×

পুরনো খবর

নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ-বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৪:৩৮ পিএম

নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ-বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ২৮ দিন বাকি। তবে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে আরো সপ্তাহখানেক পর। তাই বলে বসে নেই কোনো প্রার্থীই। এই সময়টায় দলীয় নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতেই ব্যস্ত সবাই। সিলেটেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দেশের রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন সিলেট-১ এ এবারের নির্বাচনে মূল লড়াইটা আওয়ামী লীগ-বিএনপির। আওয়ামী লীগে একক প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে থেকেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন সাবেক এই কূটনীতিক। মনোনয়নপত্র জমা দেবার পর থেকে দলের নেতাকর্মীদের এক করতে বেশ কয়েকটি ঘরোয়া বৈঠক করেছেন। ইতোমধ্যেই দলে বাজতে শুরু করেছে ঐক্যের সুর। বড়ভাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উত্তরসূরি হিসেবে সিলেটের রাজনীতিতে এলেও দলীয় তৃণমূল কর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা যেমন বেশি, তেমনি পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবেও রয়েছে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে সিলেট আওয়ামী লীগে নেতায় নেতায় যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা বহুলাংশে মিটিয়ে ফেলেছেন ড. মোমেন। তাই ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীদের নিয়ে জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী সিলেট আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, আসলে আমাদের মধ্যে কখনোই দূরত্ব ছিল না। আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। এখনো ঐক্যবদ্ধ আছি। তবে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোমেন সাহেব মনোনয়ন পাওয়ার পর সেটাও দূর হয়ে গেছে। এখন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শতভাগ ঐক্যবদ্ধ। আর আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই ঐক্যের কারণেই আমাদের জয়লাভ সহজ হবে। তিনি আরো বলেন, সিলেট-১ আসনে সরকারের উন্নয়ন বার্তা আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরছি। শতভাগ বিদ্যুৎ, প্রশস্ত রাস্তাঘাট, নাগরিক সুবিধা এসব নিয়ে আমরা সবাই ভোটারদের কাছে যাব। আমরা আশা করি এই বিজয়ের মাসে জনগণের রায় নৌকার পক্ষেই থাকবে। এদিকে দেশের রাজনীতিতে অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপিও বসে নেই। এই আসনে তাদের দুজন প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. ইনাম আহমদ চৌধুরী এবং বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। শেষ পর্যন্ত কে বিএনপির প্রার্থী থাকবেন তা এখনই বলা মুশকিল। তবে ভোটের মাঠে দুজনই সক্রিয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় নেতাকর্মীরা দুই নেতা নিয়ে বিভক্ত। প্রকাশ্য না হলেও ভেতরে ভেতরে কোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। যদিও নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন উভয় নেতা। নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করেছেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। আর ড. ইনাম চৌধুরী কারাবন্দি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছেন। গতকাল শনিবার কারাবন্দি নেতাকর্মীদের দেখতে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারেও যান তিনি। কর্মীদের আস্থা অর্জনে দুজনেই সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা। সিলেট বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের শীর্ষ অনেক নেতাই এখন কারাগারে। গতকাল সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি নেতাকর্মীদের দেখতে এসে ড. ইনাম বলেন, আওয়ামী লীগ যখন নির্বাচনী উৎসব করছে তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা জেলে। যারা বাইরে আছেন তারাও ঘরে থাকতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি দ্রæত বন্ধ হওয়া উচিত। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে ২০১৪ সালের পাতানো নির্বাচনের মতোই এ নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর এমনটি হলে সকল উদ্ভ‚ত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই খেসারত দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ড. ইনাম আরো বলেন, একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য সরকারকে স্বৈরাচারী মনোভাব ত্যাগ করা উচিত। না হয় ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রাপ্ত নেতা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন উৎসবের হলেও আমাদের জন্য এটা এখন আর উৎসব নয়। আমরা এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, আমাদের দলের চেয়ারপারসন কারাগারে, নেতাকর্মীরা কারাগারে। যারা কারাগারের বাইরে আছেন তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গায়েবি মামলা আর পুলিশি হয়রানিতে। এভাবে নির্বাচন হয় না। ইসি একাধিকবার প্রতিশ্রæতি দিলেও আদতে কোনো ফল নেই। নেতাকর্মীদের কোন্দলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মাঝে কোনো বিভক্তি নেই। আমাদের নেতাকর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ। বিএনপির মতো একটি বড় দলে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকা স্বাভাবিক। একই আসনে দুই-তিনজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মূলত সরকারের বৈরী আচরণের কারণে। আমাদের প্রার্থীরাও গ্রেপ্তার হচ্ছেন, গুম হচ্ছেন। একক প্রার্থী হলেও হয়ত সরকার সেক্ষেত্রে মনোনয়ন জমা প্রদানে বাধার সৃষ্টি করে আমাদের নির্বাচনের বাইরে রেখে দিত। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপির দুই নেতাই। তাদের ভাষ্যমতে, এটা ব্যক্তির নয় দেশের জন্য নির্বাচন। আর জনসমর্থন তাদের দিকেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App