসা পান সর্বমহল থেকে। দাবি ওঠে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের। মৌসুমীর মতো তুমুল প্রশংসা না পেলেও শাবনূর নায়কবিহীন চরিত্রে অভিনয় করতে দ্বিধা করেননি। পি এ কাজল পরিচালিত ‘পিরিতির আগুন জ্বলে দ্বিগুণ’ ছবিতে নায়ক ছিলেন ইমন আর নায়িকা ছিলেন বিন্দু। মৌসুমীর মতো শাবনূরও নায়কের বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি সাফল্য পায়নি। তবে হয়েছিল আলোচিত। শাবনূর নতুন ধরনের চরিত্রে নিরীক্ষা করার জন্য পেয়েছেন সাধুবাদ। মৌসুমী-শাবনূরের মতো এমন ব্যতিক্রমী চরিত্রের প্রতি আগ্রহ অনেক নায়িকার মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় না। নির্মাতারা ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও কাক্সিক্ষত গল্প নিয়ে কাজ করতে ব্যর্থ হোন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চেনা ছক থেকে বেরিয়ে এসে নায়িকাদের ভিন্নধর্মী কাজের দিকে ঝোঁকা উচিত। তবেই ঢাকাই সিনেমা নির্দিষ্ট গণ্ডি থেকে বেরুতে পারবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App