×

মুক্তচিন্তা

প্রতিবন্ধী শিশুদের অবজ্ঞা নয় সহযোগিতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:২৮ পিএম

শিশু যখন সুস্থ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে তখন মা-বাবার আনন্দের সীমা থাকে না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই সুস্থ শিশুর পাশাপাশি অসুস্থ শিশুর জন্ম হয়। যা কোনো মা-বাবাই প্রত্যাশা করেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো শিশু কানে শুনতে পায় না অথবা কথা বলতে পারে না। শিশু যখন আস্তে আস্তে বড় হয়ে ওঠে তখন তার এই প্রতিবন্ধকতা চোখে পড়ে। তখন মা-বাবার এবং পরিবারের সদস্যদের মন খারাপ হয়ে যায়।

আজো গ্রামাঞ্চলে এর জন্য মায়ের ওপর দোষারোপ করতে দেখা যায়। নানাবিধ সংস্কারকে এর জন্য দায়ী করা হয়। অনেক কুসংস্কারের মতো আমরা এই কুসংস্কার বিশ্বাস করি যে এর জন্য হয়তো মা দায়ী। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে যে একটি শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ার জন্য সেই মা-বাবা দায়ী থাকেন না। বৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে একটি শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিতে পারে।

কিন্তু এই ত্রুটির বিষয়টি সবাইকে বোঝানো সম্ভব নয়। আবার কোনো অসুস্থতার জন্যও কোনো শিশু কথা বলা বা শোনার ক্ষমতা হারানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আবার দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। মাঝে মাঝে এসব প্রতিবন্ধী শিশুকে ভণ্ড পীর ফকিরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সেই শিশুটি আরো কষ্ট পায়। অনেক প্রতিবন্ধী শিশু আছে যাদের জন্মের পরপরই যদি সুচিকিৎসা দেয়া যায় তাহলে ধীরে ধীরে তারা সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সেই চিকিৎসা করানো হয় না। প্রতিবন্ধী হয়েই তারা বেড়ে ওঠে। প্রতিবন্ধী শিশুরা আজো আমাদের সমাজে স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেড়ে ওঠে না। তারা বিভিন্নজনের কাছ থেকে অবহেলা ও অবজ্ঞার শিকার হয়।

১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ডিসেম্বরের ৩ তারিখে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়ে আসছে। মূলত দিবসটি শারীরিকভাবে যারা অসম্পূর্ণ তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও তাদের কাজের মূল্যায়ন করতেই দিবসটি পালিত হয়। প্রতিবন্ধী শিশুরা আর দশটা সুস্থ শিশুর মতোই শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক কার্যক্রম বা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ খুবই কম। তাদের মেধার স্ফুরণ ঘটানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এখনো গড়ে ওঠেনি।

প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। প্রতিটি গ্রামেই খুঁজলে প্রতিবন্ধী শিশু পাওয়া যাবে। যে পরিবারে কোনো শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয় অথবা কোনো দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী হয়ে জীবনযাপন করে সেই পরিবারের মানুষই জানে কি দুঃসহ যন্ত্রণা। তাই তাদের জন্য একটু ভালোবাসা, একটু সহযোগিতা তাদের জীবনকে সুন্দর করতে পারে। তাদের মেধাকে বিকশিত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে আমাদের। প্রতিবন্ধী শিশু যেসব পরিবারে আছে তাদের সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। সে তার মেধা দিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারবে সে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য নেয়া কার্যক্রম দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধীরাও সুবিধা পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রত্যন্ত গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধী শিশুরা অনেক সময়ই এসব সুযোগ-সুবিধা পায় না কেবল পরিবারের সচেতনতার অভাবে।

সাংবাদিক ও লেখক, পাবনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App