×

মুক্তচিন্তা

শুধু আইন প্রণয়ন নয় কার্যকরও জরুরি

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:১৮ পিএম

ওষুধ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন করে ওষুধ আইন-২০১৮ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন আইনে লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি ওষুধ উৎপাদন, আমদানি, বিতরণ, মজুদকরণ, প্রর্দশন ও বিক্রয় করতে পারবে না। এ ছাড়া এই বিধান লঙ্ঘনে কঠোর বিধান রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ আইনটি চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ের ভ্যাটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয় সরকার। এর দুই বছর পরে ওষুধ আইন ২০১৮-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন হচ্ছে। দেশে দেদার তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে নকল-ভেজাল ওষুধ। আর প্রতারিত ও বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। এমনই অবস্থায় ওষুধে ভেজাল প্রতিরোধে নতুন আইন প্রণয়ন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চূড়ান্ত খসড়ায় বলা আছে, চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে অনিবন্ধিত কোন কোন কোম্পানির ওষুধ লিখতে পারবেন না। ‘ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি)’ ওষুধ ছাড়া রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতিরেকে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধসহ বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। এমনকি ব্যবস্থাপত্র ছাড়া খুচরা কোনো ওষুধও বিক্রি করা যাবে না। যিনি এই বিধান উপেক্ষা করবেন তার সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে। এ ছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ভেজাল ওষুধ তৈরি করেন তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সরকার ওষুধ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করবে। ওই মূল্য তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ওষুধ প্রশাসনের তথ্য মতে, দেশে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ কারখানার সংখ্যা ২৮১টি, ইউনানির ২৬৬টি, আয়ুর্বেদিক ২০৭টি, হোমিওপ্যাথিক ৭৯টি ও হারবাল ৩২টি। এসব কারখানায় মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালানো হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। বাংলাদেশের ওষুধের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরির অন্যতম আখড়াও হচ্ছে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা এবং এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভেজাল ওষুধ ছড়াচ্ছে। এরপরও এখানে ওষুধ টেস্টিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর নকল-ভেজাল ওষুধ বিক্রেতাদের সংঘবদ্ধ দৌরাত্ম্যের কাছে প্রশাসনও যেন অসহায়। মিটফোর্ড এলাকায় গিয়ে মোবাইল কোর্টেরও হেনস্থা হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লোকজন এই নকল-ভেজাল ওষুধ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। মানহীন ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। এই খাতে দুর্নীতি, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত অসমর্থতা, দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ভেজাল ওষুধ বাজারজাত রোধ করতে না পারার প্রধান কারণ। অন্যদিকে আইনে এ সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি কম হওয়াও বড় কারণ। ওষুধের কারখানা ও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করা, নতুন আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদক-বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। এই চক্র যত ক্ষমতাবানই হোক তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App