×

মুক্তচিন্তা

জাতীয় নির্বাচন ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৬ পিএম

স্বভাবতই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে এলেই ভয়-আতঙ্কে ভুগতে থাকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এ ভয়ভীতি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মোটেই ভিত্তিহীন নয়। বরং সময়োচিত বাস্তব ঘটনা। এমন ঘটনা থেকে উত্তরণে গত শনিবার নাগরিক সমাজ আয়োজিত রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় নির্বাচন : সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি কিছু দাবি তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, তার জন্য দেশত্যাগ কোনো সমাধান নয়। সংখ্যালঘুদের দেশে থেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকার আদায় করতে হবে। প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে। একইভাবে যে ব্যক্তিরা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে, আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দল থেকে তাদের মনোনয়ন বাতিল করতে হবে। মনোনয়ন পেলেও ভোটে এসব ব্যক্তিকে বয়কট করতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় উপরোক্ত বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনা উচিত বলে মনে করছি। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু সস্প্রদায়ের ওপর হামলা ও আক্রমণের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনাই সংঘটিত হয়েছে নির্বাচনকালীন, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে। এ পরিস্থিতির প্রভাব দেখা গেছে নব্বইয়ের দশক থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে; এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পর্যায়ে। ১৯৯০-এর অক্টোবরে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়, উদ্দেশ্য দেশের গণআন্দোলন স্থবির করা; ২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার শিকার হয় এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তখন পূর্ণিমা-সীমাদের আহাজারি কেউ শোনার বাকি ছিল না। অতঃপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পরবর্তী হামলার ঘটনাও সুবিদিত। যশোরের অভয়নগরের মালোপাড়ার সে ঘৃণ্য ঘটনাই কালের সাক্ষী! এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ নির্যাতন যেন নিত্যঘটনা। শাসকশ্রেণি কী জবাব দেবেন এ সহিংসতার? যেমন প্রশাসন, তেমন সমাজ- কারো জবাবদিহির মতো মুখ নেই। সাম্প্রতিক সংঘটিত হয় ব্রাক্ষণবাড়িয়া, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় সহিংসতা। এমনকি জবাব মিলবে না রামু, উখিয়া, কক্সবাজারে বৌদ্ধ ও হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনারও। এগুলোর শাস্তি বিধান কি হয়েছে? ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন হয়তো কোথাও কোথাও হয়েছে; কিন্তু অপরাধীর বিচার ও শাস্তি কতটা হয়েছে? এই অনাচারের যথোচিত শাস্তি না হওয়ার কারণে এ প্রবণতা সমাজে বেড়ে চলেছে। নির্বাচনের আগে-পরে যেন দানবীয় কায়দায় রূপ নেয় নির্যাতন। এমতাবস্থায় নিরাপত্তার অভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এই দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এই দেশের কোনো সংখ্যালঘুই স্বেচ্ছায় তাদের মাতৃভূমি ছাড়তে চায় না। তারপরও কেন তারা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে? পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর গড়ে ০.৫ শতাংশ হারে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু সস্প্রদায়ের আর কোনো লোক থাকবে না। গোলটেবিল বৈঠকে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি গঠনসহ মোট ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো সর্বোচ্চ মহলেই গুরুত্ব দিতে হবে। দেড় কোটি সংখ্যালঘু বিপন্ন মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব। এই বিষয়টি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App