×

জাতীয়

চাপে বিএনপি জোট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩২ এএম

চাপে বিএনপি জোট
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের আবদার দেড়শ আসন। এর বাইরে ড. কামালের নেতৃত্বে বিএনপিসহ ছোট ছোট দলের সমন্বয়ে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যাশা ১০০ আসন। জোট ও ঐক্যফ্রন্টের এমন চাওয়ার তালিকা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি। পুরো ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করলেও আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এবার সংখ্যার ভিত্তিতে ৯ প্রার্থীর যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতেই নিষ্পত্তি করতে চায় দলটি। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর জয়ের মোটামুটি নিশ্চিত সম্ভাবনাকে ভিত্তি ধরেই আসন বণ্টন হবে। সেই হিসাব মতে ঐক্যফ্রন্ট ও ২৩ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের সর্বোচ্চ ৮০টি আসনে ছাড় দিতে চায় বিএনপি। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, বিএনপির কাছ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক আসন বাগিয়ে নিতে পর্দার আড়ালে দরকষাকষি চলছে শরিক দলগুলো। শরিকরা তাদের পছন্দের ভিত্তিতে তালিকাও দিয়েছে বিএনপিকে। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী ৫০টি আসন চায়। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়া এ দলটি ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করতে আগ্রহী, যা বিএনপিকে বাড়তি চাপে ফেললেও তাদের জন্য ২০টি আসন ছাড় দেয়ার কথা ভাবছে দলটি। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও খেলাফত মজলিশ তালিকা দিয়েছে ৩০টি আসনের। এ ক্ষেত্রে এলডিপিকে ১০টি ও খেলাফত মজলিসকে ৫ আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে। জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চায় ১৬ আসন। আর কল্যাণ পার্টি ১২, বিজেপি ৩, জমিয়ত ও লেবার পার্টি চায় ৬টি করে আসন। তবে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর দল বিজেপিকে ২টি, ইসলামী ঐক্যজোটকে ২টি, খেলাফত মজলিসকে ২টি, জাতীয় পার্টিকে (জাফর) ২টি ও অন্যান্য শরিক দলগুলোকে ৮টি আসন ছাড়তে প্রস্তুত বিএনপি। এদিকে ঐক্যফ্রন্টের গণফোরাম চায় ২৫টি, জেএসডি ১৫টি ও নাগরিক ঐক্য ৩০টি আসন। এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরামকে ১০টি, আ স ম রবের জেএসডিকে ৬টি, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগকে ৩টি, মাহমুদুর রহমান মান্নান দল নাগরিক ঐক্যকে ১টি। ঐক্যফ্রন্টের কাকে কয়টি আসন দেয়া হবে এ বিষয়ে এখানো চ‚ড়ান্ত কোনো আলোচনা না হলেও সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের দলকে ১০টি করে আসন দেয়া হতে পারে জানা গেছে। আসন চ‚ড়ান্ত করতে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দুয়েক দিনের মধ্যেই বৈঠকে বসবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান। এই তিন নেতার সঙ্গে রয়েছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডির সভাপতি আ স ম রব ও নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। জোটের পক্ষ থেকে তালিকা নিয়ে গত ১৫ নভেম্বর দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র নেতারা। সেখানে কতটি আসন জোট শরিকদের ছাড় দেয়া যায় তা নিয়ে সিনিয়র নেতাদের আলাদা মতামত জানতে চান মির্জা ফখরুল। বেশির ভাগ নেতাই জোট এবং ঐক্যফ্রন্ট মিলে ৮০টি আসনে ছাড় দেয়ার পক্ষে মত দেন। ৮০টি আসন ছাড়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু জোট ও ফ্রন্টের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। তারা তাদের পছন্দ মতো তালিকা দিয়েছেন, শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে বসব। তবে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না আশা করছি। তিনি বলেন, বিএনপি কতটা ছাড়বে বা তারা কতটা চায় এটি কোনো ভিত্তি নয়। ভিত্তি হবে প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু। ২০ দলীয় জোট সূত্রে জানা যায়, জোটের শরিকরা দেড়শ আসন চেয়েও খুশি নয়। তাদের অভিযোগ, বিএনপি তাদের চেয়ে ঐক্যফ্রন্টের দিকে বেশি মনোযোগী। জোটের নেতারা জানান, গত ১০ বছর সরকারি দলের পক্ষ থেকে নানা প্রলোভন এমনকি ভয়ভীতিও তাদের এতটুকু টলাতে পারেনি। নানা প্রতিক‚ল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই তারা জোটের প্রতি নিবেদিত ছিলেন। এর মধ্যে মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যা ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ক্ষেত্রে হয়নি। অথচ আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে আমাদের সমান ভাগই তাদের দেয়া হবে শোনা যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে জোটের শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাকেই দল মূল্যায়ন করবে বলে প্রত্যাশা তাদের। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ বলেন, হাস্যকর কোনো দরকষাকষি বিএনপির সঙ্গে করা যাবে না। শুধু জয়ের সম্ভাবনা আছে এমন প্রার্থীদের নিয়েই দরকষাকষি করা হবে। যার যেখানে উপযুক্ত প্রার্থী আছে এবং অতীতে ওই সব আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিল তাদের প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে আসন বণ্টন প্রশ্নে বিএনপিকেও শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তারা যেন জোট ও ফ্রন্টের মধ্যে কোনো বিশেষ পার্থক্য না করে। সূত্র জানায়, দুই জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে মোটেও খুশি নন বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা চান জোট নয়; দলীয় প্রার্র্থীরাই যেন মনোনয়ন পান। কারণ সাধারণ ভোটারদের কাছে দলীয় প্রার্থীদের কদর অনেক বেশি। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনটি ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার জন্য ছেড়ে দেবে বিএনপি। সেখানে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। এমনকি দুই সাবেক এমপি বিএনপির হাফিজুর রহমান ও জামায়াতের মাওলানা শাহাদাতুজ্জামানও ওই আসনে প্রার্থী হতে মরিয়া। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। এ ছাড়া ঢাকা-২ ও ৩ আসনের একটি থেকে লড়তে চান গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। সেখাকার পুরনো প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমানউল্লাহ আমান। মোস্তফা মহসিন মন্টুর প্রার্র্থিতার খবরে দুনেতাই ক্ষেপেছেন। এ ছাড়া মৌলভীবাজার-২ আসনে ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ভোটে লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে মনোনয়ন চাচ্ছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। লক্ষীপুর-৪ আসনের পাশাপাশি ঢাকায় একটি আসনে লড়তে পারেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তার দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন কুমিল্লা-৪ থেকে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন প্রত্যাশী। নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম লড়তে চান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে। টাঙ্গাইল-৮ আসনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী লড়তে পারেন। এসব আসনে ঐক্যফ্রন্ট নয় বিএনপির প্রার্থী চান তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App